বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

দরূদ সালাম ও রাসুলপ্রেম

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আমার প্রতি সালাতের হক আদায় করতে পারো না। তাই, আল্লার্হ কাছে দোয়া চাও যেন তিনি আমার প্রতি দরূদ পাঠান।”
আজকে এ শেষ জামানায় এসে-দরূদ পাঠ সুন্নত-না-ওয়াজিব না-ফরজ এ নিয়ে সময় নষ্ট না করে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি না করে-প্রেম ও ভক্তির সাথে এটাকে গ্রহণ করি। কারণ আল্লাহ চাহেত হযরত ইমাম মাহ্দীর (আঃ) প্রকাশ আসন্ন। তাই, তাঁরে খুুঁজি-নিজ ঈমানকে দৃঢ় করি মুক্তির পথ ধরি।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহতা’আলা তাকে দশটি রহমত দান করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেন, ও দশটি সম্মান (মর্তবা) বাড়িয়ে দেন।” (আহমদ, নাসাঈ, সাগীর)
প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি নামাজ পড়লো, কিন্তু আমার প্রতি বা আমার আহলে বয়েতের প্রতি দরূদ পাঠ করলো না; তার নামাজ কবুল হয় না।” হযরত আবদুল্লাহ এব্নে মাস্উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ আল্লাহ পাকের কিছু ফেরেশ্তা আছে যারা দুনিয়াতে চলাফেরা করে আর আমার উম্মতের তরফ থেকে আমাকে “সালাম” পৌঁছায়।
দরূদ শরীফের বিখ্যাত কিতাব ঃ “দালায়েলুল-খায়রাতে” বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ “যদি কোন ব্যক্তি কঠিন সমস্যায় সম্মুখীন হয়, তবে সে ব্যক্তি যেন আমার প্রতি বেশী করে দরূদ পাঠ করে। কেননা দরূদের ওছিলায় চিন্তা ভাবনাও দুঃখ-দুর্দশা দূর হয় এবং রিযিক বৃদ্ধি পায় এবং প্রয়োজন পুরা হয়।”
উক্ত কিতাবে আছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন ঃ ‘প্রেমিকদের দরূদ আমি শুনতে পাই এবং জবাব ও দিয়ে থাকি।’
হাদীসে দরূদ পাঠের প্রতিদান ভিন্ন ধরনের বর্ণিত আছে। তা বাস্তবে পাঠকারীর ইখলাছ; প্রেম; ঈমান ও পরহেজগারী এবং নিয়তের উপর নির্ভরশীল। রাসূল (সাঃ) এর মন ও মানসিকতার ওপর “মোহাম্মদী” আর ‘ইব্রাহিমী’ বিষয় সর্বদা তাঁকে প্রভাবিত করতো। “মোহাম্মদী” উনার নিজ ইচ্ছ্বা, আর ইব্রাহিমী হল উনার প্রতি তাঁর প্রভুর নির্দেশ। তাই, কখনও কখনও তাঁর নিজ সত্তার প্রাধান্য হ’লে তখন ইব্রাহিমী দরূদ গুরুত্ব পেত না বা কম পেত। যেমন ঃ মদীনাকে তাঁর দোয়াতে দ্বিগুন প্রাধান্য দিয়েছেন-মক্কাপেক্ষা, ভালবেসেছেন মদীনাকে মক্কাপেক্ষা। শুক্রবারের সাথে সোমবারকে এনেছেন। আর একটা জটিল বিষয় প্রেমময় আল্লাহ নিজেও তাঁর হাবীবের প্রেমে এক এক সময় এক এক রকম প্রেমবচন বা সালাত (দরূদ) এর গুরুত্ব ও মহাত্ব প্রকাশ করেছেন।
দরূদ শরীফ হচ্ছে আল্লাহর মারিফাত যা আল্লাহর জাতি সত্ত্বা ও সেফাতি সত্ত্বার সম্মিলিত প্রেম বচন। যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয় মোহাম্মদ প্রেম ও এ প্রেমের মাধ্যমে আদম জাতির উপর ভালাবাসায়। সমগ্র সৃষ্টির উপর এ নূর এর আকর্ষণ এর উপর। যা আল্লাহ ও তাঁর সমগ্র সৃষ্টি বিশেষ সময়ে ও দিনে ও তারিখে পড়ে থাকেন। এটা বেশী হয় পবিত্র ১২-ই-রবিউল আউয়াল; সোমবার ও বিশেষ রহমতের ওয়াক্তে। প্রেমিক সূফী সাধক হযরত শাহ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ) বলতেন; “আজ পবিত্র ১২-ই রবিউল আউয়াল সমগ্র সৃষ্টি রাসূল (সাঃ) এর ওপর দরূদ ও সালাম পাঠ করছে।”
হাদীস শরীফে আছে, “তোমরা সোমবার ও শুক্রবার আমার উপর বেশী করে দরূদ পাঠ কর। কেননা আমি তোমাদের দরূদ সরাসরি শুনতে পাই।” (দ্রঃ আনিসুল জালিছ)
নবী (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হয়-হে নবী! যারা অনুপস্থিত এবং যারা আপনার পরে পৃথিবীতে আসবে তাদের পঠিত দরূদ আপনার কাছে কি ভাবে পৌঁছাবে? নবী (সাঃ) জবাবে বলেন, যারা আমার আশিক তাদের দরূদ আমি নিজ কানে সরাসরি শুনি ও তাদেরকে চিনি। আর অন্যদের দরূদ আমার নিকট ফেরেস্তা মারফত পৌঁছান হয়। (দ্রঃ দালাইলুল খায়রাত)
আবু নাঈম, হিলইয়া নাম কিতাবে - ‘ওয়াযাহহাব-ইব্নে মুনাব্বিহ’ হতে বর্ণনা করেছেন যে; বনি ইসরাইল কাওমের এক ব্যক্তি দুইশত বছর পর্যন্ত আল্লাহর আদেশ অমান্য করে চলার পর তার মৃত্যু হ’ল। লোকেরা তার লাশ একটা আবর্জনার স্তুপের মধ্যে ফেলে দিল। এতে আল্লাহপাক, নবী হযরত মূসার (আঃ) উপর ওহী পাঠালেন যে; হে মূসা! লোকটার লাশ সে স্থান হতে বের করে নিয়ে তার জানাযার নামাজ পড়। মূসা বললেন, হে মাবুদ! লোকজন বলছে যে, সে দুইশত বছর ধরে আপনার আদেশ অমান্য করেছে। আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, বাস্তবিকই তাই করেছে। কিন্তু সে তাওরাত খুলে পড়তে গিয়ে “মোহাম্মদের’ নামের উপর তার নজর পড়ামাত্র সে চুমা খেত এবং নামটির দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে তার উপর দরূদ পাঠ করতো। আমি তার এই আমল কবুল করে, তার পাপ ক্ষমা করেছি এবং তার সাথে বিবাহের জন্য সত্তর জন হুর নির্বাচন করে রেখেছি।” (দ্রঃ খাছায়িছুল কুবরা ১ম সংস্করণ-পৃ-৩৫ ও ফয়যানে দরূদ ও সালাম)
মূলতঃ দরূদ শরীফ পাঠ ভালবাসার বিষয়। প্রেম-ভালবাসা রূহানী ও পবিত্র। আর সুন্দরকে কেনা ভালবাসে। সে ভালবাসার সূত্রপাত-আল্লাহ (আহাদ) কর্তৃক আহমদ বা মোহাম্মদ (সাঃ) কে। আর আহ্মদ বা মোহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক আহাদ বা পরমাত্মা প্রভু আল্লাহকে।
এ আধ্যাত্মিক প্রেম উর্দ্ধালোকে সমগ্র সৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়লো। আল্লাহর ইচ্ছায় তা নেমে এলো মর্তলোকে আদম এর মাধ্যমে। কাম আর নিষ্কাম বা রূহানী ভাবে। শুরু হলো নফস্ আর পবিত্র আত্মার রূহানী যুদ্ধ। তাই, আদম (আঃ) কে বলা হয়েছিল পৃথিবী থেকে পবিত্র হয়ে আত্মার মুক্তির ব্যবস্থা করে আসতে। তাই সাধকদের সাধনা এটাই। তাদের ভালবাসা রূহানী বা নিস্কাম। মূলে আল্লাহ ও রাসূল প্রেম। দরূদ শরীফ হ’ল এর গলার মালা, আর হৃদয়ে প্রেমের জ্বালা। আল্লাহ ও এর বাইরে নন কারণ তিনিই তো এর সূচনাকারি। সালাত (নামাজ এর পর অর্থাৎ আল্লাহকে প্রভু বলে মেনে নিয়ে সেজদা ও তাঁর প্রশংসার পর এটাই বড় এবাদত। প্রেম কত জটিল, এ নামাজ ও পরিপূর্ণ হবে না দরূদ তথা রাসূল প্রেম ছাড়া। (চলবে)
লেখক : ইসলমী শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন