শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি দরুদ সালাম

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা ইমানের দাবী। এই দাবী পূরণ ছাড়া কেউ ইমানদার হতে পারে না। এমন কি সকল নবী আলাইহিমুস সালাম কে ভালোবাসাও ইমানের অন্তর্ভূক্ত। কোন নবীর উপরই বিরাগ হওয়া যাবে না। কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না। মানুষ যাকে ভালবাসে তাকে স্মরণ করা, তাকে সন্তুষ্ট করতে চাওয়া, সন্তুুষ্ট করার চেষ্টা করা মানুষের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল নবীগনের সর্দার। সারা জাহানের রহমত, তাঁকে দিয়ে নবুয়তের পূর্ণতা বা সমাপ্তি দান করা হয়েছে। খোদ আল্লাহ তায়ালা এবং ফেরেস্তাগন তাঁর উপর দরুদ পেশ করেন এবং মহান রব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর উপর ইমানদারগনকে দরুদ সালাম পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কে অনুসরণ করা যেমন ইমানের দাবী তেমনি তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের বিরাট একটি মাধ্যম হল দরুদ সালাম পেশ করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর উপর দরুদ সালাম পেশ করার সময় তার আবেগ অনুভুতি তার হালত এই সবের মধ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর উপর তার ভালোবাসার ধরন প্রকাশ পায়। এই দরুদ সালামের মধ্যে যেমন ভালোবাসা প্রকাশ পায় তেমনি ভাবে এই দরুদ সালামের মাধ্যমে বান্দা অনেক কল্যাণ, উপকারিতা ও মর্যাদা লাভ করে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা আহযাবের ৫৬ আয়াতে বলেন, নিঃসন্দেহ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর উপরে সালাত পেশ করেন। ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দরুদ) পেশ করো এবং সশ্রদ্ধভাবে সালাম জানাও। এই আয়াতের উদ্দেশ্য হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান, মান মর্যাদা নিয়ে মহান আল্লাহ ফেরেস্তাগনের সামনে আলোচনা করেন, প্রশংসা করেন। ফেরেস্তাগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো অনুগ্রহ করার জন্য মহান রবের নিকট নিবেদন পেশ করতে থাকেন। এই ভাবে ঊর্ধ্ব জগতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামক কে নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তারপর আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে অবস্থান কারী ইমানদারগনকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত, সালাম পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই ভাবে ঊর্ধ্ব জগত ও অধঃ জগতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান নিয়ে আলোচনায় একাকার হয়ে যায়। সকলের তরফ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত, সালাম পেশ হতে থাকে।
এই দরুদ সালাম বন্ধুর প্রতি বন্ধুর এক নিবিড় ভালোবাসার বিরাট প্রকাশ। সারা সৃষ্টি জগতে নিজের নাম জিকির হতে থাকুক। মানুষেরা তাঁর প্রতিটি নির্দেশ মেনে চলুক। সাথে সাথে বন্ধুকে অনুসরণ করে সকল কাজে আঞ্জাম দিক। এ যে মহান মাবুদের এক অনুপম ভালোবাসা। সাথে সাথে মানুষ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত সালাম পেশ করুক। তাঁর প্রতি অনুগ্রহ প্রাপ্তির দোয়ায় মশগুল থাকুক। বিনম্র ভাবে, শ্রদ্ধা, ভালোবাসার সাথে নবীর শানে সালাম পেশ করুক। এটা মাওলা চান এবং ভালোবাসেন।
দরুদ সালাম মহান রবের রহমত, বরকত, ভালোবাসায় ভরপুর। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন। আমিও তাঁহার অনুসরণ করলাম। চলতে চলতে তিনি একটি বাগানে প্রবেশ করলেন। তথায় তিনি সিজদাবনত হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে রইলেন। এমন কি ইহা দেখে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর আশংকা করলাম। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ বলেন, তাহার সঠিক অবস্থা জানার জন্য আমি তাহার কাছে আসলে তিনি মাথা উঠালেন। আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আব্দুর রহমান কি ব্যাপার! আমি তখন তাকে বিস্তারিত বললাম। তখন তিনি বললেন, জিবরাইল আঃ এসে আমাকে বললেন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমি কি আপনাকে সুসংবাদ দেব না? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আপনার উপর দরুদ পাঠ করে আমি তাহার উপর অনুগ্রহ করি আর যে ব্যক্তি আপনাকে সালাম পেশ করে আমিও তাকে সালাম দেই।
আনাস ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে আমার উপর একবার সালাত পেশ করবে, আল্লাহ তাকে দশটি রহমত দান করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তাকে দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। বায়হাকী। অন্য বর্ণনায় আছে তার জন্য দশটি মর্যাদা লিখে দিবেন।
যায়দ ইবনে হুবাব রাহ. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে বলবে, হে আল্লাহ মুহাম্মাাদের উপর রহমত নাযিল করুন এবং কিয়ামতের দিন আপনার নিকট নৈকট্যের মর্যাদা দান করুন। তখন তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উপর সর্বাধিক সালাত পেশকারী কিয়ামতের দিন আমার সব চাইতে নিকটবর্তী থাকবে। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি কোন কিতাবে আমার উপর দরুদ পাঠ করবে অর্থাৎ লিখবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কিতাবে আমার নাম থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেস্তাগন তার উপর ইস্তেগফার করতে থাকবে।
আমির ইবনে রাবিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর সালাত পেশ করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেস্তাগন তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকবে। অতএব বান্দা চাই দরুদ পাঠ কম করুক বা বেশী করুক।
আবু তালহা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তাঁকে খুব উৎফুল্ল ও আনন্দিত দেখতে পেলাম যা ইতিপূর্বে আর কখনও তাঁকে দেখিনি। আমি বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, উৎফুল্ল হতে আমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে অথচ এই মাত্র জিবরাইল চলে গেলেন। তিনি আমার রব আযযা ও জাল্লা শা’নুহুর পক্ষ থেকে সুখবর নিয়ে এসেছেন। যে আমাকে আল্লাহ আপনার নিকট আপনাকে এ সুখবর দেয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন যে, আপনার উম্মতের এমন কেউ নেই যে আপনার উপর এক বার দরুদ পাঠ করবে তো আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে দশটি রহমত দান করবেন এবং ফেরেস্তাগন তার জন্য দশবার মাগফিরাতের দোয়া করবে। ইবনে ওয়াহহাব রাহ. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমার উপর দশবার সালাম পেশ করবে যে যেন একজন ক্রীতদাসকে আযাদ করে দিল্। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরোও বলেন, কিয়ামতের ভয়ংকর অবস্থা ও স্থান সমূহ থেকে তোমাদের সব চাইতে বেশি মুক্তি দিতে পারে যারা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে।
ইবনে আবু ফুদাইক রাহ. বলেন, আমি যাদেরকে পেয়েছি তাদের একজনকে আমি বলতে শুনেছি যে আমার কাছে এই খবর পৌছেছে যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করবেরর পাশে দাঁড়িয়ে এ আয়াত” আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগন নবীর উপর সালাত পেশ করেন” তেলাওয়াতের পর বলে, হে মুহাম্মাাদ আপনার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করুন। যে ব্যক্তি এটা সত্তর বার পাঠ করবে তখন এক ফেরেস্তা তাকে উচ্চ স্বরে বলে হে অমুক। আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করেছেন এবং তার কোন আশা অপূর্ণ থাকবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুয়ার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন যে ব্যক্তি আমার উপর দরুদ পেশ করবে আমি কিয়ামাতের দিন তার জন্য সুপারিশ করব। তিনি আরো বলেন যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিনে এবং রাতে আমার উপর ১০০ বার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ১০০ টি হাজত পূরণ করবেন। ৭০ টি আখেরাতের আর ৩০ টি দুনিয়ার।
লেখক : শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন