কাজী মোরশেদ আলম
ইবলিশ অনেক অনেক ইবাদত করার পরও একটি আদেশ ঔদাসীন্য প্রদর্শন করে এবং অমান্য করার কারণে শয়তানে পরিণত হলো। এই পৃথিবীতে এবং আকাশে শয়তান প্রচুর ইবাদত-বন্দেগী করেছে। কিতাব থেকে জানা যায় এই ইবলিশ খুব ঘনিষ্ঠতার সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পৃথিবী ও আকাশে ইবাদত-বন্দেগীতে ছিলেন একনিষ্ঠ। সে শুধুই ইবাদত-বন্দেগী করেনি, জিনদেরও সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য ব্যাপক কাজ করেছে। এই পৃথিবীর একজন মানুষ যা ইবাদত-বন্দেগী করে অলি হতে পেরেছে তার চেয়ে অনেক অনেক এবাদত বন্দেগী করেছে ইবলিশ। ইবলিশ যে পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগী করেছে মানুষ কখনও সে পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগী করতে পারবে না। এতদসত্ত্বেও মানুষের ইবাদতের পরিমাণ শয়তানের ইবাদতের পরিমাণের চেয়েও অনেকগুণ বেশি। ইবলিশ অনেক অনেক বছর এবাদত বন্দেগী করার পরও বেহেশত লাভ করতে পারবে না। আর তা হলো আল্লাহতায়ালার একটি মাত্র আদেশ অমান্য করার কারণে। একটি মাত্র আদেশ অমান্য করার জন্য ইবলিশ আখ্যা পেয়েছে শয়তান হিসেবে। অত্যধিক অহংকার করেছিল মাটির তৈরি মানুষ হযরত আদম (আ.)-এর সাথে। ইবলিশ আগুনের তৈরি তাই সে মাটির মানুষের কাছে কোনো মতেই ছোট হবে না। এই অহংকারের কারণে ইবলিশ শয়তানে পরিণত হলো এবং পূর্বের সকল ইবাদত নষ্ট হয়ে গেল। যা হোক এই ইবলিশ এখন শয়তান। শয়তানে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ থেকে লাভ করল অনেক ক্ষমতা। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য অনেক শক্তি লাভ করল আল্লাহর থেকে। আর শয়তানের এ অনেক শক্তি মিসমার হয়ে যাবে যিনি আল্লাহর প্রেমে আসক্ত হয়ে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে। শয়তান প্রবল শক্তি খাটাবে মানুষের প্রতি যেন মানুষ ইবাদত-বন্দেগী করতে না পারে। যারা তার ধোঁকায় পড়বে তাদের উপরই শক্তি খাটাতে পারবে। আর যারা তার ধোঁকায় পড়বে না তাদের কাছে তার শক্তি নড়বড়ে। অর্থাৎ শয়তান মানুষকে দোযখে নিক্ষেপ করতে চাইবে। এই নিক্ষেপ করার কৌশলগত শক্তি দেয়া সত্ত্বেও সে সকল ক্ষেত্রে এই শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না। যারা নেককার তাদের কাছে এই শক্তি মিসমার হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে নবী পাঠিয়েছেন মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করার জন্য। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় যারা সত্য পথ থেকে বেরিয়ে যাবে তাদের অবস্থা হবে খুবই ভয়াবহ। আবার সত্য পথে থেকেও কখনও শয়তানের মন্ত্রে আবিষ্ট হবেন আবার কখনও ভালো কাজ করবেন। মন্দের চেয়ে ভালো পরিমাণ বেশি হলে মুক্তি পাবে। আর মন্দের ওজন বেশি হলে জান্নাত হারাবে। হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা অনেক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পর আর কোনো নবী আসবে না। তারা শয়তান থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর বাণী প্রচার করবেন। এতে যারা সত্য পথে আসবে তারা জান্নাতে যেতে পারবে আর যারা আসবে না তারা শয়তানের গমন ক্ষেত্র জাহান্নামে যাবে। শয়তান চায় মানুষ ইবাদত-বন্দেগী না করে পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে জাহান্নামে যাক। আল্লাহতায়ালা নবী-রাসূল পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়েতের মাধ্যমে সৎ পথে পরিচালিত করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যারা নবী ও রাসূলের আদেশ নিষেধ মানবে না, শয়তানের পথে পরিচালিত হবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে ইবলিশ যে পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগী করেছেন তার চেয়ে কোনোমতেই মানুষ ইবাদত-বন্দেগী করতে পারবো না, এতদসত্ত্বেও ইবলিশ শয়তানে পরিণত হলেন আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য। ইবলিশের ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর কাছে কোনো মূল্যই রইল না শুধুমাত্র একটি কারণে। আর এই কারণটি হচ্ছে আল্লাহ ইবলিশকে আদেশ করেছিলেন হযরত আদম (আ.)কে সেজদা করার জন্য। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন