বরেন্দ্র অঞ্চলের (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ) মাঠে মাঠে এখন পাকা সোনালী আমনের নজরকাড়া দুলনী। মাঠের পর মাঠজুড়ে সোনালী শিষে ভরা আমনের ক্ষেত। করোনা বিপর্যয়, বন্যা, অতিবর্ষণের ধকল কাটিয়ে ঘাম ঝরা ফসল ঘরে তোলার সোনালী স্বপ্ন কৃষকের চোখে। কোথাও কোথাও দেখা যায় শীতের সোনামাখা রোদ্র গায়ে মেখে আমন কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের ব্যস্ততা। মাঠ ভরা ধান দেখে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে ৮ শতাংশ রোপা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আমন ধান কাটা শেষ হবে।
কৃষকরা বলছেন, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ধানের আবাদে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে। শঙ্কাও কম ছিলো না। এখন তাদের অনেকেরই ধান পরিপক্ক হয়েছে। তারা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শেষ পর্যন্ত ফলন কিছুটা কমলেও দাম ভালো থাকায় খুশি তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ হেক্টর। আর ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৪৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে নওগাঁ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হাজার ১১৫ মেট্রিক টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন ভালো হবে।
মাঠ পর্যায়ে ঘোরার সময় রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিম জানান, বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এ বছর বেশি জমিতে আমনের চাষ করেছেন। বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পরেই আমন ধান চাষ করা হয়েছে। ফলে জমি পতিত থাকেনি। তবে দুর্যোগের কারণে দেড় বিঘা মতো জমিতে ধান লাগাতে বিলম্ব হয়েছিলো তার। এবার ফলন ভালোই হয়েছে। আর দাম ভালো থাকায় লাভ হবে এমন প্রত্যাশা তার।
কৃষক আব্দুল হাই জানান, প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই এবার আমনের চাষ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন তিনি। এখন ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে গত বছরের মতো ফলন তেমন ভালো হয়নি। বিঘা প্রতি ফলন ১০ থেকে ১২ মণ হতে পারে। তবে ফলন কম হলেও দাম ভালো থাকায় পুষিয়ে যাবে। আর সামনে যদি দাম কমে যায় তাহলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, রাজশাহীতে রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। এর মধ্যে ৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার ফলন খারাপ হয়নি। এখন পর্যন্ত যে ধান কাটা হয়েছে সেখানে ১০ থেকে ১৫ মণ করে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এবার ধানের দামও ভালো আছে। ধানের ফলন ও দামে কৃষকরা খুশি। যেসব জমির ধান বন্যার পানি নামতে দেরি হয়েছে সে জমিতে আগাম জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছিলো। সব মিলিয়ে এবার ডিসেম্বরের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হবে। আর এ বছর বিভিন্ন দুর্যোগ বিবেচনায় কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন।
কৃষকরা বলছেন, এবার আলুর দাম ভালো পাওয়ায় ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে চাষীরা আলু চাষের জন্য আগাম ধান কেটে আলু লাগানো শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে দেখা দিয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কট। ধান কাটা শেষ হলেই আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করা হবে। তাই দ্রæত ধান কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় শ্রমিকদের মজুুরি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক ধান কাটা পর আলু রোপনের জন্য জমি তৈরি শুরু করতে পারেন নি। বিভিন্ন এলাকায় থেকে নিয়মিতভাবে আসা শ্রমিকদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং তাদের আসার অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা এই সময়ে আসেন আলু রোপনের জন্য। এদিকে গেরস্ত বাড়ির আঙ্গিনা আর মাঠের খৈলান প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ধান মাড়াইয়ের জন্য। কৃষানীরা উৎসবের আমেজ নিয়েই ব্যস্ত। নতুন চাল দিয়েই হবে পিঠা পায়েসের স্বাদ নেয়া। ধান বেচেই মিলবে জামা, কাপড়সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ। করোনা আর বিরুপ আবহাওয়ার ক্ষতিও খানিকটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন