চরম বৈরী আবাহাওয়া, সার-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। চাষাবাদে বাড়তি খরচ তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, একই সাথে চলতি আমন চাষেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির অভাবে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া এসব সঙ্কটের কারণে খাদ্য উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। তারা বলছেন, এবার এক অদ্ভূতুরে বর্ষা দেখেছে বাংলাদেশ। গত ৪১ বছরের মধ্যে এবারের বর্ষায় সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষির যে চিরায়ত প্রক্রিয়া তার বিচ্যুতি ঘটতে পারে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষিখাতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বোরো মৌসুমে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পর কৃষক এবার ভরা বর্ষায়ও খরার কবলে পড়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং এবং সার-ডিজেলসহ নানা কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা। সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক নিজেই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আমন নিয়ে বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আশঙ্কার কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেশি। গ্রামগঞ্জে বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সেচ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকায় বন্যার কারণে দেরিতে লাগানো আমনের ক্ষেত এখন সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আবার অনেক এলাকায় বৃষ্টির অভাবে কৃষক জমিতে এখনো চারাই রোপন করতে পারেনি। আগস্টের মধ্যে রোপন করতে না পারলে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে। আগামী ১৫ দিন আমনের সেচের কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে রাতে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি এ নির্দেশনা বিদ্যুৎ বিভাগ পালন করবে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সংবাদদাতাদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কৃষিমন্ত্রীর এই আশার প্রতিফলন গ্রামে এখনো দেখা যাচ্ছে না। গ্রামের গ্রহকরা এখনো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে মাত্র ৭/৮ঘণ্টা বিদ্যুত পাচ্ছে।
দেশে আমনের ফলন প্রধানত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। এ বছর অনেক কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমনের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কম বৃষ্টির কারণে কৃষককে অতিরিক্ত পানি সেচ দিতে হচ্ছে। সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাষে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সার-ডিজেলের বর্তমান দর বহাল থাকলে এবং এমন লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে আসন্ন বোরো মৌসুমেও ধানের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়তে পারে আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ নাগাদ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ৬৮ শতাংশের কিছু বেশি জমিতে আমন রোপণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হিসাবে অনেক সময় সঠিক তথ্য উঠে আসে না। প্রকৃতপক্ষে এ পর্যন্ত আমন আবাদের হার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের বেশি নয়। জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আমন মৌসুম। আমন ধানের চারা রোপণের সময় মধ্য জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এবার আমনের আবাদ এক মাসেরও বেশি সময় দেরি হয়ে গেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ বয়ে গেলেও বৃষ্টি না হওয়ায় বহু কৃষক ধান রোপণ করতে পারেননি। অনেকের বীজতলা শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। আমন ধান পাকতে দেরি হলে পিছিয়ে যাবে আলু, সয়াবিন, সরিষাসহ রবিশস্য। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হলেও ক্ষতি এড়ানো যাবে না। ধান ও রবিশস্যের চক্র ব্যাহত হলে গ্রামীণ অর্থনীতিই বেসামাল হয়ে পড়তে পারে।
গত বছর সারা দেশে ৫৬ লাখ ২১ হাজার ৯৪৯ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছিল। উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭২ টন। চলতি বছর ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৫৪ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অনাবৃষ্টি এবং সার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হতে পারে। এতে উৎপাদন ঘাটতি হতে পারে ৫০ লাখ টনেরও বেশি। অর্থাৎ প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। আর এই ঘটতি পূরণ করতে সরকারকে চাল আমদানি করতে হবে। বর্তমানে ডলারের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে চাল আমদানিতে সরকারকে কম পক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যায় করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। ফলে চাল আমদানি সম্ভব হবে কি-না সেটাও ভাবনায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে গত বছর চালের ঘাটতি ছিল প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার টন। প্রতিকূল পরিস্থিতি, বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব, প্রতিকূল আবহাওয়া, উৎপাদন উপকরণের সঙ্কটসহ নানা ধরনের বিপর্যয় বিবেচনায় নিলে চলতি অর্থ বছরে সেটা ৮ লাখ টনের বেশি হবে। তাছাড়া ২০৩০ সালে চালের ঘাটতি হবে ৩৬ লাখ ২০ হাজার টন। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতি বা বিপর্যয়ে না পড়লে চালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন হতে পারে দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর গত জুলাইয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টন হবে। অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন ১২ লাখ টন কমতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করর্পোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪১৩টি সেচযন্ত্র ছিল। এর মধ্যে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৭টি সেচযন্ত্র চলেছে ডিজেলে। অর্থাৎ ডিজেলে চলে প্রায় ৭৮.৪৩ শতাংশ সেচযন্ত্র। এর পাশাপাশি কৃষিযন্ত্র এবং পরিবহনে ডিজেলের ব্যবহার আছে। এই হিসাবে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৯ টন। এই তেল কিনতে কৃষককে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। নতুন দামে আগামী বোরো মৌসুমে একই পরিমাণ ডিজেল ব্যবহৃত হলে কৃষককে গুনতে হবে ১১ হাজার ১২১ কোটি টাকা। ফলে সেচ, পরিবহন আর কৃষিযন্ত্র পরিচালন করতে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে তিন হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ায় চলতি আমন ও পরবর্তী বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনে কৃষকের ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে কৃষি উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রথম ধাক্কা লেগেছে চলমান আমন চাষে। বৃষ্টি না হওয়ায় ৩০ শতাংশ জমিতে আমন চাষ হচ্ছে না। এটি হতে পারে খাদ্য উৎপাদনের জন্য বড় আঘাত। আসন্ন বোরো মৌসুমেও চাষিদের একই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এতে খাদা নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। খাদ্য নিরাপত্তার এ হুমকি সামাল দিতে এখনই সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমদানি করে সামাল দিতে হলে এখনই থেকেই সে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
সার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও প্রচন্ড খরায় সারা দেশে আমন চাষের যে বিপর্যয়ের চিত্র আমাদের সংবাদদাতারা পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বর্ষাকালে আস্ভাবিক বৃষ্টি হয়নি। খরায় ফেঁটে চৌচির আমনের জমি। ডিজেলের মুল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে সেচের খরচ। আমন চাষ মারাত্মক ব্যাহত হওয়ায় উদ্বিগ্ন বগুড়ার চাষীরা। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলে খরা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। ভুক্তভোগী চাষিরা বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২/১ পশলা বৃষ্টি না হলে আমনের জমির ধান শুকিয়ে যাবে। ফলন হ্রাস পাবে বলে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। তারা বলেছেন, খরা মোকাবিলায় তারা যে সেচ দেবেন খরচ বাড়ায় সেটাও অনেকে পারছেন না।
যশোর থেকে শাহেদ রহমান জানান, বৃষ্টির ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা পাচ্ছেনা কৃষক। খরায় আউশের ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। আমন চাষ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। আষাঢ়-শ্রাবণ শেষ হয়েছে কিন্তু স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে মাঝে দুএক পশলা বৃষ্টি হলেও তা খুবই সামান্য। প্রচন্ড খরায় বিবর্ণ হচ্ছে ক্ষেতের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ক্ষেতে ঠিকমতো হাল দিতে পারছেন না কৃষকেরা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। রোদের তাপে ঘর থেকে সবসময় বের হতে পারছেন না। তীব্র তাপে জনজীবন ও প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ফসলি মাঠ খাঁ খাঁ করছে।
চৌগাছার নারায়নপুর ইউনিয়নের পেটভরা গ্রামের আউশ চাষি মো. আনছার আলী বলেন, ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচন্ড তাপদহে তার আউশ ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমনের জমি তৈরি করতে জমিতে হাল দেওয়া যায়নি। বৃষ্টি হলে এত দিন জমি তৈরি করা হতো, বৃষ্টিনা হওয়াতে সময়মতো চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, সার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে নেত্রকোনার কৃষকরা দিশেহারা। তার উপর তীব্র খরায় আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির এবং রোদে পুড়ে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ায় জেলায় রোপা অমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নেত্রকোনা জেলা মূলত কৃষি নির্ভর জেলা। সার, ডিজেল ও তীব্র খরার কারণে এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমন ধান চাষাবাদ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫ শত ৮০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শত ৯৬ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত জেলায় ৯৪ হাজার ৫ শত ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, সার, ডিজেল ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে জমি চাষাবাদ, ধানের চারা রোপন, ধান কর্তন এবং তা ঘরে তোলা এবং বাজারজাত করা পর্যন্ত সর্বত্র বাড়তি দামের প্রভাব পড়বে।
সুনামগঞ্জ থেকে মো. হাসান চৌধুরী জানান, বর্ষা শেষে ভাদ্র মাসেও অনাবৃষ্টি ও দাবদাহ। সর্বত্র টানা খরা। বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়েছে চারদিকে। রোপা আমনের ফসলি জমি শুকিয়ে গেছে। ফলে আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের কৃষক বদরুল মিয়া জানান, প্রচন্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে গেছে মাঠঘাট কৃষিজমি। তীব্র খরায় ফলস উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোপা আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানের চারা গুলো রোদের তাপে পুড়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট জমিগুলোও বৃষ্টির জন্য চাষাবাদ করতে পারছি না। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর রহমত বর্ষন ছাড়া বিকল্প কোনো সুযোগ নেই।
পঞ্চগড় থেকে মো. সম্রাট হোসাইন জানান, বৃষ্টির মৌসুম হলেও দেখা নেই বৃষ্টির,উল্টো বাড়ছে তাপমাত্রা এতে আমন ক্ষেতের জমিতে ফাটল ধরেছে, আগাছার পরিমাণ বৃদ্ধি, অনেক ক্ষেতের ধান গাছে ধরেছে পোকা। পর্যাপ্ত পরিমাণে সার না পাওয়ায় দুঃশ্চিতার প্রহর গুনছেন পঞ্চগড় জেলার চাষীরা। বর্ষা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা না পেয়ে এ অঞ্চলের আমন চাষিরা উঁচু জমিতে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেশি এবং ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত আমনের চাষ করতে পারছেন না । ফলে তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার নুর মোহাম্মদ ইনকিলাবকে জানান গতকাল পর্যন্ত উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৭হাজার ৯ শত ৪ হেক্টর আমনের চারা রোপন করা হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার ৭৯শতাংশ। চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৬শত ২৫ হেক্টর। গত বছর লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২২হাজার ৫শত হেক্টর। প্রচন্ড খরার কারণে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এখন বাধ্য হয়ে সেচের মাধ্যমে আমন চারা রোপনের ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরমছলন্দ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোড়েরের কৃষক মো. মুর্শিদ মিয়া জানান, ভাইয়ে বৃষ্টির অভাবে আমরা সেচের মাধ্যমে আমন চাষের জন্য বাধ্য হচ্ছি।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে এ কে এম ফজলুল হক জানান, চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় আমন চাষীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কৃষি জমিতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে চারা উৎপাদন, আমন ধানের জমি প্রস্তুত করা ও চারা রোপন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও এখনো অনেক কৃষকই জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করতে পারেননি। তাদের চোখে মুখে রাজ্যের হতাশা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের ছাপ। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কিছু কিছু জমিতে নানা কায়দা-কানুন করে আমন চাষ করলেও অবশিষ্ট জমিতে আদৌ তা করা যাবে কি-না Ñএ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুর উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা সম্ভব হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন