দেশের ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার সাকিব আল হাসান। শুধু ক্রিকেট কেন, বাংলাদেশেরই একজন প্রতিনিধি। যার হাত ধরে ক্রিকেট যেমন পেয়েছে অনেক জয়ের উপলক্ষ, লাল-সবুজের পরিচিতিও বেড়েছে বিশ্ব দরবারে। সম্প্রতি এক বছর নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। তবে তার পর থেকেই সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিবের। একের পর এক বিতর্ক পিছু নিচ্ছে তার। যার স‚চনা হয়েছে মূলত তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পরই।
করোনাভাইরাসের এ সময়ে দেশে ফিরে ১২ ঘণ্টা না পার হতেই একটি সুপার শপ উদ্বোধন করে নানা সমালোচনার শিকার হন। এরপর ভারতে যাওয়ার পথে ভক্তের মোবাইল ভাঙ্গা নিয়ে নতুন বিতর্কে আসেন। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে ঐ ভক্তের মোবাইল ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ ওঠে সাকিবের বিরুদ্ধে। কলকাতায় গিয়ে সাকিব কালীপ‚জা উদ্বোধন করেছেন বলেও খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দুটি ঘটনায় কিছু মানুষের প্রবল সমালোচনার শিকারও হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার চাইতেও জঘন্য ঘটনার জন্ম দেন সুনামগঞ্জের এক যুবক। ফেসবুক পোস্টে এক ভিডিওতে সাকিবকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেন মহসিন তালুকদার নামে এক যুবক। গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯ এর একটি দল। তবে তার আগের সন্ধ্যায় নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই দুটি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা চার সাকিব।
ফোন ভাঙার ঘটনা নিয়ে বেনাপোলের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেক্টর সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি সাকিব আল হাসানের একজন ভক্ত। সামনাসামনি কখনও দেখিনি। বেনাপোল চেকপোস্টে তাকে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি।তার সাথে একটি সেলফি চাওয়া কি আমার অপরাধ? তিনি আমার ফোনটি উগ্র মেজাজে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এতে আমার ফোনটি ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।’
গতপরশু সন্ধ্যায় নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেয়া সেই ভিডিওতে সাকিব দাবি করেন, ইচ্ছে করে তিনি ফোন ভাঙেননি, ‘দুটি বিষয় ক্লিয়ার করার জন্য আপনাদের উদ্দেশে এই ভিডিওটি করা। প্রথমটি, ফোন ভাঙা নিয়ে। যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ফোন কখনোই আমি ইচ্ছাকৃতভাবে (ইন্টেনশনালি) ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছিলাম আমি, নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রেখে চলাফেরা করা যায়, সেটিই চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু অনেক মানুষ ছিল সেখানে, সবাই চেষ্টা করছিল ছবি তুলতে। আমিও চেষ্টা করছিলাম কীভাবে তাদের কাছে না গিয়ে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি, ইমিগ্রেশনের। একজন উৎসুক জনতা আমার শরীরের ওপর এসে ছবি তুলতে যায়। আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সঙ্গে আমার হাত লাগে এবং তার ফোনটি পড়ে যায়। হয়তো পরে ভেঙেও গিয়েছে। তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল।’
কালীপূজা উদ্বোধনের আলোচনার প্রসঙ্গের শুরুতেই সাকিব ক্ষমা চেয়ে নিলেন, ‘দ্বিতীয় যে ঘটনাটি, অবশ্যই খুবই সেনসিটিভ। প্রথমেই আমি বলতে চাই, নিজেকে আমি একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে মনে করি এবং সেটাই পালন করার চেষ্টা করি। ভুল-ত্রুটি হবেই এবং ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমরা জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ভিডিওতে সাকিব জানালেন, তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার আগেই প‚জার উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে তার উপস্থিতির সময়টুকুর বর্ণনা দিয়ে ক্ষমা চাইলেন বারংবার, ‘এখানে নিউজ বা মিডিয়া বা সোশাল মিডিয়ায় এসেছে আমি পুজার উদ্বোধন করতে গিয়েছি। যেটি আমি আসলে কখনো যাইওনি কিংবা করিওনি। এটির প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরাই ওখানে ছিলেন, আমন্ত্রিত হিসেবে। কিংবা কার্ড দেখলে, সেখানে লেখাও আছে কে উদ্বোধন করেছে। পুজার উদ্বোধন আমি কখনোই করিনি এবং সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি করব না। তারপরও হতো ওখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে আমি অবশ্যই আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মনে করি, আপনারা এটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটির চেষ্টা করব।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি বড় অংশ এই ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাকিবকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে সাকিব একটি ভুল করলো, এমনটি মনে করা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। তবে সাকিবের মাপের কিংবা তার চেয়েও কম খ্যাতির মানুষও তো ‘ধরা কে সরা জ্ঞ্যান’ করে চলে এদেশে! ক-ই তারা তো কখনও ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবেনি! ক্রিকেটের সুপারস্টার হয়েও নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষামা চেয়ে যে দৃষ্টান্ত রাখলেন সাকিব, তাতে তার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে বৈ কমবে না এদেশের মানুষের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন