বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের অধিনায়ক এবং বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান’কে নিয়ে সোমবার মধ্যরাত থেকে ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় তোলপাড়। প্রায় দু’বছর আগে জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করলেও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কাছে তথ্য গোপন করার অভিযোগে নাকি সাকিব ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছেন! খবরটি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিশ্ব মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করলে দিনভর উদ্বিগ্ন ছিল সারাদেশ। এদিন সন্ধ্যার পর আইসিসি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তথ্য গোপনের অপরাধে সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো। তবে দায় স্বীকার করায় তার এক বছরের শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। যদি শাস্তির প্রথম বছর আইসিসি সাকিবের আচরণে সন্তুষ্ট হয় তবে এক বছরের শাস্তি মওকুফ হবে। এমন খবরে মর্মাহত সাকিব সহ গোটা দেশের ক্রিকেট অনুরাগিরা। ভারত সফরের আগে সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞায় হতবাক ক্রিকেট বিশ্ব।
তবে আইসিসি’র ঘোষণার আগেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অগণিত সাকিবভক্ত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) বলেছে, তারা সাকিবের পাশে আছে।
মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘আইসিসির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছু করার না থাকলেও সাকিবের পাশে থাকবো আমরা। সে আমাদের দেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার ছাড়াও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। ইতোমধ্যে বিসিবি ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা সাকিবের পাশেই থাকবে।’
এদিন সচিবালয়ে নিজ প্রতিক্রিয়ায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসি যে সিদ্ধান্তই নিক, আমরা আমাদের ক্রিকেটারের পাশেই থাকবো। তাকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে চেষ্টাই করবো।’ তিনি যোগ করেন,‘তবে যেহেতু এটা আইসিসির বিষয়, আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। খবরে আসার পর বিষয়টি আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং কি করে সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়টিও দেখছি। ঘটনাটা কি এবং কি হতে যাচ্ছে বিষয়টি জানানোর জন্য আমি ইতোমধ্যে বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছি।’
আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতিমালায় আছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সংশ্লিষ্ট যে কেউ জুয়াড়ির কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পেলে সেটা তৎক্ষণাৎ আইসিসি বা বোর্ডের দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানাতে হবে। সাকিব সেটা জানাননি। যে কারণে খুব বড় বিপদ সামনে এসে পড়লো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। তাকে নিয়ে দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে এমন কঠিন সময়ে গণমাধ্যম যেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কোনো খবর না প্রকাশ করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘আমি প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের সকল মিডিয়া এবং বিদেশি গণমাধ্যমে কাজ করেন এরকম সব বাংলাদেশী সাকিবের পক্ষে শক্ত হয়ে দাঁড়াবেন। রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর হেডলাইন করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দয়া করে সাকিবের (বা অন্য যে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে এনেছে এরকম কোনো ক্রীড়াবিদের) সাথে এটা করবেন না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সেরা সম্পদের অন্যতম একটি নাম সাকিব আল হাসান, যে অনেক কষ্টের মাঝেও আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, আমরা বিশ্বের সেরা সেরা যেসব অলরাউন্ডার দেখে বেড়ে উঠেছিলাম তাদের সবার চেয়ে যে সে সেরা তা আমার আপনার বিবেচনায় নয়, বছরের পর বছরের পরিসংখ্যান এবং আইসিসিই তা বলেছে। এটাকে অন্য কিছুর সাথে অযথা জড়াবেন না। আইসিসির নিয়ম আছে, যা বিসিবি দেখবে কিন্তু নাগরিক হিসেবে সাকিবের পাশে সবাইকে দাঁড়াতেই হবে।’
এদিকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শাস্তির খবর প্রচারের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক যেন সকিবময় হয়ে উঠেছে। দেশ-বিদেশের অগণিত সাকিবভক্ত একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে প্রকাশ পাচ্ছে সাকিবের জন্য তাদের ভালবাসা। তারা সবাই আশা করছেন অচিরেই শাস্তি কাটিয়ে মাঠে ফিরবেন তাদের প্রিয় ক্রিকেটার। টুইটারেও অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমী সাকিবকে নিয়ে টুইট করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন