এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৯ অক্টোবর। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন শুক্রবার রাত ২টার কিছু পর। স্বাভাবিকভাবেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। কিন্তু ফেরার ১০ ঘণ্টা পার না হতেই গুলশানে একটি সুপারশপ উদ্বোধন করতে গিয়েছেন এ অলরাউন্ডার! এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোয়ারেন্টাইন বিষয়ক বিধি ভেঙেছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে।
শুক্রবার দুপুরে গুলশানের সে সুপারশপের আয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই সাকিবকে ঘিরে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। তাদের অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। গায়ে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই। আয়োজক আর উৎসুক জনতার ভীর সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। এমনকি রীতিমতো ভিড় ঠেলে কোনো রকমে ফিতা কাটেন সাকিব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের যেসব ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে সাকিবকেও এক পর্যায়ে দেখা গেছে মাস্ক খোলা অবস্থায়। আয়োজকদের অনুরোধেই মুখের মাস্কও খুলতে হয় তাকে। অনেক মানুষের সংস্পর্শে তাকে আসতে হয়েছে। অথচ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহতা এখনও কমেনি দেশে। উল্টো মাঝে কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে আরও বেড়েছে।
অথচ বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের নিয়ম অনুযায়ী দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইন করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এর সাধারণ নির্দেশিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাইরেক্টরেট জেনারেল (ডিজিএইচএস) ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, কেউ যদি দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনের সময়ে বাসা থেকে বের হন তাহলে তিনি কোয়ারেন্টাইন আইন ভঙ্গ করবেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমানে সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বিস্ময় প্রকাশ করলেন সাকিবের এই কাণ্ডে, ‘কোয়ারেন্টাইন বিধি অনুযায়ী বিদেশ থেকে কেউ কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এলে তার ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। নেগেটিভ সার্টিফিকেট না নিয়ে এলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ১৪ দিন। সাকিব যদি নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও আসে, তাহলে হোম কোয়ারেন্টাইনে তার থাকার কথা। জানি না সে কীভাবে এটা করল বা তার ব্যাখ্যা কী, আমি নিয়মটা বললাম।’
আইসিডিডিআরবির অ্যাপিডেমিক কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিপারেনডেন্সির সাবেক ইউনিট প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম মিতুর মতে, কোনও যাত্রীর আগমনকালে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও সেই ব্যক্তির দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সে যাত্রী হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা জরুরি, 'অবশ্যই, এটি এমন ব্যক্তির পক্ষেও ঝুঁকিপূর্ণ, যার করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট রয়েছে। আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বিমানে আরোহণ করতে পারেন, তবে আপনি বিমানের ভিতরে বা টার্মিনালেও সংক্রামিত হতে পারেন।'
এ প্রসঙ্গে সাকিবের বক্তব্য জানার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এই ক্রিকেটার ফোনের কোনো উত্তর দেননি। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান জানালেন, সাকিবের এই ঘটনায় বিসিবির বলার মতো কিছু নেই, ‘ক্রিকেটাররা যখন বায়ো-বাবলে থাকে, তখন দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। সাকিব তো বাবলে নেই। তার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আমাদের মন্তব্য নেই।’
এর আগে বিসিবির বিদেশি কোচরা যখন নিজ নিজ দেশ থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশে, নিয়ম মেনেই কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তারা। কয়েকদিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে কোভিড পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তারা অনুশীলনে যোগ দিতে পেরেছিলেন।
সাকিবের জন্যও এবার এই ব্যবস্থা করে রেখেছিল বিসিবি। আগামী সোমবার তার ফিটনেস পরীক্ষা হওয়ার কথা মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। তার আগ পর্যন্ত তিনি কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে ফেরার ১০ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেই তিনি যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। এই সময়ের মধ্যে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে ফল পাওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, সাকিব যখন বিসিবি মেডিকেল দলের সঙ্গে পরামর্শ করবেন তখন বোর্ডের স্বাস্থ্য নির্দেশিকাতে থাকবেন, 'সে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে ফিরে এসেছে। এখনও বিসিবির মেডিকেল টিমের সাথে পরামর্শ করতে পারেননি। একবার তা করলে সে বিসিবির স্বাস্থ্য নির্দেশিকার আওতায় থাকবেন।'
গত সেপ্টেম্বরে যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন সাকিব, তখনও শুরুতে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তিনি। পরে পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ হয়ে বিকেএসপিতে অনুশীলন করেন। এবার দেখা গেল ব্যতিক্রম। তবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি জানা আছে বলেই কিনা জনাকীর্ণ এই অনুষ্ঠানে সাকিবও খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। কোনোভাবে ফিতা কেটেই বিদায় নেন অনুষ্ঠান থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন