পৃথিবীতে কেউ বলতে পারবে না যে, তার চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই। ডাক্তারের কাছে যে কোনো ধরনের রোগী আসতে পারে এবং তাকে চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে। যদিও মানুষ কিছুটা সচেতন যে, তার কী ধরনের রোগ এবং কোন ডাক্তারের কাছে তাকে যেতে হবে। এমন সচেতন লোক শহরেই বেশি। গ্রামের মানুষ এখনো সচেতন হতে পারেনি। তাই দেখা যায় অসুখ করলে অনেককেই হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতে। আর সেই ডাক্তার সকল রোগেরই চিকিৎসা দিচ্ছে। তাতে অনেকে ভালোও হচ্ছে, আবার অনেকে দুর্ভোগও পোহাচ্ছে। সেই ডাক্তার বুঝে না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছে। তাতে অনেক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যহানির শিকার হচ্ছে। আমরা অনেকেই আছি যারা কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকি। যা মোটেও ঠিক নয়। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেখা যায় জ্বর কিংবা ছোটখাটো ব্যথা হলে নিজেরাই হয়ে উঠি ডাক্তার। সরাসরি চলে যাই যে কোনো মেডিসিনের দোকানে। কিনে খেয়ে ফেলি অ্যান্টিবায়োটিক।
বিভিন্ন রকম বা গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে যারা ভিন্ন ভিন্ন ব্যকটেরিয়া সংক্রমন রোগে ভিন্ন ভিন্ন ভাবেই কাজ করে। যা সাধারনের জানার কথা না। তাই আবারও সেই কথা বলে নিচ্ছি, অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাওয়া উচিত। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনটির ব্যবহারে রক্ত কমে যায়, আবার কোনটি কান নষ্ট করছে, কোনটি কিডনি বা লিভার নষ্ট করবে তা সাধারন মানুষ বা হাতুড়ে ডাক্তার কেউই জানে না। যেমন ইন্ট্রামাসকুলার স্ট্রেপটোমাইসিন চিকিৎসায় মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরান, মাথাব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব হওয়া, মুখ বা মুখের ভিতরে জ্বালাপোড়া করা শরীরে সুচালো কোনো জিনিস ফোটানোর ব্যথা অনুভব করার মহ অবস্থা হতে পারে। অষ্টম মস্তিষ্ক স্নায়ুর (ক্রেনিয়াল নার্ভের) ওপর স্ট্রেপটোমাইসিনের প্রতিক্রিয়া অনেক সময় এরূপ প্রবল বিষক্রিয়া ধারণ করতে পারে। এই এরকম অবস্থায় রোগীর সোজা হয়ে হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। যেমন উঁচুিুনচু ও যে কোনো জায়গা, অন্ধকার জায়গা দিয়ে হাঁটার সময় নিজের শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাঁটতে পারে না। বয়স্ক রোগীদের মধ্যে এটা বেশী দেখা যায়। পরিমাণে অনেক এবং বেশি দিন এই স্ট্রেপটোমাসিন গ্রহণের ফলে এরকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কানের ভিতর একটানা শব্দ হতে পারে ও কানে নাও শুনতে পারে। এই ওষুধ বন্ধ না করা হলে কানে শোনার ক্ষমতা আর ফিরে আসে না।
ওষুধের প্রতিক্রিয়া সাধারণত এর ব্যবহার না জেনে করার কারণেই বেশী হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোর ভিতর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অস্বস্তি, অনেক সময় এমন আকার ধারণ করে যে ওষুধ বন্ধ না করে উপায় থকে না। রিফামপিসিন ও আইসোনিয়াজিড এই দুটো দিয়ে চিকিৎসায় অনেক সময় পান্ডুরোগের লক্ষণ দেখা যায়। যকৃৎ ভালো না থাকলে রোগী যদি যকৃতের ওপর প্রভাবধর্মী কোনো ওষুধ খেয়ে থাকে তখন রিফামপিসিনে মারাত্মক বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আবার অনেক রোগীর প্রতিক্রিয়া হয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো জ্বর হয়। রিফামপিসিন কর্টিকোস্টেরয়েড, এন্টিকোয়াগুলেন্ট, ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ ও টলবিউটামাইডের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গর্ভবতী রোগীকে রিফামপিসিন দেওয়া ঠিক হবে না।
পরিশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমিত ব্যবাহার করুন, এর কার্যকারীতা বাঁচিয়ে রাখুন নিজে বাঁচুন।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন