দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণ মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জানমাল রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। তবে জনবল সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলার ৪টিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। আর পুরো বিভাগে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি অ্যাম্বুলেন্সের ৮টিই সম্পূর্ণ বিকল। পাশাপাশি রিভার ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা মাত্র দু’টি।
বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা সদরের এ দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে ৩০ বছরের পুরোনো অগ্নি নির্বাপন নৌযান চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এসব স্টেশনে কোন রিভার অ্যাম্বুলেন্স নেই। দুটি স্টেশনের রিভার অ্যাম্বুলেন্সই বিকল দেড় যুগ আগে থেকে। পুরো বিভাগে ডুবুরির সংখ্যা সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩ জন। পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনে কোন ডুবুরি নেই। অথচ প্রতিটি জেলায় ৬ জন ডুবুরিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট গঠনের সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সোয়া ৪শ’ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ২৭ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ পুড়ে গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পেয়েছে বলে জানা গেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১ কর্মী নিহত ও একাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়াও গত ১০ মাসে প্রায় আড়াইশ’র মত সড়ক দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এসব দুর্ঘটনায় ৭৮ জন নিহত ও আরো ৪ শতাধিক আহত হন। দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার ও সড়ক-মহাসড়ক সচল রাখতে ফায়ার সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এখনো কয়েকটি নদ-নদীবহুল উপজেলাতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। যদিও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশের সব উপজেলাতে ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে এ প্রতিষ্ঠানের জনবল সঙ্কট ও অবকাঠামোর দুর্বল অবস্থা সঠিক সেবা প্রদানকে বাঁধাগ্রস্থ করছে। বর্তমান কাঠামোতে দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি প্রথম শ্রেণি এবং ৩৫টি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন ও দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে মোট মঞ্জুরিকৃত ৯৭৫ জনবলের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র সাড়ে ৭শ’। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অপরদিকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ফায়ার স্টেশনসহ সব ধরনের অবকাঠামোরই অত্যন্ত করুন হাল। বেশিরভাগ ফায়ার স্টেশনের নিয়মিত কোন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। তহবিল সঙ্কটে গণপূর্ত অধিদফতর কাজ করতে পারছে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সামান্য মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ ফায়ার স্টেশনের অবকাঠামোর অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে।
বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পরে ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় উপ-পরিচালকের দফতর, সরঞ্জাম মেরামত কারখানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে বরিশাল শহরে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনটি সম্প্রতি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও নগরীর কাশীপুরে আরেকটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর রূপাতলী এলাকায় অনুরুপ আরেকটি স্টেশন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পরে তা আইনি জটিলতায় আটকে আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন