২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ইউনিয়ন সুরক্ষায় চারটি পৃথক উদ্যোগ গ্রহণ করেন বরিস জনসন। ম‚লত স্কটিশ জাতীয়তাবাদকে ঠেকানোর জন্যই ছিল তার এ প্রয়াস। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি জোরদারে বেশকিছু পদক্ষেপ নেন। কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতার সে পদক্ষেপগুলোকে ‘দফায় দফায় ভুল পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, জনসনের নেতৃত্বই স্কটিশ ভোটারদের আরো স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে পরিচালিত জেএল পার্টনার্স পরিচালিত এক জরিপের বরাতে পলিটিকো ইউরোপ জানায়, যুক্তরাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে। চলতি মাসে হাউজ অব কমনসে লেবার পার্টির নেতা স্যার কেইর স্টার্মার বলেন, যতবার ইউনিয়ন নিয়ে মুখ খোলেন ততবার তিনি তিন শতাব্দীর এ ইউনিয়নকে ঝুঁকিতে ফেলেন। স্টার্মারের এ উক্তির সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে স্কটল্যান্ডে। স্কটিশদের মধ্যে নতুন করে স্বাধীনতার দাবি মাথাচাড়া দিয়েছে। নতুন এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ৫১ থেকে ৫৯ শতাংশ স্কটিশই এখন স্বাধীন স্কটল্যান্ড দেখতে চান। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে অবশ্য ৫৫-৪৫ শতাংশ ভোটে স্বাধীনতার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন স্কটিশরা। সর্বশেষ ১৪টি জরিপের ফল বলছে, বেশির ভাগ স্কটিশের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। কারণ, এর আগে কখনো এত বেশি মানুষ স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা চাননি। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওনের বক্তব্যেও উঠে এসেছে বিষয়টি। শনিবার তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এর আগে কখনো স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিষয়ে এত বেশি নিশ্চিত তিনি ছিলেন না। ২০১৪ সালে প্রত্যাখ্যান করলেও বর্তমানে অনেক বেশি মানুষের ব্রিটেনের সঙ্গে যুক্ত না থেকে স্বাধীনতা চাওয়ার কারণ হলো—ব্রেক্সিট তথা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া এবং মহামারী মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা। এ কারণে আবারো গণভোট আয়োজনে করে ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে যেতে চায় স্কটল্যান্ড। ম‚লত মদ ও তেলশিল্পসহ নিজেদের উপার্জনে আরো উন্নত হতে পারবে বলে মনে করেন স্কটিশরা। সে ধারণা থেকেই বিভিন্ন সময় স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনে আনা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে গণভোট দেয়া হয়। তাতে স্বাধীনতার দাবি প্রত্যাখ্যাত হলেও স্বাধীনতার পক্ষে ভোট পড়ে ৪৫ শতাংশ। এরপর থেকে ব্রেক্সিট ইস্যুতে স্কটিশরা ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু ব্রেক্সিট গণভোটে পাস হওয়ার পর থেকে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। এ সুযোগে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাপন্থী স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নিকোলা স্টারজিওন আবারো গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেন। আগামী বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে গণভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন স্টারজিওন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা হচ্ছে আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য। এর আগে আমি কখনো স্বাধীনতার বিষয়ে এত বেশি নিশ্চিত ছিলাম না। নতুন বছর ইইউ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন। তার দগদগে ক্ষতের মধ্যেই হতে পারে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে আরেকটি গণভোট। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর হাতে দুটি বিকল্প আছে। হয় তিনি গণভোট আয়োজন করতে দেবেন না। সেটি হলে তার জনপ্রিয়তা কমে যাবে। আরেকটি তিনি করতে পারেন গণভোটের অনুমতি দেয়া। এটি করা হলে স্কটল্যান্ড আর ব্রিটেনের মানচিত্রের অংশ থাকবে না। এ কারণে বরিস বলেছেন, ২০১৪ সালে একটি গণভোট হয়েছে এবং স্কটল্যান্ডের মানুষ স্বাধীনতার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফরেন পলিসি অবলম্বনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন