শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

স্বপ্ন ও সৃষ্টির ৫৬ বছরে বাকৃবি

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন দৃষ্টিনন্দন সবুজ বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি সবুজে ঘেরা কৃষি শিক্ষার বিশাল অরণ্য। যে অরণ্যের প্রতিটি গাছের বদৌলতে ১৬ কোটি কিংবা তারও বেশি বাংলাদেশির ঘরে আজ আর খাদ্যের সংকট নেই। কিন্তু একসময় ৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশেও খাদ্যের করুণ সংকট ছিল। আজ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে ১৬ কোটির বেশিতে। ফলে কমে গেছে বেশকিছু আবাদি জমির পরিমাণ। তারপরেও দেশ আজ খাদ্যে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজকের এই দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর প্রায় ৪৪ হাজার গ্র্যাজুয়েট মহা মূল্যবান ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিই দেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষার বিদ্যাপীঠ। ১৮ আগস্টে তার ৫৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়েছে। ৫৫টি গৌরবের বছর পার করে সে পা বাড়িয়েছে ৫৬ বছরে। হ্যাঁ, বলছিলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়টির সংক্ষিপ্ত নাম ‘বাকৃবি’।
ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পাড় ঘেঁষে সবুজ বনানীর ভেতর গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ১২৫০ একরের এই বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৩টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ছয়টি বিভাগের আওতায় এযাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ২৫,৫২৩ জন অনার্স, ১৬,০৭৮ জন মাস্টার্স এবং ৫৩৭ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়েছে।
বর্তমানে এখানে ছয়টি অনুষদে প্রায় ৬,০৭৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। যার মধ্যে অনার্স পর্যায়ে ৪,৪৩৪ জন, মাস্টার্সে ১,২০৯ এবং পিএইচডি ৪৩২ জন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৫৬৯ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক ২৭০ জন, সহযোগী অধ্যাপক ১০৭ সহকারী অধ্যাপক ১৩৯ এবং প্রভাষক পর্যায়ে ৪৬ জন রয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে ৩৬৩ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
ভৌত অবকাঠামো : দুটি প্রশাসন ভবন, ছয়টি অনুষদীয় ভবন, ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন, কৃষি সম্প্রসারণ ভবন, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইন্সটিটিউশন (জিটিআই) ভবন, ইনস্টিটিউট অব এগ্রি-বিজনেস ম্যানেজমেন্টের দ্বি-তল ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন (প্রায় দুই হাজার আসনবিশিষ্ট), একটি ক্রিড়া শিক্ষা ভবন, স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কৃষি মিউজিয়াম, ফিশ মিউজিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউজ, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬১১টি আবাসিক ইউনিট, ছাত্রদের নয়টি ও ছাত্রীদের চারটি আবাসিক হল এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অফিস ভবনাদি।
রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্মপ্লাজম সেন্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য গাছগাছালির বিশাল সংগ্রহশালা। এছাড়াও ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয়-৭১’, বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা ঘোষণা করার স্থানটিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্ত্বর’ নির্মিত হয়েছে।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে ত্রিভুজ, পদচিহ্ন, অঙ্কুর, কম্পাস নাট্য সংগঠন, বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও ডিবেটিং ক্লাব, রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন, স্কাউট, বিএনসিসি অন্যতম।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাউরেস এর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ১১৮৭টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে এর আওতাধীন চলমান প্রকল্পসংখ্যা ২৬২টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আলী আকবর জানান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং পুষ্টিনিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা এখন প্রস্তুত। আরো আধুনিক ও নতুন নতুন গবেষণা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
ষ শাহীন মাহমুদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন