বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ও উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি সংকট

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জুয়েল মাহমুদ

গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত হলো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। এবারের ফলাফল গতবারের তুলনায় উন্নতির ধারায় ফিরেছে। এবছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লক্ষ ৩ হাজার ৬৪০ জন। আর পাস করেছে ৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এরমধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। এবার পাসের হার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৫.১০ শতাংশ। জিপিএ ৫ বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৮২টি। এবছর বিজ্ঞান গ্রুপের ফল সবচেয়ে ভালো হয়েছে। এই গ্রুপের পাসের হার ৮৩.০৪। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৪৬৮ জন। মানবিকে পাসের হার ৬৭.৩৭ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৫১ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার ৭৪.৪৩ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৩১ জন। দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার। সেক্ষেত্রে শুধু জিপিএ ৫ ভর্তির সুযোগ পেলেও আরো প্রায় ১৪ হাজার আসন বৃদ্ধি করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় একটি আসনের বিপরীতে লড়তে হবে প্রায় ২০ জনকে। তারওপর গত বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা আবার সুযোগ নেবেন এবং আসন সংকটের কারণে প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে প্রতি বছরের মত এ বছরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের সদ্য এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। আর চিন্তার মাত্রাটা যেন একটু বেশিই থাকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংকট এই মহাভোগান্তির মূল কারণ। আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংকট কাটাতে হলে মানসম্মত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৬ হাজার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ হাজার, চট্টগগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ হাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩ হাজার আসন রয়েছে।
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও সবাই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় দেড় লাখ। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে আরও প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে অতীতে কোন কালেই আসন সংকট হয়নি। এবারও হবে না। তবে উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের জন্য সারাবিশ্বেই শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। পর্যাপ্ত আসন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়মিত কোন না কোন নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে। এতে আসন সংখ্যাও বাড়ছে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে প্রতিবারই অসংখ্য আসন শূন্য থাকে। তাই আসন সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই বলেও শিক্ষামন্ত্রী জানান।
দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে মোট ৩৪টি। এর মধ্যে বেশ কটি আছে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এর মধ্যে ঢাকা, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদাই বেশি। আর বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বুয়েট, শাহজালাল, খুলনা এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়াই হয় বেশি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অবশ্য কলেজ ভিত্তিতে আলাদা হয় না। কারণ জিপিএ-৫ পাওয়া ৫৮ হাজার তো বটেই জিপিএ-৪ এর বেশি পাওয়া আরও তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। তাই সব মিলিয়ে ৪৫ হাজার আসনের বিপরীতে লড়াইয়ে নামবে প্রায় তিন লাখ এর বেশি শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে ইচ্ছুক মতিঝিল স্কুল এন্ড কলেজের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত তানিয়া আমির বলেন, ভাল পড়াশোনা করলে জিপিএ-৫ পাওয়া নিশ্চিত হলেও কাক্সিক্ষত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিত নয়। কারণ জিপিএ-৫ পাওয়ায় কোন সীমাবদ্ধতা নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন সীমিত। সেখানে আসন সংখ্যা সীমিত। আমি জিপিএ-৫ পেলেও নিশ্চিত নই যে আমি আমার কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানের কাক্সিক্ষত বিভাগে ভর্তি হতে পারবো।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, অতীতে যখন পাসের হার কম ছিল, তখনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা কম ছিল। এখনো পাসের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক কম আসন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষা তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তাদের অধিকাংশই মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর যাদের সামর্থ্য আছে তাদের একটা অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, নইলে বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে গত কয়েক বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে, তাদের মানও কিছুটা কমছে। তাই এবার যারা পাস করেছে এবং গতবার যারা ভর্তি হতে পারেনি ঘুরে ফিরে তারাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা করবে। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষায় ভর্তির চাপের বিষয়টি আগের মতোই থেকে গেল বলে মত দেন তিনি। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ১২ বছরের সাধনা শেষে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে সদ্য এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের। এ ক্ষেত্রে ঝুলিতে শুধু জিপিএ-৫ থাকলেই হবে না। সুযোগ পেতে হবে দেশের স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিরও। এ নিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী-অভিভাবকের প্রত্যাশার আকাশচুম্বি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতিগত জটিলতা, সমন্বয়হীনতার অভাব, কোচিং ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, মফস্বল ও শহরের সুযোগ-সুবিধার তারতম্য এবং প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়নে এইচএসসি সিলেবাসকে গুরুত্ব না দেয়ায় বিষয়টি তুলে ধরেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষায় যারা ভাল করবে তারাই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। উচ্চ শিক্ষায় সমতা আনতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
KhaledA65265714 ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১০:৩২ এএম says : 0
So sad!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন