ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ের যাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি বিদায়ি ঘণ্টা বেজে উঠলেও মহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের মুক্তবাণিজ্য সম্পর্ক এখনো অব্যাহত আছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুই পক্ষকে এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলে উভয় পক্ষই মুক্তিবাণিজ্য সম্পর্ক হারাবে। স্পষ্টতই আলোচনা চূড়ান্ত করতে দুই পক্ষের হাতে খুব অল্প সময় আছে। ব্রাসেলসে দুই পক্ষের মধ্যে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আলোচনা চললেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং ইইউর প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তা নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিটের রূপান্তরকাল শেষ হতে আর সপ্তাহ তিনেক বাকি রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ইইউর সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত চুক্তিবিহীন অবস্থাতেই বিচ্ছেদ মেনে নিতে হবে যুক্তরাজ্যকে। এক বিবৃতিতে একজন ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে কোনো ইতিবাচক চূড়ান্ত উপসংহারে উপনীত হওয়াটা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। কারণ ইইউ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা যুক্তরাজ্যের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনাও সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ অচলাবস্থার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। এ আলোচনা অব্যাহত থাকার কথা ছিল (প্রতিবেদনটি আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই লেখা)। এ আলোচনার পরই উভয় পক্ষ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে একটি পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন। ব্রিটিশ ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না। তবে তিনি তার অবস্থানে অটল। তিনি এমন একটি চুক্তি চান, যেটি ন্যায্য হবে এবং যেটি একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের মৌলিক অবস্থানের জন্য সম্মানজনক হবে।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতে, দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তির ক্ষেত্রে যেসব বাধা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইইউর একটি দাবি, যাতে বলা হয়েছে যে ব্রেক্সিটের পরও যুক্তরাজ্যকে জোটটির আইন ও বিধিবিধানের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের অনুগামী হতে হবে। যুক্তরাজ্য বেশ অনড়ভাবেই এ দাবিতে আপত্তি জানিয়েছে। আলোচনায় ইতিবাচক পরিসমাপ্তি না হলে ব্রিটেনকে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট নিয়েই এগোতে হবে। আর সেক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি থেকে দেশটিকে জোটের অন্য অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শর্ত মেনে বাণিজ্য করতে হবে। এতে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর ব্যয় বেড়ে যাবে এবং দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়তে পারে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনেও ইঙ্গিত মিলেছে যে যুক্তরাজ্য চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল দৈনিকটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভার সদস্যরা ১ হাজার কোটি পাউন্ডের (১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) একটি প্যাকেজের রূপরেখা তৈরি করছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প খাতগুলোকে উদ্ধারে কাজে লাগানো হবে। গবাদি পশুপালক ও মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতা ও কেমিক্যাল কোম্পানিগুলো এ তহবিল থেকে সহায়তা পাবে। অবশ্য চুক্তি হোক বা না হোক, ব্রিটিশ নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের যে সীমান্তে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে, সে বিষয়ে জনসন প্রশাসন আগে থেকেই সতর্ক করে আসছে। সরকার জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্তে যে প্রক্রিয়াগত জটিলতা তৈরি হবে, তা মোকাবেলা করার জন্য ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো এখনো প্রস্তুত নয়। সরকারের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তের প্রতিবন্ধকতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূর করার জন্য আমরা বেশকিছু টুলস তৈরি করেছি। তবে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে বাণিজ্যকারীদের অবধারিতভাবে কিছু সমস্যায় পড়তে হবে।’ ধারণা করা হচ্ছে কোনো চুক্তি ছাড়াই বা নো ডিল বেক্সিট হবে। এখন পর্যন্ত আলোচনা যত দূর গড়িয়েছে তা আশাব্যঞ্জক নয়। শেষ পর্যায়ে এসে দুই পক্ষই একে অন্যের কাজ থেকে যতটা সম্ভব ছাড় আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই আলোচনা থেকে কেউই বড় কোনো অগ্রগতি আশা করছে না, আবার হাল ছাড়তেও রাজি নয় কোনো পক্ষ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একসময় বলেছিলেন, ব্রেক্সিট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ব্রিটেন নিজের পিঠা নিজেই পুরোটা খেতে পারবে। কিন্তু এখন আলোচনা যেভাবে চলছে তাতে মনে হচ্ছে না ২৭ জাতি জোট ইইউ ব্রিটেনকে পিঠার অর্ধেকটাও দিতে রাজি। ৪৫ কোটি জনগণ অধ্যুষিত ইইউ বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুক্তবাজার অঞ্চল, কাজেই ব্রিটেন এই সুযোগপুরোটা হাতছাড়া করতে চাইছে না। অন্যদিকে ইইউর জটিল নিয়ম কানুনগুলো অনুসরণ করাও দেশটির জন্য সহজ ছিল না। ব্লুমবার্গ, দ্য টেলিগ্রাফ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন