গোপালগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে এতিম শিশু জোবায়ের খানের ( ১২) রহস্য জনক মৃত্যু নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে । পরিবারে দাবি জোবায়েরকে শারীরিক নির্যাতন করে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে । এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার শিশুর পরিবার থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় বুধবার রাতে শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ শিশু পরিবারের এতিম শিশুদের নজরদারিতে রেখেছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম।
নিহত জোবায়েরের মা সেলিনা বেগম বলেন, র্দীঘদিন যাবত আমার মেয়ে চাঁদানীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো শিশু পরিবারের রমাজান । আমি ও আমার মেয়ে চাদঁনী বিষয়টি জোবায়েরকে দু’মাস আগে জানিয়েছিলাম । জোবায়ের শিশু পরিবারের নিবাসী রমাজানকে তার বোনকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করে। এ নিয়ে রমজান আমার ছেলেকে মেরেছে । এছাড়া জোবায়ের মারা যাবার পর রমজান তার মোবাইল থেকে কারো কাছে ম্যাসেজ ( খুদে বার্তা) দিয়েছে। সেখানে লিখেছে জোবায়ের মারা গেছে । তিনি আরো বলেন, ছেলেকে শিশু পরিবোরে পাঠিয়েছিলাম ভাতের অভাবে , ছেলে আমার চির বিদায় নিয়ে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা বৃহস্পতিবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযুক্ত রমজান শেখ (১৭) শিশু পরিবারের নিবাসী ও গোপালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র বলে জানান সেলিনা বেগম।
নিহত জোবায়েরে বোন চাদঁনী খানম বলে, রমজান আমাকে প্রায়ই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। কথা বলার জন্য কল করলে আমি অতিষ্ট হয়ে মাযের কাছে মোবাইল দিয়ে দিতাম । দু’ মাস আগে একদিন জোবায়েরকে বিষয়টা বলি এনিয়ে ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়।
শিশু জোবায়েরকে মারধরের কথা অস্বীকার করে রমজান শেখ বলে, আমি জোবায়েরে বোনের সাথে আগে কথা বলতাম । জোবায়ের নিষেধ করার পর কথা বন্ধ করে দেই। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি । জোবায়ের মারা যাবার পর দিনটা লিখে রাখার জন্য মোবাইলের ম্যসেজে সেভ করেছি। কিন্তু এটা কাউকে পাঠাইনি। আমি তাকে মারিনি । আমি স্কুল থেকে এসে জোবায়েরকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে মেঝেতে শুইয়ে দেই।
গত ২২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা পৌনে ২ টায় গোপালগঞ্জ শহরের শিশু বাগান এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারে জোবায়ের খানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে । নিহত জোবায়ের নড়াইলের লহাগড়া উপজেলার পরগাতি গ্রামের ইঞ্জিল খানের ছেলে। সে শহরের ১৫০ নং গোপালগঞ্জ শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ র্থ শ্রেণির ছাত্র । গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষ বুধবার জোবায়েরের লাশ পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয় ।
গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই আব্দুল বারেক বলেন, জোবায়েরের লাশের সুরাতহাল রিপোর্ট আমি করেছি। তার শরীরে কোন আঘাতে চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধু গলায় স্পট রয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার ওই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার রাতে শিশুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্টে যা আসবে, সে মোতাবেক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ওই শিশু পরিবারের নিবাসীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করে যাচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন