শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ

হঠাৎ রমনা পার্ক পরিদর্শনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সংসদীয় কমিটি বার বার সুপারিশের পরও সংশোধন করা হয়নি রমনা পার্কের নকশা। গোজা মিলে আশ্রয় নিয়ে রমনা পার্কের ভেতরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গতকাল হঠাৎ করে রমনা পার্ক পরিদর্শন করেন সাবেক মন্ত্রী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি প্রকল্পের কাজে ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এদিকে সময় বাড়িয়ে উন্নয়ন কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। সেই সাথে নকশা বর্হিভ’ত স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধেরও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর রমনা পার্কের চায়নিজ রেস্টুরেন্টে জরুরি এক বৈঠক করেন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ্ খন্দকার, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীব কুমার বসু, প্রকল্পের পরিচালক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অর্থ বরাদ্দসহ নকশা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হলেও শুধু ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ করেছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। সে কাজ গুলো দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। নকশা বহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তারা সময় চেয়েছে।
জানা গেছে, রমনা পার্ক শুধু ঢাকা শহরের নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি পার্ক। এটি বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রয়েছে। পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮ দশমিক ৫ একর। এর লেকের আয়তন ৮ দশমিক ৭৬ একর। ১৬১০ সালে ঢাকায় মোগলদের শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর বাগানের অনুরাগী মোগলরা এ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তখন এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি। এখনকার ইস্কাটন থেকে নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সচিবালয় পুরো এলাকাই ছিল রমনা পার্কের চারপাশে। কোম্পানি আমলে রমনার দক্ষিণের একটি অংশে রেসকোর্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। একপর্যায়ে ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে রমনা এলাকা ক্রমে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। মোগল আমলে গড়ে ওঠা রমনা উদ্যান মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তার সৌন্দর্য হারায়। ঔপনিবেশিক যুগে (১৮২৫ সালে) ঢাকার ইংরেজ কালেক্টর মি. ডস ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন এবং কারাগারের বন্দীদের দিয়ে রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করে বের করেন ডিম্বাকৃতির একটি অংশ। পরিষ্কার করা অংশটিকে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘিরে নির্মাণ করা হয় রেসকোর্স। ইংরেজদের আমলে এই রেসকোর্সের উত্তর-পশ্চিমে একটি টিলাঘর তৈরি করে চারপাশে লাগানো হয় গাছ-গাছালি। এই রেসকোর্সকে কেন্দ্র করেই আবার রমনার আভিজাত্য ফিরে আসে। ১৮৪০ সালের দিকে বিত্তবানেরা এ এলাকায় বাগানবাড়ি করতে থাকেন। পরে নবাব আবদুল গনি এসব বাগানবাড়ির মধ্য থেকে অবসরপ্রাপ্ত জজ জন ফ্রান্সিস গ্রিফিথের বাড়িটি ক্রয় করেন। এলাকাটিকে তারাই উন্নত করে তখন তার নাম দেন শাহবাগ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর মোগলদের রমনা তিন ভাগ হয়ে যায়। নবাবদের মালিকানায় থাকে শাহবাগ এলাকা। উত্তর দিকে মিন্টো রোডে হয় সিভিল স্টেশন নামে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা। মাঝখানে রেসকোর্স ও বর্তমানের রমনা উদ্যান মিলিয়ে করা হয় রমনা এলাকা। রেসকোর্সে পাকিস্তান আমলেই আইন করে ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একসময় রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৬১০ থেকে ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি বা বাদশাহি বাগান। ১৯২৫ সালে এ স্থানটি ঘোড়দৌড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। তাই এর নাম হয় রেসকোর্স ময়দান। ১৯৭১ সালে এর নামকরণ হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১৯৯৬ সালে এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিখা চিরন্তন স্থাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা গত ২০১৫ সালে শেষ হয়।
রাজধানীর রমনা পার্কের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নেওয়া হয়। যার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ৯৮ হাজার ব্যয়ে গত ২০১৯ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ওই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০২০ সাল তার পরও বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রকল্পের কাজ। নতুন বছরে কবে শেষ হবে তা কোনো ভাবেই বলছে না সংশ্লিষ্ট্র কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। জুন মাস পর্যন্ত এ কাজে অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। বৈঠকে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে উন্মুক্ত কফিশপ নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। রমনা পার্কের ভেতরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ওই কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এবিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক জামিলুর রহমান কিছু ভুল সংশোধন করে কাজ করা হবে। প্রকল্পের কাজ চলামান রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন