বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে ১২৫ পরিবার। বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে বসবাসরত অসহায় এ পরিবারগুলো একধরনের বন্দিজীবন কাটাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বন্দি দশা থেকে বের হতে পারছে না তারা।
২০০৭ সালের ১১ই নভেম্বরের আগে এই জায়গাটি ছিলো উন্মুক্ত। পরে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গ্রামের পাশ দিয়ে নির্মাণ করে উচু প্রাচীর। ফলে আটকা পড়ে যায় এসব পরিবারগুলো। নিজেদেরকে বন্দি দশা থেকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের বাধার মুখেও বাধ্য হয়ে বন্দরের প্রাচীর কয়েক জায়গায় ভেঙে যাতয়াত শুরু করে তারা। সেক্ষেত্রে অসুস্থ্য রোগী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ ছোট শিশুদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
তাছাড়া রাত হলেই শুরু হয় ভারত থেকে আমদানিকৃত লোহা ও লৌহ জাতীয় পণ্যের লোড আনলোডের বিকট শব্দ। যে শব্দের কম্পন শুরু হয় সারা এলাকাজুড়ে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ও ছোট শিশুরা থাকে ভয়ে আতঙ্কে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী কয়েকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়ে মানবিক আবেদন করলেও তা কোন কাজেই আসেনি। প্রাচীর সরাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী কয়েকবার। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দি বসবাসকারীদের পক্ষে তাদের আশু সমাধান চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করলেও তার কার্যকর হয়নি। কবে নাগাদ এর সমাধান হবে তারা তা নিশ্চিত জানেন না।
ওই এলাকার বাসিন্দা পার্শ্ববতী বসবাসকারী ইসরাইল সর্দার জানান, আমরা দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকের ইঞ্জিনের কালো ধুয়ায় বায়ু দূষণ, শব্দদূষণ তো নিত্যদিনের ঘটনা। এদিকে বন্দরে ভারী জাতীয় মালামাল ও লৌহজাত পণ্য সামগ্রী লোড আনলোডের ফলে বসবাসকারীদের বাড়িঘরে প্রচন্ড ঝাঁকুনিসহ উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক লিটন জানান, এলাকা ছেড়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। বাড়িতে এখন আর ভাড়াটিয়ারা থাকতে চায় না। অনেক বাড়ি ভাড়াটিয়ার অভাবে ভুতুড়ে অন্ধকারে পড়ে আছে। তবে জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে ও বন্দরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই এলাকার জমি অধিগ্রহণ করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে।
যশোর পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, বন্দি জনগণ ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত টিম কাজ শুরু করেছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ আমরা ইতিমধ্যে আবেদনের মাধ্যমে পেয়েছি এবং বন্দরর উপরিমহলে বিষয়টি জানিয়েছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী জানান, বন্দরের (টিটিআই) পশ্চিম পার্শ্বে ৬৫টি পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিত মানুষের সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। বন্দরের প্রাচীর নির্মাণের ফলে তারা আটকা পড়েছে। এ এলাকাটির সমস্যা সমধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকাবাসী তাদের বন্দিজীবন দশা থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন