শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

সামাজিক কর্মনীতিতে ওয়াদার গুরুত্ব

মু. সায়েম আহমাদ | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাটাই মূল লক্ষ্য। আমরা সমাজে বসবাস করছি। এই সমাজে আমরা নানা ধরনের কাজ করে থাকি। তম্মধ্যে ওয়াদা পালন অন্যতম। ওয়াদা পালন ইসলামের অন্যতম একটি অধ্যায়। ওয়াদা শব্দের অর্থ, অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলতে গেলে, কারো সাথে কোন অঙ্গীকার করলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। সামাজিকভাবে প্রকৃত মানুষ চেনা যায় ওয়াদা পালনের মাধ্যমে।
ওয়াদা পালনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সমাজে সম্মানী ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। মানুষের চরিত্রগত দিক বুঝা যায় ওয়াদা পালনের মধ্য দিয়ে। তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে কতিপয় ব্যক্তি রয়েছে যারা কিনা ওয়াদা পালন না করে ভঙ্গ করে থাকেন। এতে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় এবং অবিশ্বাসযোগ্য মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়। সমাজে সে যত বড়ই সম্মানী ব্যক্তি হোক না কেন। সবাই তাকে ঘৃনার চোখে দেখে। ওয়াদা পালনের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ করো। (সূরা-মায়েদা : ১)।
অন্যত্র আয়াতে বলা হয়, আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং পাকাপাকি কসম করার পরে তা ভঙ্গ করো না। আর এই ব্যাপারে তো তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আন-নাহল: ৯১)। পবিত্র কুরআনে যেমন ওয়াদা পালনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি হাদীস শরীফেও ওয়াদা পালনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তারমধ্যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে রাসূল (সাঃ) এর ওয়াদা পালনের জন্য তিন দিন একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়াত লাভের পূর্বে একদা আমি তার কাছ থেকে কেনাকাটা করি। যার কিছু মূল্য পরিশোধ করতে বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তার সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি অবশিষ্ট দাম নিয়ে তার নির্ধারিত স্থানে এসে হাজির হবো। আমি এই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিনদিন পরে আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম তিনি সেই নির্দিষ্ট স্থানে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিনদিন যাবত তোমার অপেক্ষা করছি। ( আবু দাউদ)।
উক্ত হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় রাসুল (সাঃ) ওয়াদা পালনে কত সোচ্চার ছিলেন। এর থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আর অথচ আমরা খেয়াল তামাশায় ওয়াদা ভঙ্গ করে ফেলি। আমরা ছোট কিংবা বড়দের দুষ্টামির ছলে বলে থাকি, তোমাকে আমি কিছু দেবো। আর যদি তা পালন না করা হয় তাহলে অবশ্যই গুনাহগার হবে।
এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন। তখন রাসূল (সাঃ) আমাদের ঘরে বসা ছিলেন। মা বললেন, এদিকে এসো। তোমাকে আমি কিছু দিব। তখন রাসূল (সাঃ) মাকে বললেন। তুমি তাকে কি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছো? তিনি বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছা করেছি। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা কথা বলা লেখা হতো। (আবু দাউদ)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন