মনোমুগ্ধকর ড. এমএ ওয়াজেদ ভবন, টিএসসির গ্রুপ স্টাডি, অডিটোরিয়ামের মঞ্চে সাংস্কৃতিক কর্মকা-, ক্যাফেটেরিয়ার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, ফলের মৌসুমে লিচুর সমারোহ, খেলার মাঠে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, পহেলা বৈশাখে ভিসি স্যারের সাথে ফটোসেশন, শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা, হলে বসবাস, গবেষণা ল্যাব ও ফিল্ডে নিরলস শ্রম,বন্ধুদের সাথে মনমাতানো আড্ডায় জীবন যেন এক অন্য দিগন্তে মোড় নিয়েছে। সত্যি বলতে কি, স্কুল ও কলেজের জীবন পাড়ি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যে গভীরতা তা একটু একটু করে অনুভব করতে শুরু করেছি। মা-বাবার শাসন নেই, নেই প্রতিবেশীর কটূক্তি। কিন্তু জীবনের গুরুদায়িত্ব যেন নিজের কাধেই। এ উপলব্ধি হয়তো বৃহত্তর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হলে পাওয়াই হতো না। এ অনুভূতিগুলো মনের অবলীলায় ব্যক্ত করল চলতি শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান।
ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর ক্যাম্পাস বর্ণনায় বলেন, আমরা প্রথম বর্ষে লাইব্রেরিমুখী ছিলাম না। টিএসসির অবস্থাও ছিল নাজুক। এখনকার মতো টিএসসিতে ছিল না গ্রুপ স্টাডির আসর। হলের ডাইনিং চালু হওয়ায় এখন আর হোটেলে খেতে হয় না। অকেজো খেলার মাঠে ফিরেছে প্রাণের সঞ্চার। সম্প্রতি সম্প্রসারণকৃত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে সংগৃহীত হাজারো মুক্তিযুদ্ধের বই দেশ স্বাধীনের ইতিহাস জানার অফুরন্ত সুযোগ এনে দিয়েছে। রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম, মালিহা, অনন্যারা তো একধাপ এগিয়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, দুর্ভোগে পড়ি নাই সেশনজটের। আধুনিকায়নকৃত লাইব্রেরির সমৃদ্ধ ও দুর্লভ বইয়ের সমাহার পড়াশোনাকে করেছে গতিময়। পূর্বের চেয়ে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক বেশ ভালো। কমেছে হলের আবাসন সমস্যা। নিজেদের যুক্ত করার সুযোগ পেয়েছি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। টিএসসির সম্প্রসারণে গত বছরের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকা-। মেডিকেল সেন্টারে পাচ্ছি অভিজ্ঞ ডাক্তার ও রোগ শনাক্তকরণের সুযোগ। গত মাস থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পর ক্যাম্পাস টু শহরে বাস সার্ভিস যোগ করেছে নতুন মাত্রা। উন্নয়নের ছোঁয়ায় বর্তমানে আলোকিত আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাস।
প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী গাউসুর রহমান আলাল বলেন ভিন্ন কথা। ২০১০ সালে ৬টি অনুষদে আমরা ৬০০ জন ভর্তি হয়েছিলাম। গত বছর থেকে ৯টি অনুষদের ৪৩টি বিভাগে প্রথম বর্ষের দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে ২০০০ জন। শেসনজট দিয়ে শুরু করা ক্যাম্পাস জীবনে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। তেমন সুযোগ ছিল না খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের। মেডিকেল সেন্টারে ছিল না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা।
কৃষি অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সনেট। ক্যাম্পাসের উন্নয়ন তাকে মুগ্ধ করে। ২০০৭ সালে ৩৭৫ জন ভর্তি হয়, যা এখন ২ হাজার ছাড়িয়েছে। আগে শুধু নেপাল থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসতো। শুনেছি এখন ভারত, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, জিবুতি ও ভুটান থেকেও ছাত্র ভর্তি হয় আমার এ প্রিয় ক্যাম্পাসে। সত্যিকার অর্থে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে আলোকিত এ ক্যাম্পাস। নেপাল থেকে আসা শিক্ষার্থী অমিত বলেন, তিন বছর ধরে এ ক্যাম্পাসে দেশ ছেড়ে পড়াশোনা করছি। পড়াশোনার মান ও পরিবেশ খুব ভালো অনুভব করছি। সত্যি বলতে কি, যেন দেশেই আছি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও হাবিপ্রবির তরুণ শিক্ষক মো. নাহিদ সুলতান বলেন, চাকরিতে যোগদান করেছি প্রায় ৮ মাস। ক্যাম্পাসের সম্প্রসারিত ইউটিলিটি ভবনে থাকার সুব্যবস্থা হয়েছে। চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ। দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এ ক্যাম্পাস হতে চলেছে বিশ্বমানের আলোকে ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. রুহুল আমিন বলেন, ক্যাম্পাসে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে একাডেমিক উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্তমানে আবাসিক সুবিধা, শিক্ষার্থীদের হল, প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন সম্প্রসারণমূলক কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এ ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
ষ শাহীন আলম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন