সুফিয়ে কেরামগণ দৈনন্দিন আবশ্যকীয় ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত আমলের পাশাপাশি জিকিরের আমলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্বরণ করে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্বরণ করেনা; উভয়ের মধ্য আকাশ-পাতাল ব্যাবধান রয়েছে। সুফিয়ে কেরামগণ এক মূহুর্তের জন্যও আল্লাহর স্বরণ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চান না। হযরত আবু মূসা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার জিকির করে আর যে জিকির করে না, তাহাদের মধ্যে উভয়ের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মত।’ (বোখারি:৮/৬৪০৭)।
জিকিরের আমল আল্লাহর সাথে বান্দার সংযোগ সৃষ্টি করে। তাই সুফিয়ে কেরামগণ সব সময় আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। এছাড়া তারা তাদের আশেক-ভক্ত মুরীদের জিকিরের আমলের ওপর বেশি বেশি তালিম দিয়ে থাকেন। সুফিরা মোরাকাবা অবস্থায় জিকির করা ছাড়াও প্রতিদিন বাদ এশা এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পরবর্তী সময়ে আল্লাহু আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহু, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইল্লাল্লাহ, লা মাকসুদা ইল্লাল্লাহ, লা মওজুদা ইল্লাল্লাহ, লা মাবুদা ইল্লাল্লাহ, হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ ইত্যাদির শব্দ বা বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহকে স্বরণ করে থাকেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিন! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমান স্মরণ কর।’ (সূরা আহযাব: ৪১)। অপর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সূরা বাকারা:১৫২)।
মোমিন বান্দার কালব একটি আয়না সদৃশ বস্তুু। আর আল্লাহতায়ালার জিকির এমন একটি কর্ম, ইহার আমল বান্দা যতোই করতে থাকবে, ততোই তার কালবের রৌশন বৃদ্ধি পেতে থাকে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে তাদের অন্তঃকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরই অন্তর সমূহকে প্রশান্ত করে।’ (সূরা রা’দ:২৮)। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করে এবং তাহার ঠোঁঠ আমার স্মরণে নড়চড়া করিতে থাকে তখন আমি তাহার সঙ্গে থাকি।’(মু.খা. ইলম ও জিকির: ১৩১)।
জিকিরের ফজিলতের গুরুত্ব সামান্য দু’চার লাইন লেখা মাধ্যমে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘যে জামাত আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল হয় ফেরেশতারা উক্ত জামাতকে ঘিরিয়া লন, রহমত তাহাদিগকে ঢাকিয়া লয়, তাহাদের উপর সকীনা (বিশেষ রহমত) নাজিল হয় এবং আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মজলিসে তাহাদের আলোচনা করেন ।’(মু.খা. ইলম ও জিকির:১৫২)। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আর যে আমার জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়।’ (সূরা ত্বা-হা:১২৪)।
আমাদের দেশে সুফিয়ে কেরামগণের খানকা শরীফ গুলোতে এবং বিভিন্ন মাজার শরীফে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক জিকিরে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কেউ কেউ বৃহস্পতিবারে বাহিরে তাদের সুবিধা মত সপ্তাহের অন্যান্য দিন জিকিরের মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। সুফিয়ে কেরামের ন্যায় আমাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত আমলের পাশাপাশি তাঁর জিকিরে মশগুল থাকার তৌফিক দান করুক। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন