রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জিকির : আল্লাহপাকের স্মরণ

মুফতি মুহাম্মাদ আবু জাফর | প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মরুভ‚মিতে এক মেষপালকের নিকট এসে এক নিঃসঙ্গ পথিক আবেদন করলেন, ‘আমি ক্ষুধার্ত, খাবার বলতে আমার কাছে কিছুই নেই; আমি কি তোমার একটি মেষ থেকে কিছু দুগ্ধ দোহন করে নিতে পারি’? মেষপালক বলল, ‘আমি তো এই মেষের মালিক নই; সুতরাং মালিকের অনুমতি ছাড়া কাউকে দুধ দোহন করতে দিতে পারি না।

মালিক নিশ্চয়ই জানতে পারবে এবং সে এটা পছন্দ করবে না’। আসলে পথিকের মনে ছিল অন্য খেয়াল। তিনি বললেন, ‘তুমি বরং আমার কাছে একটি মেষ বিক্রয় করে দাও। মালিক যখন জানতে চাইবে, তুমি বলবে যে, একটি নেকড়ে বাঘ এসে মেষটিকে ধরে নিয়ে গেছে।

নেকড়েরা তো পশুপালগুলোতে প্রায় সময়ই হানা দেয়। আমিও আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারব, আর তুমিও টাকা পাবে, আমাদের দু’জনেরই লাভ হবে’। মেষপালক অত্যন্ত জোরালোভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর ব্যাপারে কী হবে’? অসাধারণ! এই কথা শুনে পথিক ব্যক্তিটি আনন্দিত হয়ে বলল, ‘যতদিন পর্যন্ত উম্মাহর মধ্যে তোমার মতো মানুষ থাকবে, নেকড়েরা কখনো কোনো মেষকে আক্রমণ করবে না’।

মেষপালকের এটা আদৌ জানা ছিল না যে, সে যার সঙ্গে কথা বলছে, তিনি আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর রা., যিনি মানুষের হৃৎস্পন্দন অনুভব করার জন্য সর্বদা সক্রিয় থাকতেন। আসলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ হলো একজন মুমিনের স্বতঃস্ফ‚র্ত ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং একজন মুমিনের নিকট থেকে এই রকম মন্তব্যই স্বাভাবিক; কারণ সে জানে, আল্লাহকে স্মরণ করার কী মূল্য!

আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সর্বত্রই নেকড়েরা কেমন অবাধে মেষগুলোকে হত্যা করে চলেছে। কারো অজানা নয়, মুসলিম-বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই দুর্নীতি আজ একটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু কেন? কারণ হলো, আল্লাহকে স্মরণ রাখার মধ্যেই-যে পাপ ও দুর্নীতির প্রতিরোধ নিহিত, এই সহজ কথাটি আমরা অধিকাংশ মানুষ আজ বিস্মৃত হয়েছি।

আমাদের ইহজীবনের এই সফর সম্পর্কে কোরআন বলছে, এটা একটা ক্রমাগত পরিশ্রমের সফর, যার শেষে আমরা আমাদের মহান স্রষ্টার সাক্ষাতলাভে ধন্য হব।

হে মানুষ, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছ; অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাত লাভ করবে’। (সূরা ইনফিতার : ৬)

যে-ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে, সে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে গন্তব্যের প্রতি। এই সফর খুবই শ্রমসাধ্য এবং এখানে চিত্তবিক্ষেপের সম্ভাবনাও বড় বেশি। শয়তান এবং আমাদের প্রবৃত্তি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে আমাদেরকে বিপথগামী করতে। কিন্তু যারা সতর্ক ও জ্ঞানী, তাদের দৃষ্টি কখনোই গন্তব্য ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না; এবং এরাই তারা, যাদের অন্তরে সর্বদা আল্লাহর কথা জাগরুক।

‘নিঃসন্দেহে, আসমানসমূহ ও যমীনের এই নিখুঁত সৃষ্টি এবং দিবারাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য পর্যাপ্ত নিদর্শন রয়েছে। (আর এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় সর্বদা আল্লাহপাক-কে স্মরণ করে’। (সূরা আল ইমরান : ১৯০-১৯১)।

আল্লাহর স্মরণ অথবা ‘যিকির’ মুসলমানদের জন্য শক্তির একটি উৎস। ‘হাদীসে কুদ্সী’-তে আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমি আমার বান্দার সঙ্গে ততক্ষণ থাকি যতক্ষণ সে আমাকে স্মরণ করে’। (সহীহ বুখারী হাদীস : ৬৮৫৬)

এটা এজন্য যে, অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগি এবং যিকির-এর মধ্যে একটা পার্থক্য বিদ্যমান। অতিমাত্রায় আনুষ্ঠানিক ইবাদতের তেমন আবশ্যকতা নেই; এক্ষেত্রে কারো ইবাদত মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না ওঠে সে বিষয়ে বরং সতর্কই করা হয়েছে। কিন্তু যিকির যেন বেশি-বেশি করা হয়, এই বিষয়টির প্রতি এমনভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে, যাতে আমাদের অন্তর ও জিহŸা সততই আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থাকে।

আমরা যেন কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ও উদাসীন হয়ে না পড়ি। আর এই কাজে আমরা ক্লান্ত হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতবাসীদের মনে কোনো কারণেই কোনো দুঃখ থাকবে না; দুঃখ শুধু একটা কারণেই হবে, তা হলো পার্থিব জীবনের যে মুহূর্তগুলো তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহ পাকের স্মরণ থেকে উদাসীন ছিল।’ (তবারানী-২০/৯৪)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Muhammad Asadul Islam ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 3
মানুষের আত্মিক, শারীরিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি আনে একমাত্র রাব্বুল আলামীনের স্মরণে।
Total Reply(0)
Md Syed Alam ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 1
যাবতীয় দুঃখ বেদনা ও দুশ্চিন্তা নিরাময়ের একমাত্র যিয়নকাঠি তাঁরই যিকর। প্রকৃত মুমিনগণ অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকে। সে দেখে আল্লাহর কুদরত, স্মরণ করে তার প্রভুকে, গ্রহণ করে ঈমানী স্বাদ। আল্লাহকে জানে সব সময় হাজির-নাজির। সদরে-নীরবে আগমনে-প্রস্থানে সব সময় তাঁর হুকুমের স্মরণ করে। কারণ তিনিই তার সাহায্যকারী, ভরসাস্থল ও অভীষ্ট। যিকরের মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা লাভ করা যায়। চিরশত্রু শয়তান পালায়, ফেরেস্তা সাথী ও বন্ধু হয়ে সাহায্য করে সব সময়। মূলত যিকর ইবাদাত।
Total Reply(0)
Khan Ifteakhar ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
আল্লাহর যিকর সম্পর্কে কুরআনে আজীম : আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহর। কারণ ‘আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ, (২৯:৪৫)।
Total Reply(0)
H.M. Abu Bakar Siddik ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদিগকে স্মরণ করিব, (২:১৫২)। ‘যাহারা দাঁড়াইয়া, বসিয়া ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকর করে, তাহারা বুদ্ধিমান।’ (৩:২১)। যারা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকরকারী পুরুষ ও নারী হবে, আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদিন, (৩৩:৩৫)। ‘হে ঈমানদারগণ অধিক পরিমাণে আল্লাহ পাকের স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় তার তাসবীহ কর’ (৩৩:৪১)।
Total Reply(0)
H S M Fayaz ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
আল্লাহর যিকর সম্পর্কে রাসূল (সা.) : যে আল্লাহর যিকর করে এবং যে তাঁর যিকর করেনা, তাহাদের তুলনায় জীবিত ও মৃতের ন্যায়, (বুখারী ও মুসলিম)। ‘যে গৃহে আল্লাহর যিকর হয় এবং যে গৃহে আল্লাহর যিকর হয় না, ওই গৃহের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের ন্যায়, (ফাতহুল বারী )।
Total Reply(0)
Cold N Stone ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দাহ আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি ঠিক তেমন ধারণা করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও আমার মনের মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে কোন সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে এর চেয়ে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি..., (বুখারী, মুসলিম)।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
নামাজ দ্বারা বান্দাকে স্মরণ করানো হয় : মানুষ প্রকৃতপক্ষে যার বান্দাহ সে তো তার চোখের আড়ালে। পক্ষান্তরে শয়তান নিজেই মানুষের নাফসের মধ্যে উপস্থিত থেকে সদা বলতে থাকে, তুমি আমার বান্দাহ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন