এ পৃথিবীতে মানুষের জীবন সময়ের সমষ্টি দ্বারা তৈরী। সময় মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহ্র কাছে সময় একটা মূল্যবান বিষয়। তাই তিনি সময় বা মহাকালের শপথ করেছেন। (সূরাঃআস্র) আল্লাহ নিজে সময় মেপে অনেক কিছু করেন, করেছেন, করবেন। তাই বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন বিধান দিয়ে (কেতাব) পৃথিবীতে নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাই, আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক সময়ের জন্য রয়েছে বিধিবদ্ধ বিধান।” (সূরাঃ রাদ) এ থেকে বুঝা যায় পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ের কোন একটা কেতাব সকল কালের সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে নাই। তাই, সময়ের আলোর সাথে ধর্মকে যুগপযোগী করতে বা কোন কাজ করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা সময়কে গালি দেই। তাই, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন; আদম সন্তান সময়কে গালি দিয়ে আমাকে দুঃখ দেয়। অথচ আমিই সময়। আমার হাতে শক্তি আছে। আমি দিন রাত্রির পরিবর্তন ঘটাই।” (বুখারী, মুসলিম)
আবু বাকারা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ নবী (সাঃ) বলেছেন;“আল্লাহ যেদিন আকাশ সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সেদিন কাল (এর আবর্তন) যেরুপ ছিল; (বছর) আবর্তিত হতে হতে আজও তা সে অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে।” এ সব বুঝার জন্য প্রয়োজন, “সময়ের আলো বা জ্ঞান ও বিজ্ঞান।” আমাদের স্থুল দৃষ্টিতে সময়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে তিনটি সময় বা কাল চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে কাল একটাই সেটাতে ভুত ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। অনেকে সেটাকেই বলে “মহাকাল”। কথায় বলে; “আল্লাহ’র ‘মা’র’ দুনিয়ার ‘বার’। ইতিহাসের ধারায় বারে বারে আল্লাহ’র এই ‘মা’রই’ মিথ্যাকে দূর করে সত্যকে পথের আলোকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। আমরা; আল্লাহর ‘মা’র’ দেখি না-ফলাফল শুধু দেখি। আল্লাহর এই মার কিন্তু প্রকারান্তরে সময় বা মহাকালেরই মার।
আধুনিক বিজ্ঞানের মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং সময় একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল। তাই, অধিকাংশ বিজ্ঞানী বিশ্ব সৃষ্টি প্রক্রিয়ার “মহাবিষ্ফোরণ) তত্ত¡কে স্বীকার করেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের-তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিফেন হকিং এর ভাষায় “দেড় হাজার কোটি বছর পূর্বে মহাবিশ্ব ধারণাতিতভাবে সংকুচিত ও ঘনীভূত ছিল এবং এর পুর্বে আমরা যে সময়কে গণণা করি তার অস্তিত্ত্ব ছিল না।” নোবেল বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফিনম্যান বলেছেন, “আমরা পদার্থ বিজ্ঞানীরা প্রতিদিনই সময়কে নিয়ে কাজ যাচ্ছি, কিন্তু সময় যে আসলে কি তার সদুত্তর দেয়া ধারনাতীত ভাবে অসম্ভব।”
আহাদ (আল্লাহ্) ও আহ্মদের রাসূল (সাঃ) নূরের বা আলোর মিলনের ফলে সৃষ্ট মহাবিষ্ফোরণ এ যে আলোক রশ্মি বা তেজস্ক্রিয়তা সমস্ত বস্তুতে প্রবেশ করে সে সব বস্তুর আত্মা বা জীবন সীমা পরিমাপের আধ্যাত্মিক মিটার। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন আহাদ। এটা প্রতিটি সৃষ্টির জন্য পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে। এটাই সময় বা মহাকাল। এটা আল্লাহ্র বিভিন্ন সৃষ্টি জগতে বিভিন্ন।
একটা মিনিটকে জন্ম বা সৃষ্টি দেয়ার জন্য সেকেন্ডের মৃত্যু ঘটছে, আর মিনিটের অবসান বা মৃত্যু ঘটছে ঘন্টাকে জীবন দেয়ার জন্য। প্রতিটি ঘন্টার মৃত্যু ঘটছে একটা দিনকে জন্ম দেয়ার জন্য। মানব জীবন ও তাই। একই দেহের উপর আত্মার উপর সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টার আবর্তণ, এসে জীবন মৃত্যুর প্রক্রিয়া। মৃত্যু একটা প্রক্রিয়া যার স্থান এ পৃথিবীর উপর। একবার মৃত্যুর পর আর এর অস্তিত্ব নেই। মহাকালে এর অবস্থান। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কিছুই মরছে না, শুধু সময় বা মহাকালের বিবর্তণ পরিবর্তন প্রক্রিয়া মাত্র। বিজ্ঞান ও তাই বলে যে, বস্তু ধ্বংস হয় না অন্য বস্তুতে রূপান্তর হয় মাত্র। মৃত্যুর পর যেসব প্রশ্ন করা হবে তা এ সময় এর পরিমাপ, কারণ সময়ের সমষ্টি দ্বারাই জীবন মৃত্যুর ব্যবধান।
আত্মা ও দেহের উপর মৃত্যু একটা সময়ের প্রক্রিয়া মাত্র। যা মহাকালের সাথে (সময়ের) জীবনকে যুক্ত করে। সেকেন্ড, মিনিট ও ঘন্টা মহাকালের সমষ্টি মাত্র। এরা মরে না-মহাকালে গিয়ে অমরত্ব লাভ করে। তাই, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন; “আমি মহাকাল যা সব কিছুকে গ্রাস করে।” এ সবই আহাদ ও আহ্মদের সৃষ্টি ও প্রেম রহস্য।
সময় মাপার জন্যে আমরা গতিকে ব্যবহার করি, সেই গতি যদি আপেক্ষিক হয় সময়ও কি আপেক্ষিক? বৈজ্ঞানিক নিউটন এ প্রশ্নকে প্রশ্রয় না দিয়ে বলেন, “গতির হ্রাস বৃদ্ধি ঘটতে পারে কিন্তু সময় নিরপেক্ষ ভাবে অপরিবর্তী ধারায় প্রবাহিত। সময়ের গতিধারার কোন রদবদল ঘটে না। গতি দিয়ে সময় মাপা যেতে পারে কিন্তু সময়ের সঙ্গে গতির কোন তাত্ত্বিক সম্পর্ক নেই।
আলোর কোন আকার নেই। আত্মা ও জ্ঞান অদৃশ্য আলো। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার কবরে,আমার সম্মুখে ও পশ্চাতে আমার ডাইনে,বামে, উর্ধ্বে ও অন্তস্থলে আমার কর্ণে, আমার চোখে, আমার কেশে, আমার চর্মে, আমার মাংস, রক্ত ও অস্থিতে আলোক দান কর। হে আল্লাহ! আমার জন্য আলো বৃদ্ধি কর, আমাকে আলোক দান কর এবং আমাকে জ্যোতির্ময় করে।” (তিরমিযি)
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“আল্লাহ নিজেই আসমান জমিনের আলো”। তাই, ধর্মকে সময় জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোয় এগিয়ে নিতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন আসে মানুষের জীবন চলার পথে আলোটা কিসের হবে? সময়ের আলো, ইতিহাসের আলো? এই আলোয় আমরা অতীতকে দেখি, বর্তমানে পথ চলি। বুঝতে পারি কোনটা সত্য সুন্দর ও সময়ের গতিময় পথ।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত হিসাব কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন