শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নারায়ণগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ রেলওয়ের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কমিটির পরিদর্শন

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৩০ পিএম

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই নারায়ণগঞ্জ শহরে শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী এলাকার জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল সরকারেরই দু’টি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মধ্যে। বিশেষ করে হাইকোর্টের নির্দেশে সিএস জরিপ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীতে নতুন সীমানা পিলার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হলেও নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন স্থানে পিলার স্থাপনে বাধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেই বাধা প্রদানকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকযুদ্ধসহ হাতাহাতির ঘটনা এবং মসজিদের মিম্বারও সীমানা পিলার ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেই বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে ৫ সংস্থার সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। উভয়পক্ষের মধ্যকার বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে অবশেষে ১৮ ফেব্রæয়ারী বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সেই কমিটির সদস্যরা।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার, রেল মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব সাইদুর রহমান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা, বিআইডবিøউটিএ’র পক্ষে ছিলেন সদস্য (পরি:পরি:) দেলোয়ার হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী মহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক (বন্দর) সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল, নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নূর হোসেন, রেলওয়ের পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও উপ সচিব (ডেপুটি কমিশনার) নজরুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন, ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান, কানুনগো ইকবাল মাহমুদ প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রæয়ারীতে নদীকে জীবন্ত সত্বা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর গত বছরে শীতলক্ষ্যা নদীতে সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) পদ্ধতিতে সিএস জরিপ মোতাবেক শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ^রী নদীর উভয়তীরে ২ হাজার ৪০০ টি নতুন সীমানা পিলার স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। তবে গত অক্টোবরের শুরু নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন করাকালীন সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিরোধ। যার মধ্যে সীমানা পিলার ভেঙ্গে ফেলাসহ মসজিদের মিম্বারও ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ ওঠে রেলওয়ের বিরুদ্ধে। পরে গত ১১ জানুয়ারী নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব মো: আমিনুর রহমান একটি নোটিশ প্রেরণ করেন। যাতে উল্লেখ করা হয়, রেলপথ মন্ত্রনালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআইডবিøউটিএ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সরেজমিনে শীতলক্ষ্যা নদীর ফোরশোর বা তীরভূমিসহ লীজকৃত সম্পত্তি জায়গা পরিদর্শন করবেন। উক্ত কমিটি পরিদর্শন না করা পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ওই নোটিশের প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রæয়ারী দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শনের আগে তারা নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে মিটিংয়ে বসেন। এসময় উভয়পক্ষ তাদের কার্যক্রম ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে জানান, ডাবল রেল লাইনের প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তারা তাদের জমিতেই ডাবল রেললাইনের প্রকল্পের কাজ করছেন বলে জানান। অপরদিকে বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে সিএস জরিপ অনুযায়ী তাদের সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের লোকজন তাদের সীমানা পিলার ভেঙ্গে দিয়েছে। তাদের স্থাপনাও ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছে সিএস জরিপের নকশা রয়েছে যাতে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষরও রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে বিআইডবিøউটিএ নদীর জায়গা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তারা বিআইডবিøউটিএর ভিআইপি সম্মেলন কক্ষে সভায় বসেন। এসময় তারা উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। এ বিষয়ে বিআইডবিøউটিএ'র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, কমিটির সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন। তারা উভয়পক্ষকে কাগজপত্র জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর তারা আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। পরে মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও উপ সচিব (ডেপুটি কমিশনার) নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটির সদস্যরা উভয়পক্ষকে তাদের কাগজপত্র অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কাছে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্টের রায় ও কাগজপত্রের বিচার বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট দিবেন। সেই রিপোর্টের আলোকে কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন