শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

‘ধর্মদ্রোহী নাস্তিক-রোধে আস্তিকেরা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’- নেছারাবাদী হুজুর

ঝালকাঠি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২২ পিএম

ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী নেছারাবাদ দরবার শরীফে শেষ হলো দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ঈছালে সওয়াব ও মাহফিল। বুধবার ফজরের নামাজের পর জিকির, বয়ান এবং আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের (রহ.) একমাত্র ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর। আখেরী মোনাজাতে করোনা মহামারীতে মৃত্যবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এ মহামারী থেকে গোটা বিশ্বকে মুক্তির জন্য দোয়া করেন নেছারাবাদী হুজুর। এন এস কামিল মাদ্রাসা চত্বরে আখেরী মোনাজাতে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন।

এর আগে বাদ ফজর প্রধান অতিথির সমাপনী বয়ানে আমিরুল মুসলিহীন বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির উপকারের নিমিত্তই মুসলমানদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে জাহির করেছেন, যেন তাঁরা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন স্বরূপ মানবজাতির উপকারে ইসলামী ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি ইসলামের দৃষ্টিতে যা অপরাধ ও দুর্নীতি তার প্রতিরোধ করে।

নেছারাবাদী হুজুর বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, আমাদের সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভুত দুর্নীতি-দুষ্কৃতি, সুদ-ঘুষ, মদ-নেশা, বেপর্দেগী, বেলেল্লাপনা, নারী-অধিকারের নামে পাশ্চাত্যকেন্দ্রিক মোয়ামেলা-ব্যভিচার, অশ্লীল আবেদনে ঠাসা আকাশ-সংস্কৃতি ও আনুগত্যহীনতা-রাষ্ট্রদ্রোহীতার মতো অপরাধগুলো নাস্তিকতার দ্বারা সর্বত্রই এতোটা প্রসারিত ও পরিব্যাপ্ত হয়েছে, যা সকল ধর্মানুসারীদেরই বিপক্ষে কাজ করছে। একজন মুসলমান হিসেবে, একজন আস্তিক হিসেবে মানবতার দাবীদার কোনো মানুষই তা মেনে নিতে পারে না।’

আমীরুল মুছলিহীন বলেন, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের যেখানেই বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার মূলেই রয়েছে নাস্তিক্যবাদীতা। নাস্তিকরা সরকারে থাকুক আর বাইরে থাকুক তারা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থে সরকারের সঙ্গে নাগরিকের, ধর্মের সঙ্গে ধর্মের এবং দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য নস্যাতে সর্বদাই একেরপর এক চক্রান্তে লিপ্ত হয় যা আমরা এদেশের বাস্তবতায়ও বারবার লক্ষ্য করে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘একটি কল্যাণ-রাষ্ট্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন সেখানে সর্বশ্রেণির মানুষের শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্যরে মধ্য দিয়ে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা পায়। এই কারণেই আমরা সাহাবায়ে কেরাম ও আওলিয়ে কেরামের জীবনে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার উদাহরণ দেখি। হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠির ‘আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদ’ তো এখনও গোটা দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অনন্য নযীর হয়ে আছে! আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, নাস্তিক্যবাদীতাই আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের প্রধান বাধা ও অশান্তি-বিশৃঙ্খলার জন্মদাতা। অতএব, সর্বপ্রকার নীতিহীনতা, মেধাহীনতা ও অসভ্যতার প্রতিরোধে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ধর্মদ্রোহী নাস্তিক রোধে আস্তিকদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেছারাবাদী হুজুর।

মাহ্ফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রব, ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ স্বনামধন্য আলেমে দ্বীন গাজী মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, শায়খুল মুফাস্সের মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রীছ আলী, প্রখ্যাত মুহাদ্দেস ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দীক, খতীব ও মুফতী হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদির আল-মাদানী, শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রমুখ। দুই দিনব্যাপী মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির ও পৌর মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার।

৬ দফা প্রস্তাব পাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত নেছারাবাদ দরবার শরীফের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ঈসালে সওয়াব ওয়াজ মাহ্ফিল। দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক পর্যায়ের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গসহ কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সম্পন্ন আখেরী মুনাজাতের আগে এ ৬ দফা পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ (মতানৈক্যসহ ঐক্য) নীতির ভিত্তিতে পীর-মাশায়েখ-ওলমাদের ঐক্য, ইফরাত-তাফরীত তথা উগ্র ও শিথিলপন্থীদের বর্জন, ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের প্রতিরোধে আস্তিকদের একাত্মতা, বেপর্দেগী-বেলেল্লাপনা-অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতি রোধ, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেবার আহŸান ও পীর-মাশায়েখদের প্রতি কটুক্তিকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী।

উল্লেখ্য, ঝালকাঠি নেছরাবাদ দরবারের মাহফিল গতানুগতিক ধারার কোনো ওয়াজ-নসীহতে সীমাবদ্ধ নয় বরং ব্যক্তিকে ইসলামী জিন্দেগী গঠনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহঅলা হিসেবে তৈরির এক মহা-আয়োজন বিধায় দল-মত-ছেলছেলা নির্বিশেষে সর্বশ্রেণির মুসলমানদের সমাগমে প্রতিবছর শুধু ঝালকাঠি নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতিবছরের মতো এবছরও মাহফিলে অংশগ্রহণকারীদের ৩ বেলা খাবারসহ যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন