দীর্ঘ ২০ বছর পর পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট নৌ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
গতকাল শনিবার আরিচা কাজিরহাট নৌ রুটে ফেরি চলাচল উদ্বোধন করেন নৌ- পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গত কয়েকদিন ধরেই মৃত আরিচা ঘাটে রাতে ফেরির সেই সার্চ লাইটের আলোর ঝলকানি, যাত্রী, হকার ও ফেরিওয়ালাদের হৈ হুল্লোড় পড়ে গেছে। ফিরতে শুরু করেছে আরিচা নৌ বন্দরের প্রাণচাঞ্চল্য।
ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগে থেকেই যমুনা নদীর পাড়ে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট ছিল দেশের একটি বড় নৌ বন্দর। কলকাতা-আসাম রুটের জাহাজ স্টিমার এই ঘাটেই ভিড়ত। এখানে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম। এ ঘাটকে ঘিরে আরিচায় গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র। পাকিস্তান আমলে এ ঘাটের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বিআইডবিøউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, বিআইডবিøউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর এই নৌ রুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন ও মানুষের চলাচলের গতি বেড়ে যাওয়ায় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পুনরায় এ রুটে ফেরি চলাচল শুরু করা হলো। ফলে এখন থেকে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে। আপাতত দুটি থেকে তিনটি ফেরি দিয়ে নৌ রুট সচল রাখা হবে। যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে পর্যায়ক্রমে আরও ফেরি বাড়ানো হবে।
১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পার হয়ে নগরবাড়ি এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সেই সঙ্গে আরিচা-নগরবাড়ি হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-গোয়ালন্দ হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ। ১৯৬৩ সালে ৩১ মার্চ কর্ণফুলী নামে একটি ফেরি সার্ভিস দিয়েই আরিচা-দৌলতদিয়া নৌ রুটের যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দ্রæত বাড়তে থাকে আরিচা ঘাটের গুরুত্ব। একপর্যায়ে আরিচা ঘাটকে নৌবন্দরের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার যানবাহন পারাপার হত। যাতায়াত ছিল গড় ৫০ হাজার মানুষের।
দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ছিল আরিচা ও কাজিরহাট নৌরুট। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর এই রুটে নাব্যতা সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০০১ সালে আরিচা ফেরি ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় পাটুরিয়ায়। ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে আরিচা ও কাজিরহাট নৌ রুট। এতে দুই পাড়ের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় উভয় পাড়ের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ফেরিতে পারাপার হতে পেরে খুশি তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন