উত্তর : আজ বিশ্বের চারিদিকে গুনাহের ছড়াছড়ি। অপরাধ,জুলুম-নির্যাতন,পাপ-পঙ্কিলতায় ভরে গেছে গোটা পৃথিবী। আর পাপের কারণেই নেমে আসে নানারকম আজাব-গজব, ও বালা-মুসিবত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।আল্লাহ তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা আর-রুম:৪১)
আল্লাহ ও নবী-রাসূলের অবাধ্যতার ফলেই যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি ও স¤প্রদায়কে গজব দিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিলো। যেমন আল্লাহ পাক বলেন,নূহের স¤প্রদায় যখন রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে প্লাবনে ডুবিয়েছি এবং তাদেরকে বানিয়েছি মানবজাতির জন্য নিদর্শন ।আর জালেমদের জন্যে আমি কঠিন শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।(সূরা ফুরক্বান :৩৭) আল্লাহ তায়ালার দয়া ও মায়ার কোনো সীমা নেই। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন,তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়াময়। আল্লাহ তায়ালার করুণা, দয়া লাভের অন্যতম মাধ্যম কৃত গুনাহের জন্য তাওবা করা।(তাওবা মানে কৃতগুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, সম্পূর্ণভাবে সে অন্যায় বর্জন করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ়সংকল্প করা।) কারণ, এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং সকল বিপদাপদ ও দূর্যোগ দূর হয়। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ এমন নন যে,তারা ইস্তেগফার করবে অথচ তিনি তাদেরকে আজাব দিবেন।(সূরা আনফাল:৩৩) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,হে মুমিনগণ! তোমারা খাঁটি তাওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের প্রভু তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন আর তোমাদেরকে প্রবিষ্ট করবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহরসমুহ প্রবাহিত।(সূরা তাহরিম:৮)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,অতপর আমি বলেছি : তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।( সূরা নূহ:১০-১২)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ পাক বলেন,হে আদম সন্তান!যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোনো পরোয়া করি না।হে আদম সন্তান!তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায় অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দেবো, আমি কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হওএবং আমার সাথে কাউকে শরিক না করে,তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হবো। (জামে আত তিরমিজি:৩৫৪০) হাদিস শরিফে প্রিয়নবী সা.ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে যাবতীয় বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিক দান করবেন। (সুনানে আবু দাউদ:১৫১৮)
তাওবা দ্বারা আল্লাহ পাক চরম খুশি হন। প্রিয়নবী সা.বলেন, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তখন তিনি সে লোকের চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ বাহনে আরোহী ছিলো। সাথে ছিলো সফরের পাথেয় ও। তারপর বাহনটি সব কিছুসহ হারিয়ে গেছে।এরপর সে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম করলো। এমতাবস্থায় হটাৎ উটটি এসে দাঁড়াল। অমনি সে তার লাগাম ধরে ফেললো। তখন সে আনন্দে আত্নহারা হয়ে বলে ওঠলো,হে আল্লাহ!তুমি আমার বান্দা।আমি তোমার রব।চরম খুশিতে সে ভুল করে ফেলেছে।(সহিহ মুসলিম:৬৮৫৩)
তাওবার পূর্বে দুরাকাত নফল নামাজ পড়ে নিবে। কারণ,বিশ্বনবী সা.যখনি কোনো বিপদের সম্মুখীন হতেন, সাথে সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (সুনানে আবু দাউদ:১৩১৯) বিপদের সময় সাধ্যানুযায়ী দান -সদকা ও করবে। কারণ, এতে ও বিপদাপদ দূর হয়। রাসূল সা. বলেন, দান -সদকা দ্বারা বালা- মুসিবত দূর হয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ :১৮৮৭)
সময় থাকতে এখনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি থেকে ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের যাবতীয় বিপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আবুল কাসেম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন