ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে তিনি সিএমএইচে ভর্তি হন। গত মঙ্গলবার থেকে তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বর্তমান বয়স ৮২ বছর।
এইচ টি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম বলেন, বাবা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার চিকিৎসা চলছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রিয়াজুর কবির কাওছার জানান, তিনি অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে তার অবস্থা খানিকটা অবনতি হয়েছে।
ষাটের দশকে পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা তাকে ক্ষুব্ধ করে। সরকারের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকায় তার চোখে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও সামরিক প্রশাসকদের শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনার রূপ প্রকট হয়ে ওঠে। ’৭১-এর ভয়াল ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার সংবাদ পাওয়ার আগেই দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির কর্মপন্থা নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঙ্কট মোকাফবলার সিদ্ধান্ত নেন এইচ টি ইমাম।
মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আহ্বানে পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনের পদ থেকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে যোগদান করেন। এইচ টি ইমাম ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। এরপর তাকে বরখাস্ত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র কারাগারে পাঠায়। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
হোসেন তৌফিক ইমাম ১৯৩৭ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখে টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম তাফসির উদ্দীন আহমেদ বিএ. বিএল. এবং মাতা মরহুমা তাহসিন খাতুন। শিক্ষা জীবনের শুরু রাজশাহীতে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডাকসুর কমনরুম সেক্রেটারি ছিলেন। অর্থনীতির এ ছাত্র কর্মজীবনের শুরুতে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান দখল করে সিএসপি হন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও তিনি রাজশাহী জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, নওগাঁর এসডিও, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। পাকিস্তানের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীনের একান্ত সচিব, পূর্ব-পাকিস্তান সরকারের অর্থ বিভাগের উপসচিব, সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব, প্ল্যানিং ডিভিশনের সচিব, প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য, পিএটিসির প্রকল্প পরিচালক, যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ সরকারের শাসনামলে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইচ টি ইমামকে জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও এইচ টি ইমামকে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। এছাড়া ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই একতরফা নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এইচ টি ইমাম। শেষ পর্যন্ত ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন