স্বাধীনতার ইশতেহারের কোনো অঙ্গীকারই আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পুরণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহারের ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। কোথায়? আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশে এই ১৫ বছরে কোথায় এইসব? এখন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য আকাশসমান-পাহাড় সমান হয়ে গেছে, বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়ে গেছে।আর অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকে একটা ভিন্ন মোড়কে ছদ্মবেশে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আরেকবার লড়াই-যুদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ইতেশহার’ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যে কমিটমেন্ট ছিলো, ইশতেহার ছিলো তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দিনই পুরণ করেনি। তারা বাকশাল গঠন করেছিলো, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো, অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিলো, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলো এই আওয়ামী লীগ।
এই অবস্থার পরিবর্তনে করণীয় তুলে ধরে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজকে সমস্ত শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠানকে আহবান জানাতে চাই যে, আসুন ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আরেকবার লড়াই করি, আরেকবার যুদ্ধ করি।
তিনি বলেন, আমরা কারো সেবাদাসে পরিণত হতে চাই না, আমরা কারো হুকুমের দাস হতে চাই না।আমরা আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা আমাদের নিজেদেরকে আরো বিকশিত করতে চাই, আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা আবাসস্থল গড়ে তুলতে চাই যেখানে তারা মুক্ত বাতাস অবস্থায় বাস করতে পারবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর যে দানব বসে আছে যেটা আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেব বলেছিলেন সরকার মনোস্টার। সেখান থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যারা স্বাধিকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, যারা অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আসম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে। আমরা সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যার অবস্থান সেটা দিতে চাই।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা শ্লোগান দেয়-উন্নয়ন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আর সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য। এক শ্রেনীর মানুষ আওয়ামী লীগের যারা মদদপুষ্ঠ তারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাঁচার করে দিচ্ছে। আরেক শ্রেনীর মানুষ চাকুরি হারাচ্ছে, খেতে পারছে না, চরম নৈরাশ্যের মধ্যে আছে। এই হচ্ছে তাদের(আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশ।
বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদ তাকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্যে এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর লেখতে গিয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ৬ মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিলো। এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের ৭‘শ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তাদেরকে তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনারা েেদ্খছেন- কি নির্মমভাবে নিষ্ঠুরভাবে তাদের এখানে নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে পিটিয়েছে। শুধু তাই না, তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে কী পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন জানতে চান, পুলিশ প্রতিপক্ষ কেনো? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন নিজেদের।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। ৩ মার্চে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তীকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ এই পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। পতাকা উত্তোলন দিবসে ডাকসুর ভিপি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আসম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কেনো এই দুইটি দিন উদযাপন করছি? কেননা, আজকে যারা প্রজন্ম, আজকে যারা ছাত্র সমাজ তারা যাতে বুঝতে পারে যে সেদিন যদি পতাকা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তুলতে হয়, পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজকে পাঠ করতে হয় সেদিন কী বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিলো না। এটা যাতে আজকে প্রজন্ম প্রশ্ন করতে পারে সেদিন রাজনৈতিক দল কারা ছিলো? তখনই তো আসবে সেদিন এমন একটি রাজনৈতিক দল ছিলো তারা পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কি দায়িত্ব ছিলো? তাহলে কেনো ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়েছিলো।
জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামে পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলেন জেরিন খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন