২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এটা বাতিল করেছে তা নয়, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেছে যে, কিভাবে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখা যায়। এটা হচ্ছে তাদের একটা পরিকল্পনা একটা ব্লু প্রিন্ট। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতার জন্য ১/১১ হলো। তখন তাদের বড় বড় শ্লোগান ছিলো মাইনাস টু। আসলে এটা ছিলো মাইনাস ডেমোক্রেসি, গণতন্ত্রকে দূরে রাখো, নিয়ন্ত্রিত একটা শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করো। সেই একই সূত্র থেকে একই ষড়যন্ত্র থেকে পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করলো আওয়ামী লীগ।
গতকাল রোববার গুলশানের ‘সিক্স সিজন’ হোটেলে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কথা নয়, এটা এই জাতির ভবিষ্যতের জন্য, জাতিকে সত্যিকার অর্থে একটা স্টেবল পলিটিক্যাল স্টাকচার দেওয়ার জন্য, স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামো সৃষ্টি করার জন্য। যদি কাঠামো ঠিক না থাকে তাহলে আপনি কিভাবে সেখানে পৌঁছাবেন। এটার জন্যই আমাদের নেত্রী যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলো পার্লামেন্টে সেই দিনই তিনি প্রেস কনফারেন্সে করে বলেছিলেন যে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে চিরস্থায়ীভাবে একটা অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলো, স্টেবেলিটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলো।
তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম পাকিস্তান আমলেও এতো অত্যাচার নির্যাতন হয়নি। এটা বলার কারণে ওরা (আ.লীগ) ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলো, আমাকে ওরা পাকিস্তানের চর-টর বানিয়ে দিলো। তবে আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ, ওরা জিয়াউর রহমান সাহেবকে, যিনি স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তাকেই তো পাকিস্তানের চর বলেন। বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের দুঃশাসন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। কলোনী আমলে বৃটিশ রুল, পাকিস্তান রুল, এরশাদের রুল-সব কিছুকে ছাড়িয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তারা একটা দুঃশাসনে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে, ব্যর্থ করে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে বিশেষ করে ‘তরুন-যুব সমাজ’কে, তরুন আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিআরটি প্রকল্পের ব্যর্থতার কারণে সেতু মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, বিআরটি (বাস রেপিড ট্রন্সপোর্ট) প্রকল্প এখন গলার কাটা হয়ে গেছে। এই কথাটা বলতে বলতে আমি হয়রান হয়ে গেলাম। শনিবার ময়মনসিংহ থেকে এসেছি। কাপাসিয়া থেকে আসতে লেগেছে ৬ ঘন্টা, উত্তরা থেকে আমি ঢাকায় আসি আড়াই ঘন্টা লাগে। আমার বাসা উত্তরার ৪ নং সেক্টার থেকে এয়ারপোর্ট আসতে পুরো এক ঘন্টা লাগে। এখন ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন যে, ওটা তাদের গলার কাটা হয়ে গেছে। নির্লজ্জ মানুষেরা। এই কথা বলার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর কারণ উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যেকোনো নাগরিক সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন তুলতে পারেন- যেভাবে যে প্রক্রিয়ায় অবসরগ্রহনের পরে প্রধান বিচারপতি রায় পরিবর্তন করে যে কেয়ার টেকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেটা আইনসম্মত নয়। এটা আইনজীবীরা তুলতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে -সংবিধান লঙ্ঘন করে আমরা কেয়ার টেকার পদ্ধতিতে যেতে পারি কিনা। আমরা উত্তর হচ্ছে আমরা ১০০ ভাগ পারি। সেই উত্তরটি আমি বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতকে দিয়ে থাকি। তারা যখন ব্যাখ্যা চান তখন আমি তার ব্যাখ্যাটি এভাবে দেই যে, সংবিধান হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়। যেহেতু তারা বিদেশী আমি ইংরেজীতে বলি- কন্টিটিউশন নট এ বাইবেল- যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এটার পরিবর্তন মানুষই করবে, প্রয়োজনে করবে এবং পরবর্তিতে যখন সংসদ আসবে সেটা আইনসম্মত করে নেবো। এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় একটি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই করা সম্ভব হবে না। যে কারণে আমরা বলছি যে, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। আমরা সেটাকে যে নামেই ডাকি না কেনো? গাইবান্ধার উপনির্বাচনে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আলম জর্জের সভাপতিত্বে ও উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন