শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দামামা

একাধিক চমক দিয়ে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা তৃণমূলের : ১টি আসনে দাঁড়াচ্ছেন মমতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। তৎপর তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, বাম সংগঠনসহ বিভিন্ন দল। এ পরিস্থিতিতে সকল জল্পনার অবসান করে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের টেক্কা দিয়ে রাজ্যের বড় দলগুলোর মধ্যে তারাই সবার প্রথমে তালিকা প্রকাশ করল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবারে শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
মমতা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি যা কথা দিই, সেটা রাখি। আমি আগেই ঘোষণা করেছি, সেইমতো নন্দীগ্রামেই দাঁড়াচ্ছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর বর্তমান কেন্দ্র ভবানীপুরে প্রার্থী হচ্ছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মমতা জানিয়েছেন, ‘এবারে ভবানীপুরে দাঁড়াতে না পারলেও পরে সুযোগ পেলে দাঁড়াব। এখানে আমাদের দলের সিনিয়র নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রার্থী হচ্ছেন।’
প্রতিবারের মতো এবারেও ‘শুভ দিন’ দেখে শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বাড়িতে দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক শেষে ২৯১ আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে শাসক শিবির। পাহাড়ের তিনটি কেন্দ্র ছাড়া হয়েছে জোটসঙ্গী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জন্য। এবারের প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ, সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষ, তরুণদের প্রতিনিধিত্বের উপর বিশেষ নজর দিয়েছে শাসক শিবির। তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে ১০০-র বেশি প্রার্থীর বয়স পঞ্চাশের নিচে। এছাড়াও বেশ কিছু হেভিওয়েট নেতাকে এবার প্রার্থী করা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দলের বহু বিশ্বাসযোগ্য নেতাকে এবার প্রার্থী করা হচ্ছে না। তবে, এবার ক্ষমতায় ফিরলে বিধান পরিষদ তৈরি করবে রাজ্যের শাসকদল। বিধান পরিষদের মাধ্যমে পুনর্বাসন দেওয়া হবে বাদ পড়া এই নেতাদের। এছাড়াও আশির বেশি বয়সি নেতাদের এবার অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এবারের প্রার্থী তালিকায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলা, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতিদের। ৫০ জন মহিলা, তফসিলি জাতির জন্য ৬৮ জন সংরক্ষিত কিন্তু প্রার্থী ৮৯ জন। তফসিলি উপজাতি ১৬টি সংরক্ষিত আসন থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল প্রার্থী করেছে ১৭ জন তফসিলি উপজাতিকে। সেই সঙ্গে অবশ্যই নজর কেড়েছে তালিকাই তারকাদের উপস্থিতি। এবার শাসকদলের হয়ে টিকিট পাচ্ছেন রাজ চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা, সায়নী ঘোষ, রাজ চক্রবর্তীর মতো তারকারা।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের কাছে সমর্থন প্রার্থনা করেন। বলেন, ‘এবারও আপনারা আস্থা রাখুন, তৃণমূলই পারে শান্তি, সংহতি এবং উন্নতি একসঙ্গে করতে। আমরা বাংলাকে গোটা দেশের মধ্যে এক নম্বরে পৌঁছে দিতে চাই। আমরা এখনও মনে করি বাংলা শাসন করবে বাংলার মানুষই। কোনও বহিরাগতরা বাংলা শাসন করবে না।’ এদিন আরও একবার বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্র : টাইমস নাউ।
নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীই প্রার্থী হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকের পর দলীয় সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, ‘শুভেন্দু নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চান। দলীয় কর্মীরাও তাই চাইছেন’। রাজ্য দলের আরও এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামে শুভেন্দু ছাড়া আবার কে’? এখানেই শেষ নয়, মমতার বর্তমান কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেও হেভিওয়েট প্রার্থীর নামই ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উঠে আসছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র নাম। সূত্রের খবর, ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বাবুলের নামই ভেবে রেখেছে বিজেপি। দল চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে প্রার্থী হতে যে তার আপত্তি নেই, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাবুল নিজেও।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে প্রথম দু’টি পর্বের প্রার্থীতালিকা চ‚ড়ান্ত হলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৈঠকের পর বলেন, ‘তালিকা শনিবার প্রকাশ করা হবে কি না তা কেন্দ্রীয় নেতারা ঠিক করবেন। তবে আলোচনা শেষ হয়ে গিয়েছে’। তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে দিলীপবাবু জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে এখনও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কেউ কিছু বলেননি’।
এদিন রাতের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি, দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ-সহ ১১ জন ছিলেন। রাজ্যের তরফে শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুভাষ সরকার, দেবশ্রী চৌধুরী, রাহুল সিনহা প্রমুখ ছিলেন। নন্দীগ্রাম থেকে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে আসা শুভেন্দু অধিকারীকেই প্রার্থী করা হবে কি না সেই বিষয়টিই এদিনের বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে এসেছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর।কারণ, এদিন সকালেই নাড্ডার বাসভবনে শাহর উপস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে শুভেন্দু নিজেই নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। এদিন বেলা বারোটা থেকে পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকেও প্রথম দু’দফার প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে রাতেই শহরে ফেরেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
বুধবার রাতে প্রার্থী তালিকা নিয়ে চার্টার্ড বিমানে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির সদস্যরা দিল্লিতে হাজির হন। এদিন সকাল থেকে নাড্ডার বাড়ির বৈঠকের আগে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশের বাসভবনে প্রার্থী তালিকা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। তারপরে সকলে বেলা বারোটা নাগাদ নাড্ডার বাড়িতে হাজির হন তারা। সূত্রের খবর, শাহর উপস্থিতিতে নাড্ডার বাসভবনে বৈঠকে প্রতিটি আসনের জন্য সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় উঠে আসা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও সেই তালিকায় ছিল। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভোটে জয়ের সম্ভাবনা কতটা সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যে আসন থেকে কাউকে প্রার্থী করা হবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি কতটা স্বচ্ছ, নজর থাকছে সেদিকেও। বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বিজেপি যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন শাহ। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি এদিনের দীর্ঘ বৈঠকে হাজির ছিলেন। নাড্ডার বাড়ির বৈঠকেই মোটামুটিভাবে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রাতে সেই তালিকার উপরেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে আলোচনার পরে চ‚ড়ান্ত সিলমোহর দিয়েছেন মোদি-নাড্ডারা। সূত্র : টাইমস নাও, সংবাদ প্রতিদিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন