শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মাদারীপুরে কিশোরীকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ

সহযোগিতা করায় স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার, এক সপ্তাহেও ধরা পড়েনি ধর্ষক

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২১, ৬:৪৪ পিএম

মাদারীপুরের শিবচরে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে জাকির হাওলাদার (২৫) নামের এক লম্পটের বিরুদ্ধে। ধর্ষণ শেষে ওই কিশোরীকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় জাকির। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই কিশোরী বাড়ি ফিরে আসলে তার পরিবার থানায় মামলা দায়ের করেছে। ধর্ষণে সহযোগিতা করায় জাকিরের সহযোগী ওই কিশোরীর পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বুধবার পর্যন্ত ধরা পড়েনি ধর্ষক জাকির।

মামলার নথি ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা এলাকার বাসিন্দা হিন্দু এক দরিদ্র দিনমজুর নিজের ঘর-বাড়ি না থাকায় স্ত্রী ও এক মেয়েসহ প্রায় দশ বছর আগে পাঁচ্চর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর বাজার সংলগ্ন এক মুসলিম পরিবারে আশ্রয় নেয়। মুসলিম পরিবারটি তাদের অসহায়ত্ব দেখে নিজেদের একটি ঘরে বিনা ভাড়ায় বসবাস করতে দেয়। ওই দরিদ্র দিনমজুর বাহাদুরপুর মাছ বাজারে মজুরী করে তাই দিয়ে জন্মগত বধির স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কোনমতে সংসার পরিচালনা করছিল। দারিদ্রটার কারণে মেয়েটি প্রাইমারি পাসের পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি। ওই কিশোরী অন্যের দেওয়া একটি সেলাই মেশিনে সেলাইয়ের কাজ শিখছিল। কয়েক বছর আগে দেলোয়ার বেপারী (৩৫) ও তার স্ত্রী জান্নাত (২৭) ওই কিশোরীদের পাশের ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। দেলোয়ার বাসায় নিমকি, মুড়লিসহ তেলের ভাজা খাবার তৈরি করে এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতো। সেখানে জাকিরসহ ৩/৪ জন কর্মচারী ছিল। জাকির মাদবরচর ইউনিয়নের সাড়ে এগার রশি লপ্তিকান্দি গ্রামের মৃত আনোয়ার হাওলাদারের ছেলে। সেখানে কাজ করার পর থেকে তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই কিশোরীর উপর। জাকির প্রায়ই ওই কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দিত। এ ব্যাপারে জাকিরকে দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাত সহযোগিতা করতো।

গত ২ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাত কৌশলে ওই কিশোরীকে বাসা থেকে বের করে বাহাদুরপুর বাজার সংলগ্ন রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে জাকির অপেক্ষা করছিল। ওই ৩জন মিলে জোরপূর্বক কিশোরীর মুখ ও হাত বেঁধে অটোরিকশায় উঠিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাসায় আটকে রেখে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে জাকির রাতভর ধর্ষণ করে। পরদিন বুধবার দুপুরে কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় জাকির অটোরিকশায় করে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে এক বাসায় রাখে। পরদিন বৃহস্পতিবার স্থানীয়রা মেয়েটিকে বাহাদুরপুর তার বাসায় পৌঁছে দেয়। কিশোরী বাসায় আসলে তার কাছে ঘটনা শুনে ৪ মার্চ তার পিতা বাদী হয়ে জাকির, দেলোয়ার ও জান্নাতের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। রাতে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাতকে গ্রেফতার করে।

ওই বাড়ির মালিক বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার খুবই দরিদ্র। বয়সের কারণে ওর বাবা ঠিকমত কাজও করতে পারে না। ওদের অসহায়ত্ব দেখে আমরা আমাদের বাড়ির একটি ঘরে ওদের বিনা ভাড়ায় থাকতে দিয়েছি। এই মেয়েটির জীবন নষ্ট করায় জাকিরসহ জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের দাবী জানাই।’

ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী বলেন, ‘জাকির আমাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিত। দেলোয়ার ও জান্নাত জাকিরের কুপ্রস্তাবে রাজি হতে আমাকে অনেকবার চাপ দিয়েছে। জাকিরের সাথে দেখা করতে রাস্তায় না গেলে আমার বাবা, মা ও আমাকে মেরে ফেলবে বলে ভয় দেখিয়ে আমার হাত ও মুখ বেঁধে অটোতে করে এক বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর জাকির আমাকে ধর্ষণ করে। পরদিন অটোতে করে এনে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়েছে।’ কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি অসহায় মানুষ। আমার মেয়ের জীবন যারা নষ্ট করেছে আমি আইনের কাছে তাদের কঠিন বিচারের দাবী জানাই।’

শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মিরাজ হোসেন বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণকারীর সহযোগী দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলহোতা জাকিরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন