ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাধীন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর শাহ সূফী আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই দরবার শরীয়ত পরীপন্থী কোন কর্মকান্ডকে সমর্থন করেনা। যুগ যুগ ধরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথের সন্ধান দিতেই অলি আউলিয়াগণ তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করে গেছেন। কোরআন সুন্নাহর আলোকে অলি আউলিয়াগণ জীবন গড়ার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগী করতে হবে। আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে হলে হক্কানী পীরের কাছে বয়াত গ্রহণ করতে হবে। হক্কানী পীরগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:) এর সঠিক পথে চলার নির্দেশ করে থাকেন।
বর্তমান ফেতনা ফ্যাসাদের যুগে ঈমান আকিদা রক্ষা করার লক্ষ্যে হক্কানী পীর আউলিয়াদের অনুস্বরণের কোন বিকল্প নেই। সত্যিকারের মুসলমান হতে হলে হক্ক দরবার এবং হক্কানী পীর মাশায়েখের সহব্বতে আসতে হবে। ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করতে হবে। বতর্মান প্রেক্ষপটে সমাজের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সুদ, ঘুষ, মদ,জুয়া, হারাম উপার্জন, হিংসা বিদ্ধেষ ও দুর্নীতির কারণে পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বস্তরের আজ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
নৈতিক চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে মানব চরিত্রের পরিবর্তন আনতে হবে। আল্লাহর জিকির ছাড়া পৃথিবীর কোথাও শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, আল্লাহর জিকির প্রত্যেকের অন্তরে জারি করতে হবে। অলি-আউলিয়াদের কাজ হচ্ছে পথ হারা ও দিশেহারা মানুষকে আল্লাহর পথের সন্ধান দেওয়া। মানুষকে পরিপূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হতে হলে অবশ্যই ইসলাম, কুফর ও শিরকের ব্যাপারে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। শরিয়তের পাশাপাশি ইলমে মারিফত ও তরিকতের মাধ্যমেই অলি-আউলিয়াদের রূহানী ফয়েজ, বরকত লাভ করা সম্ভব। শরীয়ত বাদ দিয়ে মারিফত অর্জন করা সম্ভব নয়। পীর ও মাজার শরীফে সেজদা করা যাবে না ইহা সম্পূর্ন হারাম গুনাহে কবিরা। মদ, গাজাঁ, গান বাজনাও সম্পূর্ণ হারাম। অনৈসলামিক কার্যকলাপ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। বেশী বেশী করে নবীর (সাঃ) উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করলে দিল রৌশন ও অন্তরে নূর ফয়দা হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় ভীতি থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহর ভয়-ভীতির মাধ্যমেই মোত্তাকি ও পরহেজগারী অর্জন করা যায়।
তিনি বলেন, ফান্দাউক দরবার অলি-আউলিয়াদের দরবার, এ দরবারের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত রয়েছে। অলিদের সান্নিধ্য লাভের আশায় দরবার শরীফের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে হবে। পীর সাহেব বলেন, আদর্শ ছাড়া বুর্জুগী লাভ করা যায় না। আদর্শ থাকলে বুর্জুগী নষ্ট হয় না। সকল কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের উপর। মুমিন হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে ধন সম্পদ, পিতা মাতা, আওলাদ এমনকি নিজের জানের চেয়েও রাসূল্লাহ (সাঃ) কে বেশী মহব্বত ও ভালবাসতে হবে। তিনি গত ১২ মার্চ শুক্রবার ফান্দাউক খেলার মাঠে পীরে কামেলে মোকাম্মেল হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুস সাত্তার নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহঃ) ও যুগশ্রেষ্ট পীরে কামেলে মোকাম্মেল মোজাদ্দেদে জামান হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম আল ক্বাদরী চিশতি নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহঃ) দ্বয়ের কেন্দ্রীয় বার্ষিক ইছালে ছওয়াব মাহফিলের ১ম দিন সভাপতির বয়ান দানকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের নায়েবে আমীর পীরজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনী ও সার্বিক তত্বাবধানে পীরজাদা আলহাজ্ব মাওঃ সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী ও পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ বাকের মস্তোফা আল-হোসাইনী এবং উপস্থাপনা করেন, পীরজাদা মাওলানা সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন শামীম, আলহাজ্ব মাওঃ মোশাহিদ হোসাইন, ১ম দিনের মাহফিল উদ্বোধন করেন, হযরত শাহসূফী পীরজাদা বাহাউদ্দিন খোকন, আলোচনা করেন, সাইয়্যেদ মোঃ ইমদাদ উল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী, মুফতি শাহ আলম, মাওঃ মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, ড. আনোয়ার হোসেন সাইফী, মাওঃ চৌধুরী মোঃ জামিল আহমাদ যুক্তিবাদী, মাওঃ মোশার্রারফ হোসেন হেলালী, মাওঃ কামাল উদ্দিন আনসারী, মাওঃ গাজী আব্বাছ উদ্দিন, মাওঃ হাফেজ আব্দুর রহমান প্রমুখ। ফান্দাউক দরবার শরীফ কর্তৃক আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে দেশের পূর্বাঞ্চল বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও বৃহত্তর কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলা সহ ফান্দাউকের সভায় মাহফিলে প্যান্ডেলে লোকে লোকারন্ন হয়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মুরিদান, আশেকান, ও ভক্তবৃন্দ মাহফিলের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে পূণ্যভূমি ফান্দাউক অলি-আউলিয়া প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মিলনমেলায় এক অভূতপূর্ব ভাবগাম্ভির্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। উক্ত ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে দেশ বরণ্যের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ, পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামগন ওয়াজ নছিয়ত করেন। মাহফিলের শুরুতে শুক্রবার বাদ জুম্মা ফাতেহা শরীফ, খতমে কোরআন, খতমে বোখারী, মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। ১ম দিন দরবার শরীফের উন্নতি, সাফল্য, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশের কল্যাণ, মঙ্গল এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি কামনা করে পীর সাহেব সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট মোনাজাত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন