শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

মেডিকেল কলেজে ভর্তির খুঁটিনাটি

প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমাদুল হক প্রিন্স ও ফারিবা সুলতানা দিনা

সুপ্রিয় মেডিকেল ভর্তিচ্ছু বন্ধুরা... তোমরা অবশ্যই জান এ বছর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ অক্টোবর। যারা কেবল আত্মবিশ্বাসী আর নিজের মেধাকে সময়মতো কাজে লাগাতে পারে তারাই টিকে থাকে ভর্তিযুদ্ধে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ, প্রশ্নও টেকনিক্যাল হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীকে ব্যতিক্রমী অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতির বিষয়গুলোকে আস্তস্থ করতে হয়। কেবল আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সম্ভব, ফলাফল যতই ভালো হোক না কেন পরীক্ষার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিজের প্রস্তুতিকে ধরে রাখতে হবে। তা না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যারা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতের ডাক্তার হিসেবে নিজেদের দেখতে চান এখন থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে। ভাবতে হবে আমার প্রস্তুতি কখনোই অন্যদের থেকে কম হবে না। শুধু ভাবলেই চলবে না সে অনুসারে কাজও করতে হবে। এ বছর ভর্তি প্রতিযোগিতার সংখ্যা পূর্বের বছরগুলোর চেয়ে আরও বাড়বে। তবে হতাশার কিছু নেই। শেষ সময়ে যথাযথ অধ্যবসায়ী ও নিষ্ঠাবান হলে শত ভিড়েও সাফল্য সম্ভব। মেডিকেলে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়তে হবে। আবশ্যিক বিষয়ে ভালো নম্বর তোলার জন্য মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে স্পষ্ট ধারণা নিয়েও প্রস্তুতিকে যথার্থ রূপ দেয়া যায়। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ৪ মাসের অধিক সময় পাওয়া যায় না, তাই নিয়মিত সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা নিবিড় অনুশীলন একান্ত অপরিহার্য। ফলাফল যতই ভালো হোক ভর্তি পরীক্ষার পূর্বপর্যন্ত নিবিড় অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে; অন্যথায় জীবনে জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে। মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানগর্ভ পরিবেশ তোমাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও তারিখ : বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯.০ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরাই কেবল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে । তবে আলাদা আলাদাভাবে জিপিএ অবশ্যই ৩.৫ থাকতে হবে। উভয় পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। ২০১৫ এবং ’১৬ সালে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরাই কেবল আবেদন করতে পারবে। এ বছর ভর্তি ফরম পূরন শুরু হয়েছে ৩১ আগস্ট থেকে শেষ হবে ২০ সেপ্টেম্বর। অনলাইনে আবেদন করার সময় অবশ্যই িি.িফমযং.মড়া.নফ-এ নির্দেশিকা ভাল করে পড়ে নিতে হবে। পরীক্ষার ফিস হিসেবে প্রিপেইপ টেলিটক মোবাইল থেকে ১০০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
প্রবেশপত্র সংগ্রহ : ২-১০-১৬ থেকে ৬-১০-১৬ পর্যন্ত প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে।
ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৭ অক্টোবর।
আবেদনের জন্য লগইন করতে হবে : যঃঃঢ়:// ফমযং.ঃবষরঃধষশ.মড়া.নফ
সময় যেন কাজে লাগে : মেডিকেলে ভর্তির জন্য কতক্ষণ পড়তে হবে সেই বিষয়ে ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। প্রস্তুতির বেলায় প্রতিটি মুহূর্ত যেন ফলপ্রসূ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সময়গুলোকে পাঠ্যবিষয় অনুযায়ী বণ্টন করে নিতে হবে। কেবল সময় ব্যয় করলে চলবে না সব বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যতটুকু সময় পড়তে হবে তা যেন মনোযোগের সঙ্গে হয়। পুরনো পড়াগুলো রিভাইজ দিতে হবে। প্রয়োজনে রুটিন করে নিতে হবে। সাফল্যের চাবিকাঠি সময়ানুবর্তিতা। প্রতিটি পড়া তিনি রুটিন অনুসারে সময় করে পড়তেন। রুটিন করা বিষয়ে এলোমেলো না পড়ে অবশ্যই রুটিন করে পড়া উচিত, কেননা রুটিন করলে পড়াশোনাটা বেশ গোছালো হয়।
বিষয় অনুসারে প্রস্তুতি : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি টেক্সট বই থেকেও অনেক প্রশ্ন করা হয়। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থেকে এই প্রশ্নগুলো করা হয়। এজন্য বইগুলোর প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র সম্পর্কে ধারণাটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। কেবল এক লেখকের বইয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক লেখকের বই আয়ত্তে রাখতে পারলে নিজের জন্য তা উপকারী। টেক্সট বইয়ের বিকল্প নেই। টেক্সট বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়, সময় একদম নষ্ট করা যাবে না। টেক্সট বইয়ের প্রতি সময় বেশি দিতে হবে। পুরনো পড়াগুলো বার বার রিভাইজ দিতে হবে। টেক্সট বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থেকেও প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইংরেজিতে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো করলে ভর্তিযুদ্ধে নিজের টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ইংরেজির ব্যাকরণ অংশ যেমন, পার্টস অব স্পিচ, সেনটেন্স, জেন্ডার, নাম্বার, আর্টিকেলস, টেন্স, ভয়েস, ট্রান্সফরমেশন অব সেনটেন্সেস, ন্যারেশন, প্রিপজিশন, ট্যাগ কোয়েশ্চেন, কন্ডিশনাল সেনটেন্স, রাইট ফরম অব ভার্বস, স্পেলিং, এনটোনিম-সিনোনিম, কারেকশন, অ্যানালোজি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য : কোথায় কখন কী ঘটছে এসব সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খোঁজখবর রাখতে হবে। রেডিও-টেলিভিশনের খবর শুনতে হবে নিয়মিত। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলা পিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়ে ভালো করার জন্য জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সম্পাদকীয় অংশে চোখ রাখতে হবে।
পরীক্ষার খুঁটিনাটি : মেডিকেল পরীক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায় মোট নম্বর- ৩০০। এসএসসির জিপিএ এর ১৫ গুণ এবং এইচএসসির-২৫ গুণ যোগ করে মোট ২০০ এবং বাকি ১০০ এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর-১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। জীববিজ্ঞান থেকে ৩০ নম্বরের, রসায়ন থেকে ২৫, পদার্থ বিজ্ঞান থেকে ২০, ইংরেজি থেকে ১৫ ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ১০ নম্বরের মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। টেক্সটে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানেও গুরুত্ব দিতে হবে। কোন বিষয়কে অবহেলা করা চলবে না। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সিলেবাসভুক্ত জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বইয়ের পাশাপাশি বাজারে এর সাথে সম্পৃক্ত অন্য বইগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
পরীক্ষার হলে জাদুকাঠি : অনেকেই পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে পড়ে; এটা একদম চলবে না। পরীক্ষার হলে নিজের মনোবল ধরে রাখতে হবে। দেখা যায় অনেকের প্রস্তুতি ভালো থাকার পরেও পরীক্ষার হলে নার্ভাসনেসের কারণে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করতে পারে না। উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে উত্তরপত্রে বৃত্ত যেন ঠিকঠাক ভরাট করা হয়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে উত্তরপত্রে এক প্রশ্নের উত্তর অন্যবৃত্তে ভরাট করে থাকে। উত্তর দেয়ার সময় প্রশ্নের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করে উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্ন দেখে একদম ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না। পরীক্ষায় দু’একটা প্রশ্ন আনকমন আসতেই পারেÑ এটা মাথায় রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আনকমন প্রশ্ন দেখে নিজেকে হতাশ করা যাবে না। এ ছাড়া ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ৬০ মিনিট সময় পাবে অর্থাৎ একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় পাবে ৩৬ সেকেন্ড। এই অল্প সময়ের ভেতরে প্রশ্নপড়া ও উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটের কাজ করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নে সমান সময় ব্যয় করতে হবে। মোট কথা সময়ের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। তবে উত্তর দেয়ার সময় সচেতন থাকা জরুরি। কেননা প্রতি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বিবি ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:১৬ এএম says : 0
৩৭টা মেডিকেলের জায়গাই যদি ৩৬টা মেডিকেল চয়েস দি তাইলে সমস্যা হবে?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন