সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কুরআন সুন্নাহর আদর্শই মুসলিম উম্মাহর সকল সংকট নিরসন করতে পারে- পীর সাহেব ফান্দাউক দরবার শরীফ

আমীন আমীন ধ্বনির মাধ্যমে শেষ হলো ফান্দাউকের মাহফিল

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১:০৯ পিএম

ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের বর্তমান পীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমদ মামুন আল-হোসাইনী বলেন- গোটা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ক্রান্তিলগ্নে কুরআন সুন্নাহর মানদণ্ডে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নাই। সারাবিশ্বে মুসলিম নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র কারণ আমরা কুরআন ও সুন্নাহর সুমহান আদর্শ থেকে সরে গেছি। আমাদের মধ্যে এত ভাগ বিভক্তির একটি কারণ আমরা মুসলমানরা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইনসাফের সাথে ন্যায় বিচার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি। নতুবা এক আল্লাহ এক নবীর উম্মত হয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র সংবিধান মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও নূর নবীজীর রেখে যাওয়া সুন্নাহর আদর্শের অনুসারী হলে আমরা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন সুযোগ নাই। সারা বিশ্বের মুসলমান আজ হতাশায় জীবন অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের চতুর্দিকে পাশ্ববর্তী রাস্ট্রের মুসলমানদের অবস্থা খুবই সূচনীয় কিন্তু আল্লাহর অশেষ দয়ায় এবং আল্লাহর ওলীদের তাওয়াজ্জুহ বেষ্টনীর মাধ্যমে এই বাংলাদেশের মুসলমান এখনো শান্তিতে বসবাস করছে । তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে এই দেশে ততদিন পর্যন্ত কাফের বেঈমানদের কালো থাবা বসাতে পারবেনা যতদিন আমরা আল্লাহর ওলীদের অনুসরণ করে চলতে পারবো। কারণ এইদেশে কোন নবী রাসূলগনের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার প্রসার ঘটেনি। বর্তমানে কিছু নেক সুরতের মানুষ আল্লাহর ওলীদের আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে সরলমনা মানুষের ঈমানকে নষ্ট করার সুদূর প্রসারি চক্রান্ত করে যাচ্ছে মূলত তাদেরকে মুসলমান বলার কোন সুযোগ নাই। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান নিজেই প্রতিটি আন্দোলনে আলেম ওলামা পীর মাশায়েখগনের সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে এই দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুতরাং কোন ভাবেই এই দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের অবদানকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পীর সাহেব ফান্দাউকী আরও বলেন খাতমে নুবুয়্যাত অস্বীকার কারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় আজ সারাদেশকে উত্তাল করে ফেলেছে। এই দেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ ঈমান রক্ষার জন্য বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিতে একটু পিছুপা হবেনা। বর্তমান কাদিয়ানী সম্প্রদায় সরকার থেকে ইসলাম ও মুসলমানকে বিচ্ছিন্ন করে পশ্চিমাদের রাজ কায়েম করতে চায়। সকল কাফের মুশরিক ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ফান্দাউকের এই ময়দান থেকে জানিয়ে দিতে চাই আমরা জৌনপুর ফুরফুরা ছিলছিলার অনুসারী আমরা শাহজালাল, শাহপরান, সিপাহশালা সৈয়দ নাসিরুদ্দীন রহঃ এবং হুজুর কিবলা ফান্দাউকীর অনুসারী। শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানদের এই দেশে খতমে নবুয়ত, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাসেদ খান মেনন সংসদে যে বক্তব্য দিয়ে মুসলমানদের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে তা কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনি নিজেও একজন মুসলমান। আপনি ও আপনার সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য যা করছেন তা অনস্বীকার্য। আপনার বাবার অসমাপ্ত কাজের একটি হচ্ছে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা। তাই আপনার কাছে আকুল আবেদন কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অনতিবিলম্বে অমুসলমান করেন নতুবা কোন মুসলমান আর ঘরে বসে থাকবেনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের বার্ষিক দুই দিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন তরিকার তালিম প্রদান পূর্বক দরবারের বর্তমান পীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল-হোসাইনী আগত ভক্ত মুরিদদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। গত ১২ মার্চ বাদ জুমা পবিত্র ফাতেহা শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৪ মার্চ বাদ ফজর শেষ হয়। দুই ব্যাপী মাহফিলের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন দরবারের পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল-হোসাইনী, পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক আল-হোসাইনী, পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ বাকের মোস্তফা আল-হোসাইনী। মাওলানা সৈয়দ আশরাফুল হোসাইন শামীমের সঞ্চালনায় দুই দিন মাহফিলে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন অত্র দরবারের হাফেজ আলহাজ্ব হাফেজ মোঃ ফয়েজ মোল্লা, নাতে রাসুল সাঃ পরিবেশন করেন মোজাদ্দেদীয়া শিল্পী গোষ্ঠীর অন্যতম নাত শিল্পী
মাওলানা শাহ আক্তারুজ্জামান মাছুমী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম মাছুমী, মাওলানা তরিকুল ইসলাম হোসাইনী, সৈয়দ কুতুবউদ্দিন। উদ্বোধনী মিলাদ শরীফ পরিচালনা করেন পীরজাদা মাওলানা সৈয়দ বাহাউদ্দীন খোকন। প্রথমদিন মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ নাসিরনগরের বর্তমান সাংসদ বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এমপি মহোদয়। প্রথম দিন আলোচনা করেন, আলোচনা করেন হযরত মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, অধ্যাপক মাওলানা এবি এম আব্দুস সালাম, মাওলানা মুফতি শাহআলম হানাফী, মাওলানা জামিল আহমদ চৌধুরী, মুফতি ড. আনোয়ার হোসাইন সাইফী, ২য় দিন আলোচনা করেন বাংলাদেশ জামিয়াতুল মুদার্রিসিনের সহ-সভাপতি ও মৌকারা দরবার শরীফের পীর আলহাজ্ব মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুদ্দীন ওয়ালীউল্লাহী, সোনাকান্দা দরবারের পীর আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুন নূর,মাওলানা হাফেজ নেছার উদ্দিন ফেনী, শায়খুল হাদীস ড. বদিউজ্জামাল সরকার, মাওলানা কামাল উদ্দিন আনসারী, মুফতি শাহআলম মাছুমী, মুফতি মোযযাম্মিল মাছুমী, মাওলানা সৈয়দ সালমান ফার্সী প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা ডা.শাহ সাফিউর রহমান সাহেবজাদায়ে বালাউটী, বিশিষ্ট কলামিস্ট মাওলানা শাহ মাসুদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড.কামরুল হাসান তরফদার, নাসিরনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, মৌলভীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হাফিজ আলাউর রাহমান টিপু, ফান্দাউক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মামুন, মোড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মোল্লা ফয়সল প্রমূখ।১৪ মার্চ রবিবার বাদ ফজর মিলাদ শরীফ ও মোনাজাতের মাধ্যমে লাখো মানুষের আমীন আমীন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারিপাশ, মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে গোটা বিশ্ববাসীকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ভাবে মোনাজাত করা হয়। মাহফিলের সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য দোয়া করা হয়। পরিশেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যান কামনা করে ২০২১ সালের মাহফিলের সমাপ্ত ঘোষণা করেন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল-হোসাইনী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন