শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল নিতে আগ্রহী চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের বন্ধঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলগুলো ব্যক্তি বা কোম্পানি পর্যায়ে ইজারা (লিজ) দেয়া শুরু হবে। চলতি মার্চের যেকোনো সময় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকলগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে পাওয়া প্রস্তাবগুলো গৃহীত নীতিমালার আলোকে পরীক্ষার জন্য সরকার গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেকারত্ব নিরসনে সরকারের আমন্ত্রণে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুটমিল লিজ নেয়ার জন্যও প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে মিল দু’টো পরিদর্শন করে গেছে বলেও জানা গেছে। দ্রুত মিলগুলো চালু করে উৎপাদন বাড়িয়ে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনতে ইজারা পদ্ধতিকে চূড়ান্ত করে এগোচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে অবসায়নকৃত শ্রমিকদের মধ্যে অভিজ্ঞ ও দক্ষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ দেয়া হবে এতে প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনালী আঁশে সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জুটমিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। প্রতিষ্ঠাকালে বিজেএমসির আওতায় ৭০টিরও বেশি পাটকল ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে মিল কমতে কমতে এখন ২৫টিতে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসান দিয়েছে বিজেএমসি। সরকার প্রাথমিকভাবে পাটকল পুনরায় চালুর জন্য চারটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে। প্রথমত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), দ্বিতীয়ত যৌথ উদ্যোগ, তৃতীয়ত সরকার টু সরকার (জিটুজি) এবং সর্বশেষ পরিকল্পনা ছিল ইজারা বা লিজ দেয়া। সর্বশেষে লিজ দেয়াটাকেই উপযুক্ত মনে করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছে। ইজারা দেয়া কারখানাগুলো বাংলাদেশ জুটমিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। লাভ-লোকসানে কোনো অংশীদারিত্ব থাকবে না। ইজারা দেয়ার পর সরকারের দেয়া শর্ত পালন করছে কি-না তা তদারকি করবে বিজেএমসি। এছাড়া অগ্রাধিকার হিসেবে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবে লিজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি। এ জন্য কঠোর নজরদারি করা হবে। পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করে তারপর চালুর দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। স¤প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদের আহ্বায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী চাহিদা পূরণ ও পাটজাত পণ্য রফতানির সুযোগ হাতছাড়া হলে তা দেশের শিল্প ও অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে।

পাট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, উদ্যোক্তাদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। সরকারের লক্ষ্য পাটকলগুলোর শ্রমিকরা যেন কাজে ফিরে আসে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) করোনাকালেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। যেখানে একই সময়ে পোশাক, চামড়া, চামড়াজাত পণ্যসহ অন্য অনেক খাতের রফতানি কমেছে।

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকলগুলো চালুর বিষয়ে সরকার গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মাদ আবুল কালাম ইনকিলাবকে বলেন এ মাসের মধ্যেই লিজ দেয়া প্রক্রিয়া শুরু হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। যারা অংশ নেবে তাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। এরপর প্রস্তাব চাওয়া হবে। যাদের প্রস্তাব দেশের জন্য কল্যাণকর বিবেচিত হবে তাদেরই লিজ দেয়া হবে।

শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আলোকে উন্নত দেশগুলোয় ২০২২ সাল থেকে পাট ও তুলাজাতীয় পণ্যের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তখন পাটজাত পণ্যের বিপুল চাহিদার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিনি বলেন, আমলাদের পরামর্শে আকস্মিকভাবে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।
গত বছর ২৮ জুন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৫টি পাটকলে এই মুহূর্তে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। তাদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসর দেয়া হবে। পাটকলগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। সরকারের পক্ষে বছরের পর বছর পাটকলের এত লোকসান বহন করা সম্ভব নয়। গত ৪৮ বছরে সরকারকে এই পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।

বিজেএমসির অধীন ২৬টি পাটকলের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২৫টি। এরমধ্যে ২২টি পুরোদমে পাটকল ও ৩টি নন-জুট ইন্ডাস্ট্রি। একটি পাটকল বন্ধ রয়েছে। জুটমিলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ জুটমিলস লি, ঘোড়াশাল, পলাশ, নরসিংদী, বাগদাদ-ঢাকা-কার্পেট ফ্যাক্টরি লি:, নর্থ কাট্টলী, চট্টগ্রাম, করিম জুটমিলস লি:, ডেমরা, ঢাকা, কেএফডি, রাঙগুনিয়া, চট্টগ্রাম, লতিফ বাওয়ানী জুটমিলস লি:, ডেমরা ঢাকা, কার্পেটিং জুটমিলস লি: রাজঘাট, নোয়াপাড়া, যশোর: ইউএমসি জুটমিলস লি: নরসিংদী, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লি: রাজঘাট, নোয়াপাড়া, যশোর, রাজশাহী জুটমিলস লি: শ্যামপুর, রাজশাহী ইস্টার্ন জুটমিলস লি:, আটরা শিল্প এলাকা খুলনা: জাতীয় জুটমিলস লি: রায়পুর, সিরাজগঞ্জ, আলীম জুটমিলস লি: আটরা শিল্প এলাকা খুলনা: আমিন জুটমিলস লি: ও ওল্ড ফিল্ডস লি: ষোল শহর চট্টগ্রাম, ক্রিসেন্ট জুটমিলস লি: টাউন খালিশপুর খুলনা, গুল আহমদ জুটমিলস লি:, প্লাটিনাম জুবিলি জুটমিলস লি:, হাফিজ জুটমিলস লি:, খালিশপুর জুটমিলস লি:, এম এম জুটমিলস লি:, দৌলতপুর জুটমিলস লি:, আর আর জুটমিলস লি:, স্টার জুটমিলস লি:। নন-জুটমিলগুলো হলো, জুটো ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, গালফ্রা হাবিব লি:, মিলস ফার্নিসিং লি: ও মনোয়ার জুটমিলস লি:।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Pritom Das ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
এটা ভারতকে দেওয়া যাবেনা। চীন যেন পায়
Total Reply(0)
রাজিব ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
ছীনকে দিলে উভয় দেশের জন্য ভালো।
Total Reply(0)
রহস্য মানব ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
এবার যদি কিছু একটা হয়।
Total Reply(0)
নীল আকাশ ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
আমার মনে হয় চীনকে দিলে ভালো হবে।
Total Reply(0)
রমজান আলি ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
গুড নিউজ।
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ১৫ মার্চ, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
It is a sad news that after the establishment Bangladesh, Jute industry deteriorated in Bangladesh but increased in West Bengal. If Any private organization takers over it will definitely improve. If no private organization is interested, then China can be an alternative. But under no circumstances this should be continued to decay under Government patronage.
Total Reply(0)
ash ১৫ মার্চ, ২০২১, ৫:০৩ এএম says : 1
BJMC KE OBOSHO E AI PROKOLPER BAYRE RAKHA WICHITH !! KARON BJMC R SHOB KORMOKORTA RA CHORRRRRRRRRRRRRR !! ASHOLE BJMC KE PUROPURI BILOPTO KORA WICHITH !! R BJMC R KORMOKORTA DER KAR KOTO SHOMPOTTI ASE TA KHOTIE DEKHA WICHITH
Total Reply(0)
shakh farid ১৫ মার্চ, ২০২১, ১০:৪৪ এএম says : 0
চিনা কম্পানি কে দিয়ে চালানো ভালো
Total Reply(0)
Jack+Ali ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:২৬ পিএম says : 0
All the ruler rule our beloved country they are don't have any brain, they only know how to stay in power and steal our hard earned money and sends to foreign countries. If our country rule by the Law of Allah then our country would have been better then china.
Total Reply(0)
Azad mullah ১৬ মার্চ, ২০২১, ২:৪৯ এএম says : 0
ভারত কে দেওয়ার চেয়ে বন্ধ করা ভালো তবে চাইনা কে দিলে সব চাইতে ভালো হবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন