শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহান স্বাধীনতা দিবস

গঙ্গারিডি: আমাদের গৌরবময় অতীতের নজির

মাহমুদ ইউসুফ | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ৯:১৯ পিএম

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক। গাঙ্গেয় অববাহিকার এক পরাক্রমশালী রাষ্ট্র। বঙ্গোপসাগরীয় উপক‚লজুড়ে এ স্বাধীন রাষ্ট্রটির অবস্থান। আজাদি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করত এক জাতি; যাদের ভয়ে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট সৈন্যসামন্ত গুটিয়ে পালিয়েছিলেন ভারতবর্ষ ও পূর্ব এশিয়া জয়ের নেশা থেকে। সেই ঐতিহাসিক সমৃদ্ধশালী সুপারপাওয়ার রাষ্ট্রটির নাম ছিল গঙ্গারিডি। গঙ্গারিডির সুনাম সুখ্যাতি তখন তুঙ্গে। সমসাময়িক গ্রিক ও লাতিন পর্যটক, ভ‚গোলবিদ ও মুসাফিরদের কলমে এ জাতির শৌর্যবীর্য ও জ্ঞানগরিমার সপ্রশংস চিত্র আমাদের গৌরবান্বিত করে। গঙ্গারিড, গঙ্গারিডই, গঙ্গারিডাই, গঙ্গারিড়ি, গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাহৃদয়, গঙ্গাঋদ্ধি, গঙ্গারাষ্ট্র প্রভৃতি গঙ্গারিডির লিপ্যান্তর। মেগাসথিনিসের গঙ্গারিডি আর প্লিনির বঙ্গরাষ্ট্র একই ভূখন্ডের দুটি ভিন্ন নাম।

নুহ নবির আওলাদ বঙ বাংলাদেশের প্রথম মানব ছিলেন। বঙই আমাদের ওয়ালেদ। বঙ বাঙালি জাতির জনক। আবহমানকাল থেকেই বঙের উত্তরসূরী বাঙ জাতি বাংলাদেশে বসবাসরত। ইসলাম ধর্মাবলম্বী এই বাঙ জাতিই এ দেশের ধারক-বাহক। অনাদিকাল থেকেই তারা এ দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির মূল নিয়ামক। তবে পরবর্তীকালে তাদের সাথে যোগ দেয় নুহ নবির সন্তান সামের উত্তরসূরী দ্রাবিড় জাতি। উত্তর ভারত আর্যপদানত হলে তারা বাংলাদেশে এসে আর্যবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ড. এম এ আজিজ ও ড আহমদ আনিসুর রহমান বলেন : ‘খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে আলেকজান্ডারের উপমহাদেশে অভিযানের সময়েও বাংলার অধিবাসীরা শৌর্যবীর্য, সভ্যতা ও কৃষ্টিতে শীর্ষস্থানীয় ছিল। বহুজাতির আবাসভ‚মি এ উপমহাদেশে গঙ্গা-বিধৌত গঙ্গারিডি জাতিই ছিল শ্রেষ্ঠ। কার্তিয়াস, ডিওডোরাস, প্লুতার্ক প্রমুখ গ্রিক লেখকের ইতিবৃত্ত, স্ট্রাবো ও টলেমির ভৌগোলিক বৃত্তান্ত আর ভার্জিলের মহাকাব্য থেকে এ সময়কার বাংলার অধিবাসীদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রিক ও লাতিন লেখকদের গ্রন্থে বঙ্গরাষ্ট্রের নাম পাওয়া যায় না। তবে গঙ্গারিডিরা যে বঙ্গ জনপদের অধিবাসী দ্রাবিড় এবং এ ভৌগোলিক সীমায়ই যে গড়ে উঠেছিল স্বাধীন সার্বভৌম শক্তিশালী গঙ্গারিডি রাষ্ট্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ... দ্রাবিড়রা ছিলেন ভ‚মধ্যসাগর অঞ্চলের নরগোষ্ঠীর লোক এবং তাদেরই একটি দল গঙ্গা মোহনায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করে এক উন্নততর সভ্যতা গড়ে তোলেন। পন্ডিতগণের মতে, ‘গঙ্গারিডি’ নামটি সংস্কৃত থেকে উদ্ভ‚ত নয়। এতে মনে হয়, এ রাজ্যের অবস্থিতি ছিল আর্য জগতের বাইরে। গঙ্গারিডিই সম্ভবত বাংলার প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র।’ [বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ২৫-২৬] তাই বলা যায়, বংগ-দ্রাবিড়ি বা বাঙ-দ্রাবিড়ি জাতিই ছিল গঙ্গারিডির জনবল।

প্রথম শতকের লাতিন দার্শনিক প্লিনি পেরিপ্লাস অফ ইরিত্রিয়ান সি শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, বঙ্গরাজ মগধসহ গোটা আর্যাবর্ত জয় করে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় একচ্ছত্র সম্রাট হয়ে বসেন। প্লিনির মতে, গঙ্গারিডাই রাজ্যের ভেতর দিয়ে গঙ্গা নদীর শেষ অংশ প্রবাহিত হয়েছে। গঙ্গার দক্ষিণ অংশের অধিবাসীদের গাত্রবর্ণ ছিল কালো এবং রৌদ্রে পোড়া, কিন্তু তারা ইথিওপিয়ানদের মতো কালো ছিল না। মেগাসথিনিস তার ইন্ডিকা কিতাবে লিখেছেন, ‘গঙ্গার শেষ অংশের প্রস্থ আট মাইল এবং যেখানে এটি সব থেকে কম প্রস্থের সেই স্থানে এর গভীরতা প্রায় ১০০ ফুট। সেই মানুষরা যারা সেই সুদূর প্রান্তে থাকেন তারা হলেন গঙ্গারিডাই। এদের রাজার এক হাজার ঘোড়সওয়ার, ৭০০ হাতি এবং ছয় হাজার পদাতিক মুজাহিদ নিয়ে সজ্জিত প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে।’ [উইকিপিডিয়া] গ্রিক বীর আলেকজান্ডার এসব বিবরণী শুনে বাংলাদেশ জয়ের দুরাশা ত্যাগ করেন।

গঙ্গারিডির অবস্থান
এ ভূভাগের অবস্থান নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে তেমন কোনো মতপার্থক্য নেই। মেগাসথিনিস (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৯০), ডিওডোরাস (ইসায়িপূর্ব ৬৯-১৬), কার্তিয়াস, প্লুতার্ক, সলিনাস, প্লিনি, ক্লডিয়াস টলেমিয়াস (খ্রিস্টীয় ৯০-১৬৮), স্ট্র্যাবো প্রভৃতি ঐতিহাসিক, পরিব্রাজক ও ধ্রুপদি লেখকদের প্রাসঙ্গিক মতামতের তুলনামূলক আলোচনা করলে বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগ গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের অবস্থান চিহ্নিত করে। এ ছাড়া পশ্চিমবাংলার উত্তর চব্বিশপরাগনা জেলা, কলকাতার দক্ষিণাংশও গঙ্গারিডির অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ গঙ্গারিডির পূর্বে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা, পশ্চিমে ভাগিরথী নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ময়মনসিংহ।

গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল গঙ্গা তীরবর্তী গঙ্গে। এই গঙ্গে নগরী ছিল একটি প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক বন্দর। গঙ্গে বন্দরের সঙ্গে রোম, মিসর, চীন, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকার তেজারতি সম্পর্ক ছিল। এখানে বাণিজ্য ব্যাপদেশে বিভিন্ন দেশের জাহাজ যাতায়াত করত। এখান থেকে স্বর্ণ ও মনিমুক্তা, রেশম ও কার্পাসজাত বস্ত্র, মসলা, গন্ধদ্রব্য এবং যুদ্ধোপকরণ হিসেবে হাতি প্রভৃতি বিদেশে রফতানি হতো। [মনসুর মুসা সম্পাদিত বাঙলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩০] গ্রিক ভৌগোলিক টলেমি দ্বিতীয় শতকে জানান, গংগা মোহনার সব অঞ্চলজুড়েই গঙ্গারিড়িরা বাস করে। তাদের রাজধানী গংগ খ্যাতিসম্পন্ন এক আন্তর্জাতিক বন্দর। এখানকার তৈরি সূ² মসলিন ও প্রবাল রত্নাদি পশ্চিম দেশে রফতানি হয়। তাদের মতো পরাক্রান্ত ও সমৃদ্ধ জাতি ভারতীয় উপমহাদেশে আর নেই। [আখতার ফারুক: বাংগালির ইতিকথা, পৃষ্ঠা ২-৩] কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাজধানী বা কেন্দ্রস্থল গঙ্গা কোথায় ছিল- তা নিয়ে ঐতিহাসিক, বিশেষজ্ঞ, আলেম-উলামারা একমত হতে পারেননি। বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। বিভিন্নজনের বিভিন্ন বয়ান আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

এক. বারোবাজার
গঙ্গারিডি বা গঙ্গা রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল বারোবাজার। তখন এই বারোবাজারের নাম ছিল গঙ্গে বা গঙ্গারোজিয়া। উপমহাদেশের মধ্যে একটি প্রাচীন বাণিজ্য বন্দর হিসেবে এর নাম সুবিদিত ছিল। [হোসেন উদ্দিন হোসেন : বিলুপ্ত নগরী বারোবাজার; ঔবংংড়ৎব.ওহভড়] বিখ্যাত ঐতিহাসিক এ. এফ. এম আব্দুল জলীল বলেন, ‘মুরলি বা যশোর টলেমি বর্ণিত গঙ্গা রেজিয়া।’ [এ. এফ. এম আব্দুল জলীল : সুন্দরবনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৫৫৭] শ্রীযুক্ত পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ও এই গঙ্গারেজিয়া যশোহর জেলার অন্তর্গত বলে অনুমান করেছেন।

দুই. কোটালিপাড়া
প্রাচীন এ জনপদকে গঙ্গারিডির রাজধানী বলে অভিহিত করেছেন ঐতিহাসিকদের একাংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে গ্রিক বিবরণে দেখা যায়, গঙ্গার মোহনায় গঙ্গারিডি রাষ্ট্র। গঙ্গা নদীর মোহনায় কুমারতালক বা কোটালিপাড়ায় গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের রাজধানী। মি. ওয়াটার্স ও জেমস ওয়াইজের মতে, কোটালিপাড়ায় গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল। মেগাসথিনিসের বিবরণে দেখা যায়, গঙ্গার মোহনায় মোদকলিঙ্গ নামে একটি দ্বীপ ছিল এবং সেখানে মোলঙ্গিদের আবাস ছিল। গৌরনদী উপজেলার মেদাকুল গ্রাম প্রাচীনকালের মোদকলিঙ্গের পরিবর্তিত নাম। ১৮৭৩ সন পর্যন্ত কোটালিপাড়া থানা বাকেরগঞ্জ জেলাধীন ছিল। উল্লেখ্য, বর্তমানে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলা সীমানা থেকে কোটালিপাড়ার দূরত্ব মাত্র পাঁচ-ছয় মাইল। [সিরাজ উদদীন আহ্মেদ : বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৫]

তিন. চন্দ্রকেতুগড়
উইকিপিডিয়ায় উক্ত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশপরগনা জেলার প্রত্নস্থল চন্দ্রকেতুগড় সম্ভবত প্রাচীন বন্দর-রাজ্য ‘গঙ্গারিডাই’র রাজধানী বা ‘গাঙ্গে’ বন্দর। এই প্রত্নস্থলটির অবস্থান বিদ্যাধরী নদী সংলগ্ন। উইকিপিডিয়ার মতো মুক্তবিশ্বকোষে এ ধরনের তথ্যের উপস্থিতিতে আমরা মর্মাহত হই। সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে, কলিকাতার দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত সমগ্র ভূভাগ গঙ্গে বা গঙ্গরেজিয়া। [সতীশচন্দ্র মিত্র : যশোর খুলনার ইতিহাস প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭০] প্রাচীন শিলালিপিতে বিক্রমপুর ও নাব্য-প্রাচীন বঙ্গের এ দুটি ভাগের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। বিক্রমপুর এখনো সুপরিচিত। নাব্য বরিশাল ও ফরিদপুরের জনবহুল নিম্নভূমির নাম ছিল। কারণ এই অঞ্চলে নৌকাই যাতায়াতের প্রধান উপায়। [শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদার : বাংলাদেশের ইতিহাস প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ৬] অতএব বলা যায়, প্রাচীন বাংলা বা গঙ্গারিডি রাষ্ট্র আজকের বাংলাদেশ নিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল। তাই কলকাতা বা চন্দ্রকেতুগড়ে গঙ্গে রেজিয়ার অস্তিত্ব খোঁজা অযৌক্তিক।

চার. বাঙ্গালা
পেরিপ্লাসের বিবরণে দেখা যায়, গঙ্গ চট্টগ্রামের নিকট পতিত হয়েছে এবং গঙ্গা নামে মোহনায় একটি বন্দর ছিল। বন্দরের বিপরীত দিকে ছিল একটি দ্বীপ। এ দ্বীপ স›দ্বীপ বলে মনে করা হয়। [সিরাজ উদদীন আহ্মেদ : বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৪] যদি তাই হয় তাহলে ‘বেঙ্গল’ বা ‘বাঙ্গালা’ বন্দরও গঙ্গে রেজিয়া হতে পারে। ডক্টর এম. এ. রহিম মনে করেন, ‘বাঙ্গালা শহর হাতিয়া ও স›দ্বীপের মাঝামাঝি স্থানে সম্মিলিত নদীগুলোর মোহনায় অবস্থিত ছিল এবং ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমদিকে সাগরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।’ [বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৩]

ইতালিয় সওদাগর লুই বারথেমা জাহাজযোগে টেনাসেরিম থেকে ‘বাঙ্গেলা’ শহরে আগমন করেছিলেন ১৫০৩-১৫০৮ সনের মধ্যে। তিনি মন্তব্য করেন, এই শহরটি ছিল তার দেখা শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং এর সুতি ও রেশমি বস্ত্রের পর্যাপ্ত রফতানি বাণিজ্য ছিল। পর্তুগিজ সওদাগর বারবোসা ১৫১৮ সনের দিকে বাংলাদেশ সফর করেন। তিনিও উত্তম পোতাশ্রয়সমেত প্রসিদ্ধ সমুদ্র বন্দররূপে ‘বেঙ্গলা’ শহরের নামোল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই শহরের অধিবাসীদের বেশির ভাগই ছিল মুসলিম, যাদের অনেকেই ছিল বড় বড় বণিক এবং বিরাট বিরাট জাহাজের মালিক। বেঙ্গলা শহরের অধিবাসীরা বিভিন্ন প্রকারের সূ² ও সুন্দর সুতিবস্ত্র ব্যাপক পরিমাণে তৈরি করত। এগুলো তাদের সওদাগররা চিনি ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্যের সঙ্গে কোরোমন্ডল, মালাবার, কাম্বে, পেগু, টেনাসেরিম, সুমাত্রা, সিংহল ও মালাক্কায় রফতানি করত। ১৫৬১ সনে ভেনিসের গ্যাসতালদি কর্তৃক প্রকাশিত এশিয়ার একটি মানচিত্রেও বাঙ্গালা শহর ও সাটিগাঁয়ের [সাতগাঁও] উল্লেখ আছে। এই মানচিত্র এবং দুজন বিদেশি পরিব্রাজকের সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায়, বেঙ্গলা নামক একটি বড় শহর ও বন্দর বঙ্গ উপসাগরের উপকূলভাগে ষোড়শ শতকের প্রারম্ভে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। [বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১-১৩]
এই বেঙ্গল শহরটি যদি গঙ্গে বন্দর হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়; খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত এর অস্তিত্ব জানান দেয়নি কেন? জবাবে বলা যায়, এই দীর্ঘসময়ে তা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। গঙ্গারিডিদের গৌরবময় অধ্যায় খতমের পর ষোড়শ শতাব্দীতে সেটি তার দীপ্তিময়তা ফিরে পায়। যেমন : মুর্শিদাবাদ, লাখনৌতি, নদিয়া, বিক্রমপুর, পুন্ড্রনগর, বরেন্দ্র একদা দুনিয়াজুড়ে কাঁপন ধরিয়েছিল। বর্তমানে ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে আছে সেই গৌরবগাঁথা। আবার ১৬১০-১৭১৭ পর্যন্ত ঢাকা ছিল বৃহৎ বাংলার রাজধানী। তারপর হারিয়ে যায় অতীতের গর্ভে। ১৯৪৭ সনে আবার সাবেক মর্যাদায় প্রত্যাবর্তন করে। অবশ্য ১৯০৫-১৯১২ সময়কালে সাত বছরের জন্য উজ্জ্বলতা ফিরে পেয়েছিল। বেঙ্গলা নগরের ক্ষেত্রেও একই কথন প্রযোজ্য হতে পারে।

পাঁচ. সোনারগাঁও
ইতিহাস গবেষক ও প্রখ্যাত পন্ডিত মোাহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘কেউ কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চেয়েছেন, টলেমি বর্ণিত ‘গংগ’ বন্দরটি সোনারগাঁও ও চাঁদপুরের মধ্যবর্তী কোনো এক স্থানে অবস্থিত ছিল, যা নদীতে বিলীন হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, সোনারগাঁওই ছিল টলেমি বর্ণিত গংগ বন্দর।’ [মোহাম্মদ আবদুল মান্নান : বাংলা ও বাংগালী মুক্তি সংগ্রামের মূলধারা, পৃষ্ঠা ৩]
লেখক: গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
A Kh M Emdad Hossain ১৯ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১২ পিএম says : 0
গজারিয়া নামটি কি প্রাচীন গংগা রেজিয়া থেকে আগত?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন