শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাওলানা মামুনুল হককে হেনস্তা থেকে উদ্ধার করলো হেফাজত কর্মী-সমর্থকরা

নারায়ণগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে দ্বিতীয় স্ত্রী আমিনা তাইয়াবাসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় এক রিসোর্টে পাওয়ার পর তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে গেছে হেফাজতের কর্মীরা। এদিকে, মুক্তির পর মাওলানা মামনুল হক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপদে আছি, পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক! কেউ কোনো গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না!
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় ওই রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। এতে রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সোনারগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি আই মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। এক পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে বিক্ষুব্ধ হেফাজতকর্মীরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে কেউ কেউ জানান।
এর আগে বিকেলে মাওলানা মামুনুল হককে দ্বিতীয় স্ত্রী আমিনা তাইয়াবা (২৫) সহ অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মামুনুল হক ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে। মাওলানা মামুনুল হককে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর আগে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে নানা রকম অপবাদ দিয়ে লাঞ্ছিত করে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি, পৌরসভা ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রবীনসহ স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা মাওলানা মামনুল হককে অবরুদ্ধ করার সময় উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার বিকেল ৩টায় সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর বন্ধ থাকায় তিনি রিসোর্টের ৫০১ নম্বর রুমে উঠেন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে। এ খবরে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী বিকেল সাড়ে ৫টায় স্ত্রীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে। খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম রয়েল রিসোর্ট থেকে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত নারীর নাম আমিনা তাইয়াবা।
মামুনুল হক বলেন, আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসি। সোনারগাঁও জাদুঘরে গিয়ে জাদুঘর বন্ধ থাকা আমি বিকেল ৩টায় স্থানীয় সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে এসে অবস্থান নেই। পরে এলাকার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। তারা আমাদেরকে হেনস্তা করে একপর্যায়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন ও পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।
তিনি আরো বলেন, ইসলামের শরিয়ত মোতাবেক আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি গত দুই বছর আগে। সে আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমি আল্লাহর কসম কাটতাছি সে আমার স্ত্রী তার প্রমাণ আমি দেখাবো। আমি কোনো অপরাধ করি নাই। কোনো দুর্বলতা আমার নাই।
এদিকে খবর পেয়ে সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ইউএনও মো. আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না ও সোনারগাঁও থানা ওসি তদন্ত তবিদুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ উপস্থিত হন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক দু’টি বিয়ে করেছেন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এসেছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে আটক করে লাঞ্ছিত করেছেন। স্থানীয়দের সাথে ধস্তাধস্তিতে মামুনুল হকের পরনে থাকা জামাটিও ছিঁড়ে গেছে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এখানে মাওলানা মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে উঠেছেন, এই খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতা-কর্মী তাঁর কক্ষটি ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশও সেখানে ছুটে যায়। উপজেলা সহকারী কমিশনারও (ভূমি) সেখানে যান। পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হন।
মাওলানা মামুনুল হককে ঘেরাওয়ের খবরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ‘রয়েল রিসোর্ট’ নামে ওই অবকাশ যাপনকেন্দ্রটিতে যান। সেখানে মাওলানা মামুনুল হক সংবাদকর্মীদের বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে অবকাশ যাপনে তিনি ওই রিসোর্টে যান। সেখানে তাঁকে হেনস্তা করা হয়েছে। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘মাস্তান প্রকৃতির লোকেরা এসে আমাকে আমার ওয়াইফসহ নাজেহাল করেছে। আমাকে আক্রমণ করেছে। ‘আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মাওলানা মামুনুল হকের ভক্তরা এ খবর পেয়ে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের সঙ্গে অশুভ আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী, নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আলী উসমান, মুফতি সাঈদ নূর। গতকাল এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, হামলা মামলা করে হকের আওয়াজকে বন্ধ করা যাবে না। এ ধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। মামুনুল হকের সঙ্গে অশুভ আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মোঃ মঞ্জুর আলী ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৪৩ পিএম says : 0
সেল্প একটা বাক্যে বলবো, আদৌ কি এর বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে!!!???
Total Reply(0)
Mahfuzur Rahman ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১১:১৫ পিএম says : 0
ঘেরাও কারীদের আাইনের আওতায় নিতে হবে ৷
Total Reply(0)
Shahin Ahmed ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে যাতায়াত ও ভ্রমণ করতে কেহ কাবিননামা সাথে নিয়ে যায়না। মাওলানা মামুনুল হকের সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই।
Total Reply(0)
BD Khan ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
আমাদের দেশের নামধারী নেতারা বিদেশে গিয়ে লাল নীল পানি খেয়ে পর নারীর সাথে ফুর্তি করলে সমস্যা নেই। আর একজন আলেম হালাল স্ত্রী নিয়ে রিসোর্টে বেড়াতে গেলেই সমস্যা
Total Reply(0)
Rony Ahmed ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
মামুনুল হকের সাথে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে তা কোন নারী কেলেংকারী বা ধর্ষণের থেকেও জঘন্য কাজ ! অনেকটা আজকে বাংলা সিনেমার একটি অংশবিশেষ দেখতে পেরেছি আমরা!
Total Reply(0)
Md Anwar ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 4
হাজার হাজার মানুষ উনাকে উদ্ধার করতে যেতে পারেন, কিন্তু একজন ব্যক্তির মাধ্যমে কাবিননামা আনানো, অথবা একটা ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমুতে পাঠাতে পারেন নাই বিষয় টা সেখানেই শেষ হয়ে যেত, সেই সাথে যারা ওনাকে ঘিরে ধরেছে তাদেরও দোষী সাব্যস্ত করা যেত। কিন্তু তা না করে পুলিশ থেকে আসামি ছিনতাই করার মত উনার সহযোগীরা উনাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
Total Reply(0)
Anisul Mostafa ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
যারাই চরিত্রহননের চেষ্টা করেছে তারা সেই মুনাফিক-কাফিরদের অনুসারী, যারা হযরত আয়েশা ( র ) এর বিরোদ্ধে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু আল্লাহ নিজেই কোরআনের আয়াত নাজিল করে সকল মুনাফিক-কাফিরদের মুখে চপাটাঘাত করেছিলেন। অহি যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যভাবে আল্লাহর সাহায্য চাই।
Total Reply(0)
Mahbub Rayhan Rubel ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৪২ এএম says : 0
শুনেছিলাম জোর যার মুল্লুক তার। এখন দেখি মিডিয়া যার মুল্লুক তার৷ কি সুন্দর করে সুকৌশলে সমস্ত দোষ হেফাযতে ইসলাম ও তৌহিদি জনতার উপর চাপিয়ে ১৭ জনের শাহাদাতবরণকে লুকানো হচ্ছে! এমন প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন হেফাযত সকল দোষের মূল, ছাত্রলীগ আর তাগুত প্রশাসন ধোয়া তুলসীপাতা! জাতি হিসেবো লজ্জিত এমন এক জালিম সরকার বাংলাদেশের মানুষের উপর সাহর হয়েছে যে জনগন না পারতাছে কিছু করতে, না পারতাছে কিছু বলতে। শুধু নিরবে কষ্ট ভোগ করতাছে। আর দোয়া করতাছে কবে জালিমটার পতন হবে।
Total Reply(0)
Manik Howlader ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৪২ এএম says : 0
জাতি হিসেবো লজ্জিত এমন এক জালিম সরকার বাংলাদেশের মানুষের উপর সাহর হয়েছে যে জনগন না পারতাছে কিছু করতে, না পারতাছে কিছু বলতে। শুধু নিরবে কষ্ট ভোগ করতাছে। আর দোয়া করতাছে কবে জালিমটার পতন হবে।
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ১০ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
It is said that when a nation become corrupt and Allah (ST) become upset on that nation then He sees JALIM BADSHAH to rule them. If not is true then People are responsible for the JALIM SARKER. Correct yourself before blaming Sarker.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন