শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর নিউমার্কেট, মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকেরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার দাবি জানান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধিনিষেধের কারণে এসব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এদিকে আন্দোলন চলাকালে চাঁদনী চক মার্কেটের সামনের রাস্তায় ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে’ প্ল্যাকার্ড হাতে বিমর্ষ বদনে বসে আছেন এক তরুণী। প্রখর সূর্যতাপে তাকে বসে থাকতে দেখে ছাতা হাতে এগিয়ে এলেন মার্কেটের এক কর্মচারী। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছাতা সরিয়ে নিতে বললেন তিনি। শুধু তাই নয়, মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে গত দুই দিনের মতো গতকালও রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকসহ বিভিন্ন মার্কেটের কর্মচারীরা এখানে সমবেত হন। অনেকের মধ্যে ওই তরুণীও ছিলেন। আফরিন নামের ওই তরুণী এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, গতবছর করোনা মহামারির কারণে তিনি ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন। শুধু তিনি একা নন, তার সঙ্গে স্বপ্ন দেখছেনক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরও শত শত নারী উদ্যোক্তা। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে তারা কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। গতবার যে ক্ষতি হয়েছিল এবার তা পুষিয়ে নেয়ার আশা করছিলেন তারা। কিন্তু নতুন করে লকডাউন শুরু হওয়ায় তাদের সে স্বপ্ন ভেঙে এখন চুরমার।

আফরিন জানান, তিনি ইসলামপুর ও গাউছিয়া থেকে থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন পোশাকের অর্ডার নিয়ে সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ যেমন- কারচুপির কাজ, স্টোন বসানোর কাজ করে দেন। প্রতিবছর রোজা শুরুর আগে নিজ খরচে পোশাকে এসব কাজ করে ব্যবসায়ীদের দেন তিনি। ২৫ রোজার পর দোকান মালিকরা তাকে টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে যদি মার্কেট বন্ধ থাকে তাহলে ব্যবসায়ীরা টাকা দেবে কোথা থেকে? আর তারা টাকা দিতে না পারলে আমি কারিগরসহ অন্যান্যদের বিল পরিশোধ করবো কোথা থেকে? কয়েকদিন ধরে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। লকডাউনের কারণে আরেকবার ধাক্কা খেলে (আর্থিক ক্ষতি) মরণ ছাড়া উপায় থাকবে না ।

কামাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকার ভাবুক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান না টিকলে দেশও টিকবে না। আমরা নির্দিষ্ট একটা সময় মার্কেট খোলা রাখতে চাই। রমজানে দোকান খোলা না থাকলে কী হবে, জানি না। গত বছরের ক্ষতিই পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন গেøাব শপিং কমপ্লেক্সের এই ব্যবসায়ী।

চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, গত বছরের সাধারণ ছুটি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ধাক্কা জানুয়ারি মাস থেকে একটু একটু করে সামলে উঠছেন তারা। মনির হোসেন আরও বলেন, আমাদের কাপড়টা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যাবে। তারপর কাস্টমাররা কিনবেন, তারপর টেইলরের কাছে বানাতে দেবে। আমাদের পিক আওয়ার এখন।

মনির হোসেন জানান, থ্রিপিস এবং অন্যান্য জামা ১০ থেকে ১৫ রোজার পর আর বিক্রি হয় না। কারণ, টেইলরের কাজ থাকে পরে। টেইলর যদি অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেন, তখন তাদের কাপড়ও কেউ কিনবে না। তিনি বলেন, আমরা যে বিনিয়োগ করেছি, সেই টাকা কাপড় প্রস্তুতকারী, ব্যাংকের ঋণ, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, পারিবারিক খরচ এগুলোর পেছনে খরচ করা হয়। সব মিলিয়ে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি আমরাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাও পাই না।

এদিকে, একই দাবিতে মিরপুর ১ নম্বর মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে ওই এলাকার বিভিন্ন সড়কে মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা মিরপুর ১ ও এর আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নোয়াখালীর : সোনাইমুড়ীতে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ব্যবসায়ী ও কমর্চারীরা। দুপুরে সোনাইমুড়ী বাজার এলাকায় ২ শতাধিক দোকান মালিক ও কর্মচারী বিক্ষোভ সমাবেশ করে। লকডাউনে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা এই বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়, ‘লকডাউন মানি না, মানব না’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’।

খুলনা : খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করেছে খাদ্যগুদামের শ্রমিকরা। গতকাল বিকালে খুলনার মহেশ্বরপাশা সিএসডি খাদ্য গুদামের ব্যবস্থাপক মোকলেছ আলামিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এসময় শ্রমিকরা সিএসডি খাদ্য গুদামে মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ ও খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বরিশাল : বরিশালে বিক্ষোভ করেছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর চকবাজার সড়ক অবরোধ করে চকবাজার, মহসিন মার্কেট, সিটি মার্কেট, ও গীর্জা মহল্লার মোবাইল এবং গার্মেন্টস দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা এই বিক্ষোভ করেন।
বগুড়া : বগুড়ায় দোকানপাট খোলার দাবিতে রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এরই অংশ হিসেবে ইলেকট্রিক ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। গতকাল বেলা ১১টায় শহরের সাতমাথা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। শহরের পুরান বাজার থেকে শুরু করে সদর রোড হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ কর পরে নিউ মার্কেট চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা। দুপুরে শহরের সমবায় সুপার মার্কেটের সামনে এ বিক্ষোভ হয়। শহরের বিভিন্ন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতে অংশ গ্রহণ করেন।

কুমিল্লা : রাস্তায় নেমে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুমিল্লা নগরীর ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, খন্দকার হক টাওয়ারের সাংগঠনিক সম্পাদক, টাউন হল সুপার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদকসহ প্রমুখ।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় হাজী আসহান উল্লাহ সুপার মার্কেটের সামনে ১৫ মিনিটের জন্য সড়ক অবরোধ করে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
সাভার (ঢাকা) : ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ব্যবসায়ীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের থানা ট্রাফিক মোড় থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। ২ ঘণ্টাব্যাপী ব্যবসায়ীরা এই বিক্ষোভ শুরু করে শহরের বঙ্গবন্ধুর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করেন ব্যবসায়ীরা।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেছে। বেলা বারটার দিকে বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এই বিক্ষোভ করে।এসময় অধিকাংশ ব্যবসায়ী মাস্ক বিহীন ছিল। মিছিলটি বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কলেজ রোডের সিঙ্গাপুর মার্কেটের সামনে সমবেত হয়।

নান্দাইল : ময়মনসিংহের নান্দাইলে “ভাত দে-কাপড় দে, নইলে লকডাউন ছেড়ে দে” স্লোগানে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন