শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে

মো. আরাফাত রহমান | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

মানুষের কর্মকান্ড পরিবেশের উপাদানে অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন সৃষ্টি করে, করে পরিবেশ দূষণ। দূষণ বলতে সাধারণভাবে বোঝায় মানুষের নিজস্ব স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করা, যা প্রধানত বর্জ্য বা ক্ষতিকর পদার্থ দ্বারা বায়ু, পানি ও মৃত্তিকা দূষণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ দূষণ সমস্যা গুরুতর করে তুলেছে। অধিক জনসংখ্যা মানে প্রাকৃতিক সম্পদের অধিক ব্যবহার, যার পরিণাম অধিক দূষণ। কঠিন বর্জ্যজনিত দূষণ বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্যা। বিভিন্ন শহরে বিপুল পরিমাণে কঠিন বর্জ্য জমা হয়। বর্তমানে কেবল ঢাকা নগরীতেই প্রতিদিন প্রায় ১,৫০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পরিমাণও বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে খাদ্যের উচ্ছিষ্ট, ঘাস, গাছপালা, কাগজ, কাঠের টুকরা, কাপড়, প্লাস্টিক, পলিথিন জাতীয় পদার্থ, কাঁচ এবং নির্মাণ সামগ্রীর অবশিষ্ট।

ঢাকায় অনেক ছোট বড় শিল্প-কারখানা রয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর বর্জ্য তৈরি হয় এবং পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটায়। শিল্পদূষণ হল কারখানা ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত দ্রব্য বা বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পরিবেশের অবক্ষয়। বাংলাদেশে শিল্পখাত থেকে অর্জিত জিডিপির বিশ শতাংশের মধ্যে কারখানা শিল্পের অংশ এগারো শতাংশ। প্রধানত তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পপণ্য উৎপাদক খাতসমূহে এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। শক্তিশালী শিল্পখাতের বিকাশ কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির নিরিখে লাভজনক হলেও এগুলি পরিবেশের অবক্ষয়ও ঘটায়। জাতীয় দূষণ তথ্যচিত্র থেকে জানা যায় যে, শিল্প-উপখাতসমূহের একটি ক্ষুদ্র অংশ দেশে দূষণ সমস্যার একটি বড় অংশের জন্য দায়ী। বাংলাদেশের সেসব শিল্প-উপখাতকে সর্বাধিক দূষণপ্রবণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলি দেশের এক বা একাধিক দূষক দ্রব্যাদির মোট অংশভাগের অন্তত পাঁচ ভাগ ছড়ায়।

বাংলাদেশের কোন কোন শিল্প কারখানা হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন এবং আরও কিছু দুর্গন্ধযুক্ত, বিষাক্ত বা বিরক্তিকর রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করে যেগুলি সর্বসাধারণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ঢাকা ও অন্যান্য শহরের মানুষ কখনও কখনও এ ধরনের গন্ধের ব্যাপারে এতটা অভ্যস্ত যে তারা এগুলিকে আর অনেক সময় বাযুদূষক হিসেবে বিবেচনা করে না। উদাহরণ হিসেবে চামড়ার কারখানাগুলির কথা বলা যায়। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ক্লোরিন ও অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। অনেক সময় ভবন তৈরির পরিকল্পনা নিম্নমানের এবং সেগুলিতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা না থাকায় তামাকের ধোঁয়া, চুল্লি ও উনুনের গ্যাস, প্রাত্যহিক গৃহস্থালির কর্মকান্ডে তৈরি বিভিন্ন গ্যাসীয় বর্জ্য বেরিয়ে আসতে পারে না। এভাবে বাইরের দূষিত বায়ুর তুলনায় ঘরে অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়া সম্ভব।

বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানি দহন ছাড়াও বায়ুদূষণের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে ইটের ভাটা, সার কারখানা, চিনি, কাগজ, পাট ও বস্ত্র কারখানা, সুতা কল, চামড়া শিল্প, পোশাক, রুটি ও বিস্কুট কারখানা, রাসায়নিক ও ঔষধ তৈরি শিল্প, সিমেন্ট উৎপাদন ও প্রসেসিং কারখানা, দালানের জন্য গ্রিল ও দরজা-জানালা নির্মাণ ওয়ার্কশপ, করাত কলের কাঠের গুঁড়া, চাষকৃত জমির ধুলাবালি, উপকূলবর্তী দ্বীপ ও উপকূলাঞ্চলে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের লবণকণা ইত্যাদি। এসব উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণ বাষ্প, গ্যাস ও ধূলিকণা ইত্যাদি বাতাসে মিশে ধোঁয়া সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করে। শব্দদূষণের প্রকোপ বাংলাদেশের জন্য এক সুদূরপ্রসারী পরিণতিবহ সমস্যা হয়ে উঠছে। গাড়ির হর্ন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ট্রাফিক আইন না মানায় শহরের অনেক অংশে শব্দসমস্যা অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করেছে। শব্দদূষণের উৎস হচ্ছে মোটরগাড়ি, ট্রাক, বাস, উড়োজাহাজ, মোটর সাইকেল, রেলগাড়ি, নির্মাণকাজ ও শিল্পকারখানা।

তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ মানুষের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর এক ধরনের অদৃশ্য দূষণ। তেজস্ক্রিয়তার উৎস সূর্য ও মহাশূন্য যেখান থেকে তা পৃথিবীতে পৌঁছায়। ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার অধিকাংশ বিকরিত হয় বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী থেকে। এগুলির মধ্যে উেেল্লখযোগ্য লেজার রশ্মি, এক্সরে মেশিন, রঙিন টেলিভিশন সেট, মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন ইত্যাদি। তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব ভালভাবে লক্ষ্য করা যায় কোষ গঠনের ক্ষেত্রে। তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত কোষ মরে গেলে বা আপনা আপনি সুস্থ হয়ে উঠলে পরবর্তী সময়ে কোন সমস্যা ঘটে না। কিন্তু একটি ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পরবর্তী পর্যায়ে ক্যানসার প্রবণ হয়ে ওঠে। মানুষের জননকোষ তেজস্ক্রিয়তায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলি বন্ধ্যা হয়ে পড়ে, এমনকি নবজাতক বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

বিশ্বজুড়ে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অপসারণের সমস্যা জনসমাজে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা সমুদ্রের চারপাশে বসবাসরতদের জন্য একটি বড় আতঙ্কের বিষয়। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপের ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়াসহ ভারত উপমহাদেশের জনগণের উদ্বেগ বেড়েছে। অধুনা পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের ফলে সৃষ্ট দূষণ বিশ্বব্যাপী মানুষের আতঙ্ক ও উদ্বেগের কারণ হয়েছে এবং মানবজাতি ও সামগ্রিকভাবে প্রাণিজগতের নিরাপত্তার স্বার্থে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

মাটি ভূত্বকের উপরিভাগের একটা পাতলা আবরণ। মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে কৃষি ব্যবস্থা। ব্যবস্থাপনার অভাবে ইদানিং বাংলাদেশে মৃত্তিকাদূষণ একটি গুরুতর বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস ছাড়াও মৃত্তিকা দূষণের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভূমিক্ষয় যা মাটির গুণগত পরিবর্তন ঘটায় এবং বন্ধনকে দুর্বল করে। উপরন্তু, বৃক্ষ, মাটির উপরের ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিজ্জ আবরণ অপসারিত বা ধ্বংস হলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টির পানিতে মাটি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। বন্যার ফলেও মাটি স্থানান্তরিত হয়, এতে মাটির গঠনের গুণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। ভূমিক্ষয় ও ভূমি অপসারণ দুটি প্রক্রিয়াই মাটিকে ক্রমশ অনুর্বর করে তোলে, যা ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যও বিনষ্ট করে। অপরিকল্পিত ও অসমন্বিত ভূমি ব্যবহার এবং চাষাবাদ পদ্ধতি পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণ। একইভাবে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য জমি পরিষ্কার, গাছকাটা, বন-উজাড়ের জন্যও মৃত্তিকাক্ষয় ঘটে।

ভৌত-পরিবেশীয় সমস্যাগুলো উন্নয়ন সমস্যার সঙ্গে মিশে যাওয়ার দরুন প্রকৃতির অসতর্ক ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিকাশ আরও বিঘ্নিত হচ্ছে, সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবহারের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে অসাম্য। অনেক জমির অপব্যবহার হচ্ছে, অতি ব্যবহারের ফলে অনেক জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। জমির ব্যবহার ও আচ্ছাদন পরিবর্তনের ফলে দেখা দিচ্ছে সম্পদহানি, গ্রামীণ ভূমিহ্রাস, ভূমি অবক্ষয়, বন উজাড়, মরুকরণ, লবণাক্ততা, জলাভূমি, হ্রদ ও জীববৈচিত্র লোপ। নগরায়ণ পরিবেশের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রসার নিম্নগতিতে হলেও গত কয়েক দশকে শহরে জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরের সীমিত অবকাঠামোর উপর অত্যধিক চাপ পড়ছে।

অধিকন্তু, অধিকাংশ শহরের ত্রিশ শতাংশের বেশি মানুষ বসবাস করছে বস্তিতে। বায়ু ও পানি দূষণ, বর্জ্য নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকটরূপ ধারণ করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বাযু ও পানি লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। কর্মসন্ধানী গ্রামীণ মানুষের শহরমুখী অভিযাত্রা শহরের দুর্বল অবকাঠামো ও পরিবেশের অবক্ষয় বাড়িয়েই চলেছে। বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলের একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের কার্যকলাপের ফলে সুন্দরবনের ব্যাপক বাস্তুসংস্থানিক পরিবর্তন ঘটছে। জাহাজ থেকে নির্গত তেল, লবণাক্ততা, নদীপ্রবাহ হ্রাস ও বেআইনী কার্যকলাপ এখানকার বাস্তুসংস্থানিক ভারসাম্য ধ্বংসের প্রধান কারণ। সুন্দরবনের আবহাওয়ার কোন পরিবর্তন হলে গোটা দেশের জলবায়ু ও জনজীবনের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। মানবজাতির স্বার্থে এবং বিশেষত পরিবেশের গুণগতমান রক্ষার্থে বিশ্বের এ অনন্য বাস্তুতন্ত্র ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণের কিছু কর্মসূচি শুরু হয়। ১৯৭২ সালে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচি শুরু করে ১৯৭৪ সালে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ গঠন এবং ১৯৭৭ সালে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৮৯ সালে বন বিভাগ এবং নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত কর্মকৌশল প্রণয়নের উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে এবং তখন থেকে এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। গুরুতর পরিবেশগত সমস্যাবলি মোকাবিলার ও পরিবেশের আরও অবনতি রোধের লক্ষ্যে বাংলাদেশে জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি অনুধাবন করে জাতীয় লক্ষ্যসমূহের সাথে মিল রেখে উন্নয়ন নীতি প্রণয়নে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত উদ্বেগ বৃদ্ধি প্রকৃত অর্থে জীবনমরণ সমস্যা। একইভাবে মানুষের উন্নয়ন ছাড়া ভৌত পরিবেশের গুণগত মান উন্নয়ন একটি অস্বাভাবিক দাবি। কেবল স্বাভাবিক পেশাগত দক্ষতার প্রয়োগ না করে দরিদ্র মানুষের চাহিদা ও আকাক্সক্ষাকে সমন্বিত করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, টেকসই সম্পদ আহরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পল্লি­উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করাই সর্বোত্তম।
লেখক: সহকারী কর্মকর্তা, ক্যারিয়ার এন্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন