রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সউদী-থাইয়ের ফল ‘সাম্মাম’ সাপাহারে

বিশেষ ভুমিকা রাখে ক্যান্সার প্রতিরোধে

এমদাদুল হক সুমন, নওগাঁ থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৫ এএম

উত্তরের জেলা নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র খ্যাত সাপাহার উপজেলায় সউদী আরব ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’-এর ফলন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তা হোসনে মাহফুজ শিবলী প্রথমবারের মতো এই ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে রক মেলন ফল দেখতে প্রতিদিন লোকজন আসছেন। প্রথমবারে আশাব্যঞ্জক সাফল্য পেয়ে মাহফুজ আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বরেন্দ্র ভূমি সাপাহার উপজেলায় বেশ কয়েক বছর ধরে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নিরব বিপ্লব শুরু হয়। অল্প সময়ে আমের জন্য সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতামূলক ভাবে ফল বাগান করার হিড়িক পড়ে যায়।
এসব দেখে মাহফুজ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তার আগে তিনি ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স শেষে দীর্ঘদিন রাজধানীতে ব্যবসা-বাণিজ্য করছিলেন। আর সাপাহারের খবর পেয়ে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় চেপে বসে।
উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরি করেন। সেই আম বাগানের মধ্যে এক একর জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে সাথী ফসল হিসেবে বিদেশী ফল ও বিদেশী সবজি চাষের উদ্যোগ নেন। শখের বসে চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন বা সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করেন।
বর্তমানে জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন (সউদী আরবের সাম্মাম ফল) চাইনিজ হলুদ তরমুজ, সাদা ও কালো স্কোয়াস, লাল, সবুজ, হলুদসহ বিভিন্ন রঙ্গের ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। তবে বাগানে সবজির চেয়ে বিদেশী ফল রক মেলন (সাম্মাম) অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ফল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। স্বাদ-ঘ্রানেও ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যালেনিয়াম। এই ফল মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলের ওজন এক থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়। ইতোমধ্যে বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি এই ফল বাজারজাত করবেন বলেও আশা করছেন।
নওগাঁর উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, বাঙ্গিজাতীয় এ বিদেশী ফলকে রক মেলন (সাম্মাম) বলা হয়। সউদী আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এই ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মাহফুজ জানান, বরেন্দ্র ভূমিতে বিদেশী ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটি বছরে তিন বার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোন কৃষক বিদেশী এই ফল ও সবজি চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতই হয়। আর চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় চাষের জন্য আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
সোয়েব আহমেদ ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১১ এএম says : 0
বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’-এর চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানতে চাই।
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১২ এএম says : 0
শিবলী ভাইয়ের নাম্বারটা দেওয়া যাবে....
Total Reply(0)
রফিকুল ইসলাম ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১২ এএম says : 0
ভালো খবর। আমিও এটা চাষ করতে চাই।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১২ এএম says : 0
অত্যন্ত উপকারী ফল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন