শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এলো স্বস্তির মেঘ-বৃষ্টি

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

“আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে...”। অবশেষে ঘনঘোর মেঘমালা, বিজলী চমকানি আর বর্জের গর্জনে স্বস্তির বৃষ্টি এলো। গতকাল ভোর থেকে ক্রমেই কালমেঘে আকাশ ছেয়ে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের বেশিরভাগ জেলায়। এরপর মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি নামে। মাহে রমজানে প্রত্যাশিত রহমতের বৃষ্টিতে খানিকটা সিক্ত হয় মাটি, ফল-ফসলের জমি। টানা পাঁচ মাসের অনাবৃষ্টি-খরতাপে রুক্ষ-খটখটে, আধপোড়া শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে বিশেষ করে করোনাকালে জনজীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তি ও প্রশান্তি।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড সিলেটে ৩৬ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ২৪, মাদারীপুরে ৩, নিকলিতে ৩৫, ময়মনসিংহে ১৪, নেত্রকোণায় ২৯, রাঙ্গামাটিতে ৩২, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে ৩, নোয়াখালীতে ৬, কক্সবাজারে ২৩, শ্রীমঙ্গলে ২৪, রংপুরে ৩০, দিনাজপুরে ১৫, সৈয়দপুর ও ডিমলায় ২৮, তেঁতুলিয়ায় ১৪, রাজারহাটে ১৮ এবং বরিশাল বিভাগে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে শুধুই রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে তেমন বৃষ্টি ঝরেনি।

গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে আসে রাজশাহীতে ৩৫.৯ ডিগ্রিতে। সেখানে ৩ দিনের ব্যবধানে পারদ নেমেছে ৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় পারদ নামে সর্বোচ্চ ৩৩ এবং সর্বনিম্ন ১৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল বিভিন্ন স্থানে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। চট্টগ্রামসহ কোথাও কোথাও কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হয়। কঠোর লকডাউনে প্রায় ফাঁকা সুনসান নীরব সড়ক রাস্তাঘাট। সকালে হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বর্ষণের সময় বাড়িঘরের বাইরে গিয়ে একটু শীতল পরশ পেতে অনেককে গা ভিজাতে দেখা গেছে। বৃষ্টিপাতের সুবাদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ধুলোবালি ও ধোঁয়ার দূষণ অনেকটা কমেছে।

চট্টগ্রামে গতকাল সকালে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টির সাথে মৃদু কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গাছ ও ডালপালা ভেঙে উপড়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও সড়কের উপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে।

হালদায় মা-মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি : এশিয়ায় মিঠাপানির রুই কাতলা মৃগেল (কার্প) জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ও ‘মাছের ব্যাংক’ খ্যাত হালদা নদীতে মা-মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে মা-মাছেরা ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে। সাধারণত এই মৌসুমে বজ্রবৃষ্টির সময়ে এবং উজান থেকে আসা ঘোলা পানির স্রোতে রুই কাতলা মা মাছেরা ভেসে ওঠে, দলে দলে ডিম ছাড়ে। অভিজ্ঞ জেলেরা বিশেষ পদ্ধতিতে নৌকার সাহায্যে সেই ডিম সংগ্রহ করে। পরে ডিম থেকে রেণু ও পোনা ফোটানো হয় তাপমাত্রা ও পানি নিয়ন্ত্রিত পুকুর ও কুয়ায়। জেলেরা এখন হালদার উভয় তীরে প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন। হালদার রেণু পোনা দ্রæত বর্ধনশীল। প্রাচীনকাল থেকেই সারাদেশে এর চাহিদা ব্যাপক।
পাউবোর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস : গতকাল পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, বাাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও বরাক অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানির সমতল দ্রæত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে।

আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সবক’টি বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ বিরাজ করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন