শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাওলানা মামুনুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

রোজা, নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগ চেয়েছেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী শুনানি শেষে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। গত রোববার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে প্রথমে তাকে মোহাম্মদপুর থানা ও পরে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। গত কয়েকদিনে মামুনুল হক ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মাওলানা মামুনুল হককে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তাকে আদালতে নেয়া হয়। পরে তাকে আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়েছে। এজন্য আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে আদালত পুরো এলাকায় ছিল পুলিশ। বিশেষ কোনও প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে কোর্ট এলাকায় যেতে দেয়া হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক।

রিমান্ড আবেদনে এসআই সাজেদুল বলেন, ২০২০ সালের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাত মসজিদ এলাকায় সাত গম্বুজ মসজিদে আমল করাকালীন আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র আসামি ওমর ও ওসমান এসে মামলার বাদী জিএম আলমগীর শাহীনসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের আমল করতে নিষেধ করে, তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে ও মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আসামি ওমর, ওসমান, শহিদ, আনিস, জহির মসজিদের ভেতরে এসে বাদীর সঙ্গে থাকা অন্যদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। বাদী তাদের রক্ষা করতে গেলে, আসামি জহির তাকে মারধর করে। এরপর আসামি মামুনুল হক ও তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে মাদরাসার ৭০-৮০ জন ছাত্র বাদীকে মারধর করে। এতে বাদী গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি স্যামসাং এ-৫০ মোবাইল, সাত হাজার টাকা ও ২০০ ডলার টাকা নিয়ে যায় আসামিরা।

রিমান্ড শুনানিতে বিচারক মামুনুলকে বলেন, আপনার কি কিছু বলার আছে? উত্তরে মামুনুল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি প্রতি রমজান মাসে ছয় বার কোরআন শরীফ খতম দেই। রমজান মাস পবিত্র মাস। এই মাসে আমি যেন রোজা, নামাজ ও কোরআন পড়তে পারি তার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আবেদন করছি।

মামুনুলের রিমান্ড শুনানি নিয়ে আইনজীবীরা যা বললেন
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান, হেমায়েত উদ্দিন খানসহ কয়েকজন সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
শুনানিতে তারা বলেন, গত বছরের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদে আমল করাকালীন সময়ে মামুনুল হক এবং তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে এ মামলার বাদী জি এম আলমগীর শাহিনসহ অন্যদের আমলে বাধা দেন। বাদীসহ অন্যদের মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। বাদীর পকেট থেকে মোবাইল, টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামুনুল হক এবং তার ভাইসহ অন্যান্যরা জড়িত। তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এ অবস্থায় পুলিশ মামুনুল হকের ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আমরা বলেছি, যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে, বাদীকে মারধর করাসহ টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আরও কারা কারা সম্পৃক্ত আছে, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারসহ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। এজন্য তার সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আসামিরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আমি মসজিদে ঢুকতে পারবো না, এটা তো হতে পারে না। ঘটনার সাথে মামুনুল হকসহ আরও অনেকে জড়িত। মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে আছে। গত বছরের ৬ মার্চ মামলা দায়ের করা হয়। মামুনুল হক পলাতক ছিলেন। তিনি আদালতে হাজির হননি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল না তার। আজ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

আসামির পক্ষে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল, তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। কারণ এ মামলায় কোনো এক ব্যক্তিকে নাকি মামুনুল হকের নির্দেশে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, মামুনুল হক কি নির্দেশ দিয়েছেন, কখন নির্দেশ দিয়েছেন সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য রিমান্ড আবেদনে নেই। গত এক বছর আগের মামলা। মামুনুল হক বাংলাদেশের সর্বত্র বিরাজমান, দেখা গেছে তাকে। এক বছর আগে তাকে গ্রেফতার করেননি কেন? রোববার গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসাবাদের কোনো রিপোর্ট সেখানে ছিলো না। আসলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, মামুনুল হককে জব্দ করতে সুপরিকল্পিতভাবে মামলাটা করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সাত দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে। মামুনুল হককে যে রিমান্ড দেয়া হয়েছে তা অযৌক্তিক, একতরফাভাবে তাকে রিমান্ড দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Abdullah ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
সূরা ফাতির (فاطر), আয়াত: ৩৭ وَہُمۡ یَصۡطَرِخُوۡنَ فِیۡہَا ۚ  رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَالِحًا غَیۡرَ الَّذِیۡ کُنَّا نَعۡمَلُ ؕ  اَوَلَمۡ نُعَمِّرۡکُمۡ مَّا یَتَذَکَّرُ فِیۡہِ مَنۡ تَذَکَّرَ وَجَآءَکُمُ النَّذِیۡرُ ؕ  فَذُوۡقُوۡا فَمَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ نَّصِیۡرٍ ٪ সেখানে তারা আর্ত চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, বের করুন আমাদেরকে, আমরা সৎকাজ করব, পূর্বে যা করতাম, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।
Total Reply(0)
Abdullah ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
সূরা আল-হাদীদ (الحديد), আয়াত: ২০ اِعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا لَعِبٌ وَّلَہۡوٌ وَّزِیۡنَۃٌ وَّتَفَاخُرٌۢ بَیۡنَکُمۡ وَتَکَاثُرٌ فِی الۡاَمۡوَالِ وَالۡاَوۡلَادِ ؕ کَمَثَلِ غَیۡثٍ اَعۡجَبَ الۡکُفَّارَ نَبَاتُہٗ ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَکُوۡنُ حُطَامًا ؕ وَفِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ۙ وَّمَغۡفِرَۃٌ مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانٌ ؕ وَمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ অর্থঃ তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
আল্লাহর আদালতে একদিন সবাইকে দাড়াতে হবেই, প্রতিটা কাজের জাররা পরিমানের হিসাব দিতে হবে।
Total Reply(0)
Mannan ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
হুজুর লাইভে এসে বলেছিলেন, আমি যদি মিথ্যা বলি আমার উপর যেন আল্লাহর গজব পড়ে!
Total Reply(0)
মাহমুদুল হাসান মিশু ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
রাত যত গভীর জেনো সকাল কাছা কাছি জালিমেরা করুক জুলুম খেলুক কানা মাছি।
Total Reply(0)
Md Nasir Uddin ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
এদেশে আলেম ওলামারা মামলাখায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারনে আর শয়তানগুলো অট্টহাসিতে মজা নেয়,শয়তানদের টার্গেট কিন্তু ইসলাম,এটা বুঝতে হবে সাধারণ মুসলমানদেরকে।
Total Reply(0)
Shahin Ahmed ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
হে নেতা হে বীর আল্লামা মামুনুল হক মনোবল হারাবেন না কোরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণকারি কোনদিন হার মানেনা নাস্তিকের কাছে বিপদ তো আসবেই সত্য পথের যাত্রীর উপর হে বীর আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন
Total Reply(0)
Mahmudullah Sinha ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
যারা পবিত্র কালিমা টা শুদ্ধ করে বলতে পারবে না তারা আবার একজন বিশিষ্ট আলেমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ করে বিষয়টা খুব হাস্যকর। তোমাদের জন্য লজ্জা,,, অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ,,
Total Reply(0)
MD Tarikul Islam ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
আহ কি সুন্দর বিচার! রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় রিমান্ড না চাইতেই মঞ্জর হয়ে গেল!.. একদিন প্রতিটা অন্যায়ের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ ।
Total Reply(0)
salman ২০ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৪০ এএম says : 0
Allah apna k Hefazat korun, ............. Dhongsho hok...ameen
Total Reply(0)
Md. Altaf Hossain ২০ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৪৪ পিএম says : 0
আলেম ওলামারা নবীর উত্তরসুরী । পবিত্র রমজান মাসে আলেমদের সাথে আবুজেহেলের মত আচরন করছে । আল্লাহ কোন ভাবে ছাড় দিবেন না। শুধু সময়ের ব্যাপার। আল্লাহ আপনি আলেমদের হেফাজত করুন।আর আলেমরা যদি কোন অন্যায় করেন সে বিচার তো আপনি নিজে করবেন । তাও আম মানুষের মধ্যে না । তাও সেস্পেশাল ভাবে সেখানে কোন সাধারন মানুষ থাকবেনা। আপনি আলেমদের সহায় হউন আর জালেমদের বিচার করুন। কঠিন বিচার করুন। যেন নাস্তিক রা শিক্ষা পায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন