শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

নেয়ামতের শুকরিয়া

মিযানুর রহমান জামীল | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

ইসলাম দিয়েছে উন্নত জীবন-ব্যবস্থার গ্যারান্টি। দিয়েছে সফলতা ও অগ্রগতির সবক। ইসলামের সাথে মিশে আছে আমাদের জীবনধ্যায়। তাই বিপদ-আপদ আর মুসীবত দূরীকরনে যেমনি ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে তেমনি রয়েছে ধৈর্যধারণ ও আমলের কথা। নিম্নে তার কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো- সর্বদা নিজের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট থেকে শুকরিয়া আদায় করবেন। নিজের জীবন যাপন প্রণালী, জীবনের প্রয়োজনাদি এবং পরিবার-পরিজন ও পরিবেশ-প্রতিবেশীর প্রতি সদা নজর দিবেন আর ভাববেন, বর্তমান অবস্থা যাই হোক সবচেয়ে বড় নেয়ামত তো এই পেয়েছি যে, নিরাপদ ঈমান ও দীন ইসলামের ওপর আছি। এ মহা-দৌলত না চাইতে আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করেছেন।

আপন অস্তিত্বের নেয়ামতের প্রতি লক্ষ্য করবেন। আপন পরিবেশে শান্তির দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিবেন। খেয়াল করবেন নিজ পরিবারের সুদিনগুলো। মনে করবেন অন্যদের সঙ্গে আপনার সুসম্পর্কের কথা। তারপর হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহপ্রদত্ত এসব নেয়ামতের শোকর আদায় করবেন। এছাড়া আপনি যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখবেন- আল্লাহর লাখো মাখলুক আছে যারা আপনাকে প্রদত্ত এসব নেয়ামত থেকেও বঞ্চিত। সুতরাং বর্তমান অবস্থাকেও খোদার বিশেষ অনুগ্রহ ও দান মনে করে শোকর আদায় করবেন। এভাবে প্রতিটি নেয়ামতের প্রতি আলাদাভাবে নজর বুলাতে থাকবেন। এটি অশান্তির মুহূর্তগুলোয় শান্তি লাভের একটি সুন্দর কৌশল।

পরামর্শগুলো মেনে চললে আশা করি শান্তি আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- যে কেউ তাঁর নেয়ামতের শোকর আদায় করবে তিনি তার নেয়ামত অবশ্যই বৃদ্ধি করে দেবেন। দান করবেন বরকত ও সমৃদ্ধি।
নিজের অপরাধ, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গোনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করবেন। আল্লাহ পাক ওয়াদা করেছেন, যে বান্দা আপন কৃতকর্মের ওপর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করবে তাকে ক্ষমা ও মাফ করা হবে। ইস্তিগফার এক বড় নেয়ামত বড় এক অবলম্বন। দয়াময় খোদা অনুতপ্ত গোনাহগার বান্দাকে খুবই পছন্দ করেন। তাদেরকে আপন ক্ষমা ও দয়ায় সিক্ত করেন। তাই আল্লাহর দরবারে কৃত অপরাধ ও গোনাহ স্বীকার করতে থাকবেন। তওবা-ইস্তিগফার করতে পারা সৌভাগ্যপূর্ণ মৃত্যুর অন্যতম নির্দশন।

সম্প্রতি ফিতনা-ফ্যাসাদ এতোই বেড়ে চলেছে, জীবনের প্রতিটি শাখায় বদদীনী ও ধ্বংসের উপায়-উপকরণ এতোই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে তা অনুমান করা কঠিন। এমন অজস্র ফিতনা প্রকাশ পাচ্ছে যা সরাসরি ইসলাম-বিরুদ্ধ হওয়া ছাড়াও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে। মানুষের লেনদেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। স্বার্থপরতা ও অপরের অনিষ্ট সাধনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন সমাজে জেঁকে বসছে পাশ্চাত্য সভ্যতার অভিশাপ। জীবন যাপন পদ্ধতি, পানাহার, লেবাস-পোশাকসহ সবই হয়ে পড়ছে প্রদর্শনপ্রিয়তা এবং লৌকিকতা নির্ভর ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ক্ষতিকর। নিত্য নতুন জটিল থেকে জটিলতর রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য, বাতাস ও প্রকৃতি দূষিত হয়ে পড়ছে। নতুন নতুন ইঞ্জেকশন ও ভ্যাকসিনের দ্বারা রোগ আরো জটিল হচ্ছে এবং ওয়াদা খেলাপিসহ নানা চরিত্র বিধ্বংসী অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো, বদদীনের ফেতনা।

তরুণ প্রজন্ম ইসলাম থেকে ক্রমশ শুধু বেপরোয়াই হচ্ছে না বরং নিজেদের অজ্ঞতা এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় বেহুঁশ হয়ে দীনের দুশমনে পরিণত হচ্ছে। পবিত্রতা শুধু হারিয়েই যাচ্ছে না এর গুরুত্বই উঠে যাচ্ছে মানুষের মন-মানসিকতা থেকে। আল্লাহ-রাসূলের বাণী সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না রাখার ফলে ইসলামকে বাতিল ও আমল-অনুশীলনের অযোগ্য ভাবতে শুরু করেছে। মডার্ন কালচারের চরিত্র বিনাশী সব কিছুকে স্বাগতম জানানো হচ্ছে। বেহায়া-বেলেল্লাপনা, বেপর্দা-অশ্লীলতা, নৃত্যগীত এবং উলঙ্গ-কুরুচিপূর্ণ ছবি ও চিত্রের ব্যবহার নির্দোষ ও সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সামান্য ইংরেজি জানা, পশ্চিমা সভ্যতার খানিক ছোঁয়া পাওয়া নবীন ব্যক্তিও ধর্মের সংস্কারে, দীনের ব্যাপারে অমূলক সংশয়-প্রশ্ন উত্থাপনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ফল এই দাঁড়াচ্ছে ইসলামের মূল চেতনা থেকে বিচ্যুত এক ধর্মহীন জীবনের ঢেউ প্রতিদিন আরো কঠিন হয়ে সমাজের শিরা-উপশিরায় আঁছড়ে পড়ছে।

কী এর প্রতিকার? এ থেকে বাঁচার কী উপায়? হ্যাঁ। কর্তব্য হলোÑ যত বেশি সম্ভব গভীর মনোযোগের সঙ্গে ধর্মীয় কিতাবাদি অধ্যয়ন করবেন, বিশেষতঃ আকীদার বিশুদ্ধতা যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল সেসব বিষয় ভালো করে জানবেন। অতঃপর মুয়ামালা, ইবাদত, ইসলামী মুয়াশারা ও আখলাকসংক্রান্ত বিষয়াবলী বিশুদ্ধরূপে হৃদয়ঙ্গম করবেন। এতোদ্দেশে সাইয়েদ সুলায়মান নদভী রহ. কৃত ‘সীরাতুল নবী’ ও ‘খুতবাতে মাদরাজ’ অবশ্য পাঠ্য। এতে নবী করীম সা.- এর নবুওয়াতের মান ও তাবলীগের শান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা হবে। এ যুগে দীন ইসলামের সহীহ ইলমের জন্য হযরত থানভীর রহ. প্রকাশিত ‘মাওয়ায়েজ’ পাঠও অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও রোজ সকাল-বিকাল নামাযের পর প্রত্যেক জাহেরী ও বাতেনী এবং আসমানী-জমিনী ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবেন নিজের জন্য, আত্মীয়-স্বজন ও সকল মুসলমানের জন্য। ইনশাআল্লাহ যাবতীয় ফিতনা ও বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকবেন।

উল্লিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে চাইলে করণীয় হলো, বারবার এসব পড়ে দেখবেন। যেগুলোর আমল শুরু করা হয়নি সেসব চিহ্নিত করবেন এবং আমল করার জন্য সযত্ন প্রয়াস শুরু করবেন। কোন কিছু বারংবার পড়লে, পুনরাবৃত্তি করতে থাকলে দেখা যায় সময় মত বিষয়টি স্মরণে আসে। তখন শুধু দরকার সাহস করে আমল শুরু করা। কিছুদিন এমন করলেই দেখবেন আমলের জন্য ভেতর থেকেই তাকিদ বোধ করছেন।
আবার জ্ঞানের দাবীও এই যে, কোন বিষয় বা কোন বিদ্যায় পারদর্শী হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ মুরুব্বি অত্যাবশ্যক। কাক্সিক্ষত মানে শিক্ষা হাসিলে তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খুব কাজে আসে। মুরুব্বির তত্ত¡াবধানে অর্জিত জ্ঞান বা বিদ্যা সর্বদা নির্ভরযোগ্য, ত্রুটিহীন ও ক্ষতিমুক্ত হয়ে থাকে। তাই দুনিয়া ও আখেরাতের সহীহ ইলম হাসিলের জন্যও জরুরি, কোন আল্লাহওয়ালার সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কায়েম করা।

আল্লাহওয়ালার নিদর্শন, তিনি প্রকাশ্যে শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসারী, জাহেরী ও বাতেনী ইলমের অধিকারী এবং ন্যায়পরায়ন ও পরহিতৈষী হবেন। আর তার সাথে সম্পর্ক রাখার অর্থ- তার সান্নিধ্যে বারবার যাবেন। দূরে থাকলে পত্র যোগাযোগ রাখবেন। তাকে দীনের কথা জিজ্ঞেস করবেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। নিজের আভ্যন্তরীণ দোষ-ত্রুটিসমূহ তাকে জানাবেন এবং সেসব দূর করতে তার নির্দেশনা মেনে চলবেন। আর সবসময় তাকে দিয়ে দুআ করিয়ে নিবেন। দৈনন্দিন জীবনে শরীয়তের খেলাফ কিছু হলেই তাকে জিজ্ঞেস করবেন। তিনি যা-ই বলেন নিষ্ঠার সাথে সে অনুযায়ী আমল করবেন। ইনশাআল্লাহ বিপদ-আপদ এবং হতাশা বা পেরেশানী থেকে মুক্তি পাবেন।
লেখক : সম্পাদক কলমসৈনিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন