শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

যাকাত : সম্পদ পবিত্র করার হাতিয়ার

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। এ গুলোর মধ্যে ‘যাকাত’ অন্যতম ভিত্তি। এ সর্ম্পকে আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেন অর্থ্যাৎ ‘এবং তোমরা আল্লাাহ তা’লার সন্তুষ্টির জন্য যাকাত আদায় করো। অত:পর তিনি তা দ্বীগুন করে দেবেন। (সুরা: আর-রুম,আয়াত:৩৯)
যাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাক যাকাত দেয়া ফরয করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ঠ সম্পদকে নির্দোষ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরীফ)।
যাকাত কাকে বলে: যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছনতা। যাকাত যেহেতু অর্থসম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপনতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর দাবী-দাওয়া পূরণে উৎসাহ যোগায় এজন্য ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভে নামকরণ হয় যাকাত। শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমান সম্পদ মুসলমান গরীবকে আল্লাহর ওয়াস্থে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে।
ধনি সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মনে করেন যে যাকাতের দ্বারা সম্পদ কমে যায় তা নিছক ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন যে,‘যাকাত আদায়ের ফলে তিনি বান্দার সম্পদ দ্বিগুন করে দিবেন’।
যাকাত অস্বীকারকারীর হুকুম: যাকাত ইসলামের অন্যতম খুঁটি। ক্বোরআন-হাদিসে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বারবার তাগিদ করা হয়েছে। ক্বোরআন-হাদিসের অকাট্য প্রমানাদি দ্বারা যাকাতের বিধান প্রনোদিত হয়েছে। তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ কারো নেই। যাকাত অস্বীকারকারীকে শরিয়ত কাফির বলে আখ্যা দিয়েছে। কেননা ফরযের বিধান অস্বীকার করা কুফুরির অর্ন্তভুক্ত।
যে তা আদায় না করবে সে ফাসিক এবং ক্বাতল হওয়ার যোগ্য। আর যে আদায় করতে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার তার সাক্ষি গ্রহণযোগ্য নয়। (আলমগীরি: তরিকুল ইসলাম বাংলা ২য় খন্ড,পৃ.২৬৫)
যাকাতের হিসাব যে মাস থেকে: যাকাত আরবি (চন্দ্র মাসের) হিসাবানুযায়ী আদায় করতে হবে। বছরের যে কোন মাসে যাকাত আদায় করলে হয়। তবে আদায় করার সময় নিয়ত করা শর্ত।
যাকাত যেভাবে আদায় করবে: পাঠকগনের সুবিদার জন্য সরল-সরল ও সাবলিল ভাষায় যাকাতের হিসাব দশ টাকা থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাকাত কত টাকা আসবে। নিম্নে টাকা-পয়সার হিসাব বিস্তারিত প্রদত্ত করা হল। এ দিকে লক্ষ্য রেখে আদায় করলে কোন অসুবিদা হবেনা বলে আমি আশাবাদী।
আনুগ্রহ করে আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের আশা নিয়ে দোযখের আযাবের ভয় অন্তরে রেখে সময়মত যাকাত আদায় করুন।
যাকাতের হিসাব নিম্নরূপ: একলক্ষ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। পঞ্চাশ হাজার টাকায় বার’শ পঞ্চাশ টাকা। দশ হাজার টাকায় আড়াইশ টাকা। এক হাজার টাকায় পঁচিশ টাকা। নয়শত টাকায় বাইশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। আটশত টাকায় বিশ টাকা। সাতশত টাকায় সতের টাকা পঞ্চাশ পয়সা।
বি.দ্র: উপরোক্ত যাকাতের হিসাবানুযায়ী আপনার নিকট যত লক্ষ টাকা, যত হাজার টাকা, যত শত টাকা বা যত টাকা-পয়সা থাকবে আপনি এর যাকাত বের করতে হিমশিম খেতে হবেনা।
মুসলমান ভাই-বোনেরা! কৃপনতা করবেন না। সম্পদ আপনার একা নয়। কৃপন ব্যাক্তি আল্লাহ তা’লার শত্রু। দানশীল ব্যাক্তি আল্লাহর প্রিয়পাত্র।
ব্যবসায়ী মালের যাকাতের মাসআলা: ব্যবসার মাল যদি নেসাব পরিমাণ হয় অর্থ্যাৎ সাড়ে সাত তোলা সোনা ও বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ হয় তবে সে মালের উপর যাকাত ফরয। শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাত সংক্রান্ত মাসআলা: সোনা হোক বা রূপা, সবধরনের ব্যবসায়ী মালে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যই গ্রহণযোগ্য ক্রয় মূল্য নয়। যেমন কারো নিকট যাকাতের যা মাল বর্তমানে আছে তার ক্রয় মূল্য ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিক্রয় মূল্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। উক্ত মালের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার উপরই যাকাত ওয়াজিব।
যাকাত প্রদানের স্থান সমূহ: মিসকিনকে যাকাত প্রদান করতে হবে। মিসকিন ফকির বলতে সেসব মুসরিম নর-নারী বুঝায় যাদের নিকট জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি যেমন: অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা নেই অথবা আছে তবে তা প্রয়োজন মেটাবার নয়।
ঋণগ্রস্থ মানুষ যার নিকট ঋণ পরিশোধ করার উপায় নেই। সেসব নিস্বঃ নওমুসলিম যাদের মন জয় করা মুসলমানদের দরকার। আল্লাহর পথের মুজাহিদগন যারা দুস্থ এবং নিঃস্ব হওয়ার কারনে জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত। অথবা সেসব হাজীগন যাদের টাকা-পয়সা ও পাথেয় শেষ হওয়ার কারনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে অপারগ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন