শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

রোজাদারদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

যাঁরা রোজাদার, তাদের খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে বেশ পরিবর্তন আসে দীর্ঘ ১১ মাস পরে। ধর্মপ্রাণ মানুষ চেষ্টা করেন সবগুলো রোজা রাখতে, অসুস্থ ব্যক্তিও রোজা রাখতে উৎসাহী থাকেন। কিন্তু বোঝেন না যে, রোজা রাখা ঠিক হবে কি না। অ্যাসিডিটি, পেপটিক আলসার, নিয়মিত ঔষধ খাওয়া, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস-সব মিলিয়ে দ্বিধা থাকেই। তাই সুস্থভাবে রোজা পালনের জন্য দরকার দৃঢ় সংকল্প এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা। এই মাসে সেহরি এবং ইফতার খুবই জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে আমরা সচেতন নই। সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

সেহরিতে খাদ্যাভ্যাস- স্বাভাবিকভাবে যে-কোনো খাবার সেহরিতে খেতে পারেন। খেয়াল রাখুন, খাবার যেন সহজপাচ্য আর স্বাস্থ্যসম্মত হয়। রোজায় দীর্ঘক্ষণ উপবাস করতে হয় বলে সেহরিতে ভারী কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত। এটি ধীরে ধীরে হজম হয়, হজমে প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগে। ফলে দিনের বেলায় ক্ষুধা একটু কম অনুভূত হয়।

ভারী শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজ জাতীয় খাবার, নন-রিফাইনড আটা, ময়দা এবং ঢেকিছাঁটা চাল। সেহরিতে অবশ্যই সাদা ভাত রাখবেন। ভাতের সঙ্গে রাখুন উচ্চ প্রেটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- মাছ, মাংস ও ডিম। খরচের বিষয়টি ভাবলে ডিম আর চাল। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। আর সেহরির খাবার তালিকায় যে-কোনো একটি সবজি রাখুন। পাকস্থলীকে অশান্ত করে, অস্বস্তি দেয় এমন কোনো খাবার সেহরিতে রাখবেন না।

ইফতারে কী খাবেন- ইফতারে লেবুর শরবত শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সঙ্গে রাখতে পারেন ফলের রসও। আবার মওশুমের তাজা কোনো ফলও রাখতে পারেন। ফলে থাকা ভিটামিন আর খনিজ আপনার স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।

ইফতারে চিরাচরিত বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন। দই, চিড়া ও কলাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তেলে ভাজা কোনো খাবার এ সময় একেবারে না-খাওয়াই ভালো।

পরিশোধিত শর্করা তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়, এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। তাই এ-ধরনের খাবার ইফতারে রাখার চেষ্ট করবেন। এগুলো খাবার হজমে কম সময় নেয়। দ্রুত হজম করা খাবারের মধ্যে রয়েছে রিফাইনড ময়দা আর চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার।

খেজুর খাবেন ইফতারে। এতে ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকে তাই ইফতারে দু-তিনটা খেজুর শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে নিতে পারে। মিষ্টদ্রব্য হিসাবে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন জিলাপি। সারাদিন রোজা শেষে জিলাপি সুগার লেভেল দ্রুত বাড়িয়ে দেবে। আর ইফতারে প্রচুর পানি পান করুন।

সরাদিন না-খেয়ে থাকলে ঝাল খাবার খেতে ইচ্ছে করে। তখন বাড়িতে বসেই সবজি আর ডিম দিয়ে নুজলস, পাস্তা বানিয়ে ফেলুন যা সারাদিনের খনিজ ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করবে। পাতলা খিচুড়িও রাখতে পারেন। রোজায় স্বাস্থ্য সচেতনতা খুব জরুরি। এসময় প্রচুর পানি পান করুন। সেহরি খাওয়ার পর যেন ৩-৪ গ্লাস পানি খেতে পারবেন এমন সময় হাতে রেখে খাবার খান। আর ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হবে না, খাবার দ্রুত হজম হবে। ইফতারে তেল-চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন। তেলেভাজা খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তা ছাড়া খাবারগুলো পুরোনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বাড়ে। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যা থেকে হতে পারে ক্যানসার। তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের স্যালাড বানিয়ে নিন। শসা খেতে পারেন, হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

সেহরির পর অনেকেই চা বা কফি খেয়ে ফেলেন। চা অনেক উপকারী সেটা ঠিক কথা। কিন্তু এতে থাকা ক্যাফেইন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্যাফেইন প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে খনিজ লবণ ও পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি রোজাদারের জন্য খারাপ।

সেহরির পর পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কার্বোহাইডেটসমৃদ্ধ কলা খেতে পারেন।
পরিমিত ঘুম এসময় হজমে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে। কমপক্ষে ৬ ঘন্টা টানা ঘুম প্রয়োজন। এজন্য চেষ্টা করবেন যাতে তারাবির নামাজের পর দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে পারেন। অনেকেই রাতে না-ঘুমিয়ে একেবারে সেহরির পরে ঘুমাতে যান, যা একদমই উচিত নয়। রোজার সময় অধিক ঘুম খুবই ক্ষতিকর। এতে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বদহজম হতে পারে।

সাধারণ অসুখ-বিসুখেও সাবধান থাকবেন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা জেনে নিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ মেপে দেখা প্রয়োজন যাতে কম বা বেশি কোনোটাই না-হয়। প্রয়োজনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণের ঔষধ খেয়ে নিন। ইনসুলিন নিলে ইফতারের সময়ে খাবারটা সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন