পবিত্র মাহে রমযানে মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা মসজিদুল আকসায় ও ফিলিস্তিনী জনবসতিতে নিরীহ মুসল্লী ও মুসলমানদের উপর ইহুদীবাদি ইসরাইলী সেনাদের সন্ত্রাসী হামলায় বহু হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি সন্ত্রাস ও নির্যাতন বন্ধ এবং দখলদারিত্ব অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আজ (১৩ মে) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল আকসাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল পুরো রমজান মাস জুড়েই সহিংসতার কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে রেখেছে। বিশেষত: রোববার সন্ধ্যা থেকে আল-আকসায় নামাযরত মুসল্লীদের উপর বর্বরোচিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইলী দখলদাররা।
তিনি বলেন, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে রোববার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরাইলী বাহিনীর নারকীয় তান্ডবে শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন তিনশ’র বেশি ফিলিস্তিনি। শহীদদের মধ্যে ১৪ শিশু ও ৩ জন নারীও রয়েছেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা চালিয়ে ইসরাইল সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং একইসাথে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। অথচ জাতিসংঘসহ ওআইসি, আরব দেশসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লোকদেখানো কিছু বুলি আওড়ানো ছাড়া ইসরাইলী সন্ত্রাস থেকে ফিলিস্তিনীদের রক্ষায় কার্যকর কিছুই করছে না। কার্যত: তারা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ ক্রমেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ আরো নিরঙ্কুশ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে প্রতিদিন নতুন নতুন ফিলিস্তিনী এলাকা দখলে নিচ্ছে ইসরাইল। তাদের নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত করে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন ইহুদি বসতি। ফিলিস্তিনিরা রক্ত ঝরিয়ে প্রতিবাদ করছেন বটে। কিন্তু সন্ত্রাসী কায়দায় সেই প্রতিবাদ দমন করছে ইসরাইল। যখন বেআইনিভাবে ইসরাইল এসব করছে, তখন তা রুখার কেউ নেই। ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো আওয়াজ বিশ্বপর্যায় থেকে নেই। এ অবস্থায় অসহায় ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
.
বিশ্বমোড়ল দেশসমূহের কঠোর সমালোচনা করে হেফাজত আমীর বলেন, মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের দ্বিমুখী নীতির কারণে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনীদের সকল অধিকার ভূলুণ্ঠিত ও তাদের খুন করে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। পশ্চিমা এসব মোড়লরা মানবাধিকারের ভুয়া অভিযোগ তুলে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও সুদানের মতো বহু মুসলিম দেশকে তছনছ করে দিয়েছে, অথচ ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে তারা প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় থেকে তারা কোনভাবেই মুক্ত নয়।
হেফাজত আমীর একই সাথে ওআইসি, আরব লীগ ও মুসলিম দেশসমূহের নতজানু নীতি ও পারস্পরিক অনৈক্যে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ওআইসি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ফিলিস্তিনীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও মসজিদুল আকসাকে দখলদার মুক্ত রাখার প্রত্যয় নিয়ে। ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলিদের লাগাতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ওআইসির ধারাবাহিক নীরবতা সংস্থাটির কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে নিয়ে যায়। আরব দেশসমূহের শাসকরাও উম্মাহ চেতনাবোধ থেকে বহু দূরে সরে পড়েছে। একইভাবে আরব জাতীয়তাবাদের চেতনাও তাদের মাঝে অনুপস্থিত। মুসলিম উম্মাহর উচিত, মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিনের আরব ভূমি মুক্ত করতে সোচ্চার জনমত তৈরি করা, যাতে নিজ নিজ দেশের শাসক মহল এ বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, গাজার আড়াই লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনির উপর অবরোধ চাপিয়ে দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম খোলা কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে নি:শর্তে তা তুলে নিতে হবে। পশ্চিম তীর এবং সমস্ত আরব ভূখণ্ডে অবৈধ দখল ও উপনিবেশ স্থাপনের অবসান করতে হবে। ইসরাইলের আভ্যন্তরে বসবাসরত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাগরিক ও মানবাধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ইউএন রেজুলেশনের ১৯৪ প্রস্তাব অনুসারে তাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তিগুলিতে ফিরে আসার অধিকারকে সম্মান, সুরক্ষা এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসরাইল কর্তৃক সংঘটিত সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত ও আন্তর্জাতিক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আল-আকসা মসজিদকে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য তিনি জাতিসঙ্ঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব মুসলিম ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর আহ্বান জানান।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন,আল আকসা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের পবিত্র স্থান এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা। তাই আল আকসা শুধু ফিলিস্তিনের বিষয় নয় বরং বিশ্ব মুসলিমের বিষয়।
আল্লামা বাবুনগরী চলমান ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবাদী অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ তৈরির আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি উলামায়ে কেরামকে সত্ত্বর মুক্তিদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন