কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীতে বালিয়াতলী পয়েন্টে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলছে সেতুর সৌন্দর্যবর্ধন ও নদীর দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ। বাইপাস সড়কে মাটির কাজ শেষ হয়েছে। ইট বিছানোর কাজ শেষ হলেই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে খেয়ার কারণে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হয়। সেতুটি চালু হলে বালীয়াতলী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, ধুলাসার, ডাবলুগঞ্জ পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাগব হবে এবং উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। উজ্জীবিত হবে অর্থনীতি, গ্রাম ও শহরের মধ্যে দূরত্বে কমে আসবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
দিনে এখান দিয়ে খেয়া নৌকায় পার হওয়া গেলেও রাতে পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তখন অনেক বেকায়দায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় রোগী নিয়ে। খোয়াখাটে দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে প্রতিদিন। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পাঁচটি ইউনিয়নের লোকজন ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা গঙ্গামতির পর্যটকদের। একটি খেয়া ছাড়লে আরেকটি খেয়ার জন্য আধা ঘণ্টা যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুটি উন্মুক্ত হলে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর ফুটপাথসহ নয় দশমিক আট মিটার প্রস্থ হচ্ছে সেতুটি। ৬৭৭ মিটার দীর্ঘ সেতুর রয়েছে দুই পাড়ে পাঁচশ’ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া রজপাড়া থেকে পায়রা বন্দরের সঙ্গে নির্মিত ফোর লেন সড়ক থেকে সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে বিকল্প সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কটির প্রস্থ থাকছে ৩৩ ফুট। পায়রা বন্দরগামী ফোর লেন হয়ে সংযোগ সড়ক গিয়ে মিলছে নজরুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে। ৩৩ ফুট প্রস্থ সংযোগ সড়কটি নির্মাণে কালভার্টসহ ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ সেতুর কলাপাড়ার ইটবাড়িয়া অংশে কলাপাড়া শহরের দিকে ৪০০ ফুট আরসিসি সড়ক করা হবে। এই সংযোগ সড়ক ঘেঁষে দুই দিকে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। থাকবে সড়কের স্লোপে ছাতা, বেঞ্চসহ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। সেতুর বালিয়াতলী অ্যাপ্রোচের নিচ দিয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড) থাকছে লালুয়া যাওয়ার সড়ক।
শুধু কুয়াকাটা নয় এই পথে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলসহ পর্যটনপল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিকল্প পথে গঙ্গামতি পর্যটন পল্লী হয়ে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ মিলবে। আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী পয়েন্টের শুধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পেরিয়ে কুয়াকাটায় যেতে পারবেন পর্যটক-দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষ। পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলসহ পর্যটন পল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন, কাপড়াভাঙ্গা ১৩৬ বছরের মঠ-মন্দির ও এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় বৌদ্ধমন্দির মিশ্রিপাড়া এবং আদিবাসী রাখাইনদের হাতে তাঁতে বোনা লুঙ্গি পর্যটকদের দেখতে সহজ হবে। গঙ্গামতির সৈকতজুড়ে রয়েছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। রয়েছে ঝাউবনসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কেওড়া, ছইলা, গেওয়া, বাইনসহ নানা প্রজাতির সারিসারি বৃক্ষ। সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটে শতশত পর্যটকের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকল্প পরিচালক মো. রুহুল আমিন জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। চলছে সেতুর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ ও নদীর দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ। সড়কের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন সড়কের ইট বিছানোর কাজ শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোয়ার-ভাটার সমস্যা এবং মহামারি করোনার কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন