মিজানুর রহমান তোতা
গ্রামবাংলায় হাঁস-মুরগী পালনের দৃশ্য অতি পরিচিত। প্রতিটি গ্রামের প্রায় বাড়িতেই হাস-মুরগী পালন হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন পোল্ট্রি শিল্পের প্রসার ঘটেছে ব্যাপক। শিল্পটির অফুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এগুতে পারছে না অন্তহীন সমস্যার কারণে। তাছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রমও জোরদার নয়। এই চিত্র যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। অথচ একটু নজর দিলেই পোল্ট্রি শিল্পে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এতে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত মজবুত হবে। পোল্ট্রি শিল্প বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে বিশাল জনগোষ্ঠীর আমিষের ঘাটতি পূরণ, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচনে। সূত্র মতে, শিল্পটিতে গতানুগতিক ধারার সাথে যুক্ত করা দরকার আধুনিক পরিকল্পনা। তাহলে বেকার যুবক, গরিব, অসহায়, দুস্থ ও বিধবা মহিলারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবেন খুব সহজেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে ১০ সহ¯্রাধিক ছোট বড় পোলট্রি শিল্পে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮ লাখ হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। আর ডিম উৎপাদনের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। পরামর্শ, ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সুবিধার উন্নয়ন করা হলে আরো উন্নয়ন ঘটতো। সূত্র জানায়, একটার পর একটা আঘাত মোকাবিলা করেও পোল্ট্রি শিল্প কোনরকমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গত কয়েক বছরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, জলোচ্ছ্বাস আইলা, তিন দফায় এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন রোগ ও নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। তাছাড়া তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই হাঁস-মুরগীর রোগ পরীক্ষা করার। বিরাট সম্ভাবনায় খাতটিতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা যথাযথ দায়িত্ব পালনে যতœবান নয় বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানালেন, মাত্র ৩২ থেকে ৩৫ দিনের ব্যবধানে ১টি ব্রয়লার খাওয়ার উপযোগী হয়। আর পালন করে ১ কেজি ৮শ’ গ্রাম ওজনের পোল্ট্রি পাওয়া যায়। যার দাম দাঁড়ায় কমপক্ষে দেড়শ’ টাকা। এত কম সময়ে লাভের মুখ দেখার খাত খুবই কম। তার মতে, যে কোন মাছ প্রতি কেজি গড়ে ৩শ’ টাকা। আর পোলট্রি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। বিরাট জনগোষ্ঠীর স্বল্পমূল্যে আমিষের চাহিদা পূরণ করছে পোলট্রি শিল্প। সরেজমিন একটি পোল্ট্রি খামারে গিয়ে দেখা গেছে ব্রয়লার পালনের দৃশ্য। খামারটি যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামে। শিক্ষিত যুবক মিজানুর রহমান পোল্ট্রি শিল্প গড়ে তুলে আর্থিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তিনি উজ্জ্বল সম্ভাবনার আশাবাদ ব্যক্ত করে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। বললেন, খাতটি খুবই লাভজনক। কিন্তু পোল্ট্রি ফিডের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং তাৎক্ষণিক রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা না থাকাসহ অন্তহীন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে শিল্পটি। সূত্র জানায়, সরকারী খামারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার হাঁস-মুরগী খামার। এ অঞ্চলে খামার রয়েছে মুরগী লেয়ার ৬ হাজার ৬৭০টি, ব্রয়লার ৩ হাজার ৪২৮টি, হাঁস খামার ২ হাজার ৯৩৫টি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে গ্রামে গ্রামে ছোট আকারে গড়ে উঠেছে ১০ সহস্রাধিক খামার। বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার অফিসটি যশোরে অবস্থিত। দপ্তরের গতিশীলতা সৃষ্টি ও পরীক্ষাগার স্থাপনসহ সমস্যাদির সমাধানে বাস্তব উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন শিল্পসংশ্লিষ্ট লোকজন। কিভাবে শিল্পটিকে এগিয়ে নেয়া যায় তার পরিকল্পনার জন্য সময় দেয়া হয় খুব কম বলে অভিযোগও রয়েছে। সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ৫৯টি উপজেলার ৭ হাজার ৮২০টি গ্রামের সবখানেই কমবেশী হাঁস-মুরগী পালন হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি, কারিগরী সহায়তা ও লাগসই প্রযুক্তি দেয়া দরকার খামারীদের। যদিও বেসরকারী খামার, হ্যাচারী ও গ্রামাঞ্চলের ব্যক্তিগত ছোট খামারগুলো হাঁস-মুরগী ও ডিম উৎপাদনে অনেকটাই সাফল্য আসছে। তবে পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য কারখানা গড়ে ওঠেনি এ অঞ্চলে। অনেক দৃষ্টান্ত আছে হাঁস-মুরগী পালন করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটানো ছাড়াও সংসার নির্বাহ করে থাকে বহু পরিবার। বিশেষ করে দুস্থ, অসহায় ও বিধবা কিংবা বৃদ্ধ মহিলাদের হাঁস-মুরগী পালন রীতিমতো বেঁচে থাকার অবলম্বন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও যোগাড় করে থাকেন অনেকে। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে ক্ষুদ্র ও মাঝারী পোল্ট্রি খামারের দিকে নজর দেয়া জরুরি বলে সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত। শিল্পটির উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের কায়িক পরিশ্রম করতে হয় না। খুব সহজেই যে কেউ ক্ষুদ্র পরিসরে পোল্ট্রি শিল্প গড়ে তুলতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন