সরকারি গোপন নথি চুরির অভিযোগে দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম আদালতে জামিন লাভ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। সাংবাদিক নেতাদের অনেককেই এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে দেখা যায়। যদিও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন লাভকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখেছেন কেউ কেউ।
রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া তথ্য-উপাত্তের (সিডির কপি) ওপর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বিচারক বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত রোববার জামিনের এই আদেশ দেন। পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে রোজিনা জামিন পান।
গেল সপ্তাহে সচিবালয়ে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্থা করার পর সাংবাদিক রোজিনাকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর পর থেকেই ফেসবুকে হট টপিকসে পরিণত হয় ঘটনাটি।
রোজিনা ইসলামের জামিন লাভের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক নেতা মশিউর রহমান খান অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সরকার পক্ষ থেকে আজ জামিনের বাঁধা দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা আবারও প্রমাণিত।এ বিজয় ডিআরইউর। অভিনন্দন সদস্যদের।’’
এনিয়ে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘পেশাগত প্রয়োজনে একজন সাংবাদিককে বিদেশে যেতে হয়। পাসপোর্ট কাছে না থাকলে পেশাগত দায়িত্ব পালন বিঘ্নিত হতে পারে।’’
সাংবাদিক মাঝহার মাহবুব লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন হয়েছে। তবে, শুধুমাত্র জামিন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মানে হলো, ইসরায়েলের হামলা বন্ধের পর ফিলিস্তিনের ক্ষণিকের বিজয় উদযাপন। এই জামিন ব্যক্তিগত সন্তুষ্ট। কিন্তু, দুর্নীতিবাজ সচিবকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে পেশাদারিত্বের সন্তুষ্ট অপ্রাপ্তিই থেকে যাবে!’’
রাশেদুল আলমের মন্তব্য, ‘‘সাংবাদিক রোজীনা ইসলামকে আটকের মাধ্যমে সরকার মুলত বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজকে একটা মেসেজ দিয়েছেন, যাতে পরবর্তীতে কেউ সরকারের দূর্নীতি আর লুটপাট নিয়ে লেখালেখির সাহস না করে।’’
রেজাউল ইসলাম মনে করেন, ‘‘এগুলি কিছূই নয়। এখনও যে গুটি কয়েক সাহসী সাংবাদিক সঠিক সংবাদ প্রচার করে চলেছেন, তাদের ভয় দেখানোর জন্যই আসলে উনার সাথে এরূপ আচরন করা হলো। এরপর অন্যদের মত্য আরো কিছু সাংবাদিক বিকিয়ে যাবে, আর বাকীরাও মেপে মেপে “সত্য প্রকাশ” করবে।’’
জামিনের প্রতিক্রিয়ায় রাফিউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিক রোজিনা শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্ত। যাক শেষরক্ষা হলো। তড়িঘড়ি করে ভুল আইনে মামলা দায়ের, রোজিনার উপরে শারিরিক মানসিক নিপীড়নের ভিডিওচিত্র প্রকাশ, সর্বোপরি রোজিনার বিপক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থতা, স্বাস্থ্যখাতের হযবরল অবস্থা, সাংবাদিক মহলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এবং আন্তর্জাতিক মহলের ঘটনার অবিহিতি ও চাপ সব মিলিযে রোজিনার জামিনের পক্ষে নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তু একটি বিষয় এখন সামনে চলে আসছে যে, এই জাতীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে অন্য কোন পেশার মানুষ কিংবা মিথ্যা / হয়রানীমুলক মামলার শিকার সাধারন মানুষের সেক্ষেত্রে কি দশা হবে।’’
রাসেদ মেহেদী লিখেছেন, ‘‘জামিন পাওয়ার খবরটা স্বস্তির হলেও, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে উদ্বেগ থেকেই গেল...।’’
সাংবাদিক নেতা মনির জারিফ দাবি জানিয়েছেন, ‘‘রোজিনার জামিন মঞ্জুর। যেসব কর্মকর্তা তাকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাই।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন