সবজির রাজধানী যশোরের উৎপাদক চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়ার খবর নেই। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদেরও বাড়তি মূল্যে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। চাষি ও ভোক্তাদের ঠকিয়ে পকেট ভারি করছে মধ্যস্ত¡ভোগীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে মোটেও নজর দিচ্ছে না । করোনার প্রখমদিকে সিন্ডিকেট দাপ কিছুটা কমলেও এখন আবার পুরাদমে দাপট শুরু হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরে দাপট কমানোর জোরদার ব্যবস্থা নেই।
যশোরের বারীনগরের সবজির পাইকারী বাজারটি শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে অবস্থিত। এক কেজি সবজি পরিবহন খরচ লাভসহ সর্বোচ্চ ৫ টাকা হলেও খুব বেশি হেরফের হওয়ার কথা নয়। মাঠে এক কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতিকেজিতে ২০ টাকা যাচ্ছে মধ্যস্ত্বভোগেীদের পকেটে। একইভাবে মাঠে বেগুন ২০ টাকা বাজারে ৪০ টাকা, বরবটি ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা, কচুরমুখী ২০ টাকার স্থলে ৪০ টাকা। সব সবজির ক্ষেত্রেই মাঠের মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, কোন কোন সময় এর চেয়েও বেশি ব্যবধান ঘটে থাকে।
সুত্র জানায়, হাট-বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ প্রচুর। পাইকারী বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন চাষিরা। কারণ উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। আবার ভোক্তারা কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারছেন না। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে বাজার ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও আধুনিক কলাকৌশল, উন্নত বীজ সরবরাহ এবং চাষিদের জ্ঞান ও দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। সবচেয়ে সমস্যা মাঠের মূল্য আর বাজার মূল্যের পার্থক্য। যার মূল দায়ী মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ এর বিরুদ্ধে সরকারের কৃষি ও বিপণন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ন্যুনতম কোন ভূমিকা রাখছেন না বলে অভিযোগ। মাঠমূল্য আর বাজার মূল্যের বিরাট এই হেরফের কেন হচ্ছে, চাষিরা কি মূল্য পাচ্ছে আর কোন মূল্যে ভোক্তারা ক্রয় করছে তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনো তদন্ত করে দেখা হয় না বলে অভিযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, এবারও যশোরে ৫০ হাজার হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়েছে। সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টির যশোরে উৎপাদক চাষিদের দুঃখ ‘আমরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করছি, আমরা উপযুক্ত মূল্য পাই না অথচ বসে বসে বিনা পুঁজির ব্যবসা করে মুনাফা লুটছে মুনাফালোভী মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাদের কারণেই উৎপাদক চাষি ও ভোক্তা উভয়েই ঠকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলে বছরের বারোমাসই সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর সবজি সরবরাহ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি অভ্যন্তরীণ রফতানি হয় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে। কোথাও সবজির কোনরূপ ঘাটতি নেই। তবুও মূল্য বাড়ছেই। সরেজমিনে গতকাল যশোরের সবজি ভান্ডার বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে চাষিরা একটি লাউ বিক্রি করছেন মাত্র ১০ টাকায়। সেই লাউ কয়েক হাত ঘুরে যশোরের বড় বাজারে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। শুধু লাউ নয়, বেগুন, কচুরমুখী, উচ্ছেসহ প্রায় প্রতিটি সবজির মূল্যে মাঠের সঙ্গে বাজারের মূল্যে দ্বিগুণ/ত্রিগুণ বেশিসহ এই বিরাট ব্যবধান থাকছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন